পহেলগামের জঙ্গিহানার পর ভারত আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে—এমনই শক্ত বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। বৃহস্পতিবার সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে তাঁর কর্মসূচি থাকলেও, খারাপ আবহাওয়ার কারণে সিকিম সফর বাতিল করে তিনি বাগডোগরা থেকেই ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন। সেখানেই তিনি পহেলগাম হামলার প্রসঙ্গে বলেন, “এই হামলা শুধু ভারতের উপর নয়, মানবতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের উপর আঘাত।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা সবাই, বিশেষ করে সিকিমবাসী, পর্যটনের গুরুত্ব ও শক্তি ভালোই বোঝেন। এটা শুধুই বিনোদনের নয়, বৈচিত্র্যের উৎসবও বটে। কিন্তু পহেলগামে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তা বহু ভারতীয় পরিবারের সুখ কেড়ে নিয়েছে। ওরা শুধু মানুষ মারে না, দেশের ভেতরে বিভাজনের চক্রান্তও করে।”
তবে এই হামলা ভারতের মনোবল ভাঙতে পারেনি, বরং আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে দেশবাসীকে। মোদীর কথায়, “আজ গোটা বিশ্ব দেখছে, কীভাবে ভারত আগের চেয়েও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে জঙ্গিদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, হামলার পর ভারত কেবল আত্মরক্ষাতেই থেমে থাকেনি, সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমরা তাদের সন্ত্রাসের কেন্দ্রগুলোকে ধ্বংস করেছি। এতে পাকিস্তান রেগে গিয়ে আমাদের সেনা ও সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু তাতেও তাদের মুখোশ খুলে গেছে।”
তিনি আরও জানান, ভারতীয় সেনা কীভাবে পাকিস্তানের একাধিক বিমানঘাঁটি ধ্বংস করেছে, এবং কতটা নিখুঁত ও দ্রুততার সঙ্গে এই প্রতিশোধমূলক অভিযান চালানো হয়েছে, তাও গোটা বিশ্ব দেখেছে।
“আমরা দেখিয়েছি ভারত কতটা নিখুঁত ও দ্রুতভাবে কাজ করতে পারে। আজ ভারত আত্মবিশ্বাসী, সংগঠিত এবং প্রস্তুত,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
পর্যটনের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে মোদী বলেন, “সিকিমের মানুষ জানেন, পর্যটন কেবল অর্থনীতির উৎস নয়, মানুষের সংযোগ ও সংস্কৃতিরও বাহক। আর তাতেই সন্ত্রাসবাদীরা আঘাত হানতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ভারত এখন কোনও চক্রান্তেই বিভক্ত হয় না।”
এদিন বাগডোগরার সভায় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “আপনাদের ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং দৃঢ়তা আমাদের দেশের মূল শক্তি। আজ যখন শত্রুরা আমাদের ঐক্য ভাঙতে চাইছে, তখন আপনারা দেখিয়ে দিচ্ছেন—ভারত এক, অখণ্ড এবং অদম্য।”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জাতীয় নিরাপত্তা, আত্মনির্ভরতা এবং ঐক্যের ত্রিমুখী বার্তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “ভারত এখন শুধু প্রতিরক্ষায় নয়, উন্নয়ন, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির দিক দিয়েও বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার অবস্থানে। এই শক্তির মূল হল—ভারতীয়দের ঐক্য ও সহানুভূতি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদীর এই বক্তব্য পহেলগাম হামলার পর জাতীয় মনোবল চাঙ্গা করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরার কৌশল। একইসঙ্গে, দেশের অভ্যন্তরে সমন্বয় ও সংহতির বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এই ভাষণের মাধ্যমে।
শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা মনে করে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভারতের মনোবল ভাঙা যাবে, তারা ভুল করছে। ভারত এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, সংহত ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।” সরাসরি হামলার মুখেও এক অটুট ভারতের ছবিই এদিন তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।