নির্বাচনের আগেই এআইএডিএমকে-তে অস্থিরতা, পদচ্যুত কেএ. সেনগোট্টাইয়ান

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এআইএডিএমকে-র (AIADMK) বর্ষীয়ান নেতা এবং বিধায়ক কেএ. সেনগোট্টাইয়ানকে হঠাৎ করেই সমস্ত দলীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার বিশেষত্ব…

AIADMK Sengottaiyan sacked

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এআইএডিএমকে-র (AIADMK) বর্ষীয়ান নেতা এবং বিধায়ক কেএ. সেনগোট্টাইয়ানকে হঠাৎ করেই সমস্ত দলীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার বিশেষত্ব হলো, মাত্র একদিন আগেই তিনি প্রকাশ্যে দলের নেতৃত্বকে আলটিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন— বহিষ্কৃত নেতাদের ফের একত্রিত না করলে দল আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না।

দলীয় একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে জানানো হয়েছে, “এআইএডিএমকে-র সংগঠন সম্পাদক এবং ইরোড উপনগর পশ্চিম জেলার সম্পাদক হিসেবে থাকা কেএ. সেনগোট্টাইয়ানকে আজ থেকে ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।” এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরেই তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

   

এডাপ্পাডি কে. পালানিস্বামী (ইপিএস)-র নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

এদিন এআইএডিএমকে সাধারণ সম্পাদক এডাপ্পাডি কে. পালানিস্বামী (ইপিএস)-এর নেতৃত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। সেখানে দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী যেমন দিণ্ডিগুল শ্রীনিবাসন, বিজয়বাস্কার, কে.পি. মুনুসামী এবং এস.পি. ভেলুমণি উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ কীভাবে সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়েই এই বৈঠকে আলোচনা হয়।

সেনগোট্টাইয়ান দীর্ঘদিন ধরে এআইএডিএমকে-র অন্যতম শক্তিশালী মুখ। তিনি শুধু বহুবার নির্বাচিত বিধায়কই নন, রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি গোবিচেত্তিপালায়মে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দলের নেতৃত্বকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এক বিভক্ত এআইএডিএমকে কখনও ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না।”

দশ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ করার চাপ AIADMK Sengottaiyan sacked

তিনি প্রকাশ্যে দাবি করেন যে বহিষ্কৃত নেত্রী ভি.কে. শশীকলা, টিটিভি দিনাকরণ এবং ও. পান্নিরসেলভমকে (ওপিএস) আবার দলে ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু তাই নয়, তিনি আরও জানান যে তিনি নিজে, পি. থানগামণি, সি.ভি. শণমুগম এবং কে.পি. আনবঝগন— এই চারজন জ্যেষ্ঠ নেতা ইতিমধ্যেই ইপিএসকে দশ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।

সেনগোট্টাইয়ানের এই প্রকাশ্য বিদ্রোহী সুরকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছিল একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। তিনি যে প্রচার গাড়িতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন, সেখানে ইপিএস-এর ছবি ছিল না। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এটি ছিল সরাসরি অসন্তোষের বার্তা।

সেনগোট্টাইয়ানের মন্তব্যের পরপরই বহিষ্কৃত নেতারা সাড়া দেন। শশিকলা এবং ওপিএস উভয়েই বলেন, সেনগোট্টাইয়ান যা বলেছেন তা আসলে সাধারণ কর্মীদের অনুভূতির প্রতিফলন। তারা মনে করেন, দলের পুনরুজ্জীবনের জন্য অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। দিনাকরণও এই বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন যে, বিভক্ত এআইএডিএমকে-র পক্ষে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকা কঠিন হবে।

Advertisements

এই ঘটনার প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতেও পড়েছে। বর্তমানে এআইএডিএমকে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)-এর গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দল। কিন্তু ওপিএস এবং দিনাকরণ ইতিমধ্যেই এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন। এখন যদি এআইএডিএমকে-র ভেতর থেকে আরও বিভাজন হয়, তবে তা এনডিএ-র জন্যও বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষত ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত দল

সেনগোট্টাইয়ান এআইএডিএমকে-র সবচেয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের একজন। জে. জয়ললিতার মৃত্যুর পর দল যখন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত হয়, তখনও তিনি ছিলেন অন্যতম মধ্যস্থতাকারী। এবার তার এই হঠাৎ বিদ্রোহী অবস্থানকে অনেকেই দলের ভেতর লুকিয়ে থাকা অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এআইএডিএমকে যদি শশিকলা ও ওপিএসকে ফেরাতে ব্যর্থ হয়, তবে একতাবদ্ধভাবে ডিএমকে-র বিরুদ্ধে লড়াই করা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে।

সেনগোট্টাইয়ানকে দলীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া মূলত ইপিএস-এর নেতৃত্বের প্রতি তার চ্যালেঞ্জের জবাব বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এতে কি দলের ভেতর ভাঙন আরও বাড়বে না? কারণ, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ নেতা সেনগোট্টাইয়ানকে হঠাৎ করে দায়িত্বচ্যুত করা কর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বাড়াতে পারে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েক মাস এআইএডিএমকে-র জন্য অত্যন্ত সংকটময় হতে চলেছে। দল যদি বহিষ্কৃত নেতাদের ফেরানোর বিষয়ে কোনোরকম পদক্ষেপ না নেয়, তবে দলীয় ভাঙন আরও প্রকট হতে পারে। অন্যদিকে, এনডিএ-র ভেতরেও এই বিভাজনের প্রভাব পড়বে এবং বিজেপির সঙ্গে জোটের সমীকরণ দুর্বল হতে পারে।

সব মিলিয়ে, সেনগোট্টাইয়ানের বিদ্রোহী সুর এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে দায়িত্বচ্যুত করার সিদ্ধান্ত— উভয়ই তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, ইপিএস কীভাবে পরিস্থিতি সামলান এবং এআইএডিএমকে আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে কি না।

Bharat: AIADMK veteran K.A. Sengottaiyan has been stripped of all party responsibilities, sparking political turmoil in Tamil Nadu. The decision came just a day after he publicly warned the leadership that the party could not return to power without readmitting expelled leaders like V.K. Sasikala and O. Panneerselvam.