প্রতিরক্ষা প্রকল্পে বিলম্ব, উদ্বেগে চিফ এয়ার মার্শাল

ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (air-chief-marshal) অমর প্রীত সিং বৃহস্পতিবার সিআইআই বার্ষিক ব্যবসা সম্মেলন ২০২৫-এ দেওয়া ভাষণে প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলোতে বারবার বিলম্বের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবাস্তব সময়সীমার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং এর ফলে সামরিক প্রস্তুতির উপর নেতিবাচক প্রভাবের সমালোচনা করেন।

তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান সরবরাহ প্রকল্প (air-chief-marshal)

তাঁর এই মন্তব্য তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান সরবরাহের মতো প্রকল্পগুলোর চলমান চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে এসেছে, যা সময়মতো বাস্তবায়িত না হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে। এয়ার চিফ মার্শাল (air-chief-marshal) সিং বলেন, “সময়সীমা একটি বড় সমস্যা। আমার মনে পড়ে না এমন কোনো প্রকল্প যা সময়মতো সম্পন্ন হয়েছে।

এটি আমাদের গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “কেন আমরা এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দেব যা অর্জন করা সম্ভব নয়? চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ই আমরা কখনো কখনো জানি যে এটি সময়মতো বাস্তবায়িত হবে না, তবুও আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করি। এতে পুরো প্রক্রিয়াটি বিকৃত হয়।” তাঁর এই মন্তব্য প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলোর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার অভাবের দিকে ইঙ্গিত করে।

“জাতীয় বিজয়”

তিনি (air-chief-marshal) অপারেশন সিঁদুরকে একটি “জাতীয় বিজয়” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই অপারেশন সশস্ত্র বাহিনী, বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার সাফল্যের প্রমাণ। পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি শিবিরে নির্ভুল হামলার এই অপারেশনটি আধুনিক যুদ্ধের পরিবর্তিত চরিত্র এবং উন্নত প্রযুক্তির একীকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা কৌশলের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

তিনি বলেন, “অপারেশন সিঁদুর একটি জাতীয় বিজয়। আমি এখানে উপস্থিত ভারতের প্রতিটি নাগরিককে ধন্যবাদ জানাই। এই অপারেশনটি সকল সংস্থা এবং বাহিনী একত্রে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। যখন সত্য আপনার পক্ষে থাকে, তখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই সফল হয়।”

প্লে-অফের আগে অধিনায়কত্বে ‘বিরাট’ রদবদল বেঙ্গালুরু শিবিরে !

অমর প্রীত সিং কি বলছেন

এয়ার চিফ মার্শাল (air-chief-marshal) সিং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহজাত আস্থার উপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের মধ্যে আস্থা একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। প্রথম মিশন থেকেই আমাদের একে অপরের উপর ভরসা করতে হয়, কারণ আমাদের জীবন একে অপরের উপর নির্ভর করে।” তিনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বায়ুসেনা, শিল্প, ডিআরডিও এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোকে জাতীয় নিরাপত্তার শৃঙ্খলের শক্তিশালী কড়ি হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি (air-chief-marshal) বলেন, “আমরা সকলেই একটি বৃহত্তর শৃঙ্খলের অংশ। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের কোনো গোষ্ঠী দুর্বল কড়ি না হয়, যার কারণে এই শৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। আমরা সকলেই দক্ষতা অর্জনের জন্য সমানভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর উন্নতি করতে হবে।”

তিনি প্রতিরক্ষা প্রকল্পে বেসরকারি শিল্পের সঙ্গে আরও গভীর সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি উন্নত মাঝারি যুদ্ধবিমান (এএমসিএ) প্রকল্পে বেসরকারি অংশগ্রহণের জন্য সাম্প্রতিক ছাড়পত্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এএমসিএ প্রকল্পে বেসরকারি শিল্পের অংশগ্রহণের অনুমোদন একটি বড় পদক্ষেপ।

এটি দেশের বেসরকারি শিল্পের উপর আস্থার প্রতিফলন। আমি নিশ্চিত যে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা শুধু ভারতে উৎপাদনের কথা বলতে পারি না, আমাদের ভারতে ডিজাইন এবং উন্নয়নের কাজও শুরু করতে হবে। বাহিনী এবং শিল্পের মধ্যে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ যোগাযোগের মাধ্যমে এই আস্থা বজায় রাখতে হবে।”

এয়ার চিফ মার্শাল(air-chief-marshal) সিং তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান সরবরাহে বিলম্বের বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল)-এর সঙ্গে ৪৮,০০০ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, ২০২৪ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ৮৩টি বিমানের কোনোটিই সরবরাহ করা হয়নি। তিনি এএমসিএ এবং তেজস এমকে২-এর প্রোটোটাইপ তৈরিতেও বিলম্বের সমালোচনা করেন।

“আমাদের এখন প্রস্তুত থাকতে”

তিনি বলেন, “আমাদের এখন প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি। যুদ্ধ জয়ের জন্য আমাদের বাহিনীকে ক্ষমতায়ন করতে হবে।” তিনি প্রতিরক্ষা শিল্পে আত্মনির্ভরতার উপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের শুধু উৎপাদন নয়, ভারতে ডিজাইন এবং উন্নয়নের কাজও করতে হবে।” তাঁর এই বক্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে।

এই সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর উপস্থিতিতে এয়ার চিফ মার্শাল সিংয়ের বক্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করে। তাঁর মন্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং আত্মনির্ভরতার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।