AFSPA: আফস্পা থেকে মুক্ত অসমের ৬০ শতাংশ, আলফা শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি

উত্তর পূর্ব ভারতের তিন রাজ্য অসম, মনিপুর এবং মেঘালয়ে জারি ছিল সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা (AFSPA), বৃহস্পতিবার যা তিন রাজ্যের বড় অংশ থেকে…

CM To Hold Talks With Ulfa (I) Chief

উত্তর পূর্ব ভারতের তিন রাজ্য অসম, মনিপুর এবং মেঘালয়ে জারি ছিল সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা (AFSPA), বৃহস্পতিবার যা তিন রাজ্যের বড় অংশ থেকে আইনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।

অসমের বিস্তির্ণ এলাকা থেকে আফস্পা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফা (স্বাধীনতা) ও ভারত সরকারের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বারবার আলফা (স্বাধীনতা) প্রধান পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে শান্তি বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, বোড়ো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠীর প্রতিও শান্তি বার্তা দিয়েছেন।

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, “অসমের ৯টি জেলা এবং কটি মহকুমা ছাড়া রাজ্যের সকল এলাকা থেকে আফস্পা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। এই সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য আমি শাহকে আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন রাজ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা AFSPA-এর আওতামুক্ত হবে।”

হিমন্ত আরও বলেছেন, “AFSPA ১৯৯০ সাল থেকে বলপূর্বক অসমে কার্যকর হয়েছে এবং এই পদক্ষেপটি অসমে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে৷ এটি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য উন্নতির সাক্ষ্য। শান্তিকে প্রাধান্য দেওয়ায়, উত্তর-পূর্ব এখন প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের এক নতুন ধারায় চলছে। আমি অসমের জনগণকেও অভিনন্দন জানাই, যারা শান্তিতে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে, এই অঞ্চলটি ভারতের প্রবৃদ্ধির নতুন ইঞ্জিন হয়ে উঠতে প্রস্তুত।”

বৃহস্পতিবার অমিত শাহ ট্যুইট করে জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। কয়েক দশক পরে সেনাবহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।

উত্তর পূর্বের ওই সকল এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি আরও লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর অটল প্রতিশ্রুতি, আমাদের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, যেটি কয়েক দশক ধরে অবহেলিত ছিল এখন শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অভূতপূর্ব উন্নয়নের একটি নতুন যুগের সাক্ষী হচ্ছে। আমি এই গুরুত্বপূর্ণ মহূর্তে উত্তর-পূর্বের জনগণকে অভিনন্দন জানাই।”

AFPSA হচ্ছে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন অনুযায়ী, সেনাবাহিনী যে কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গুলি করতে পারবে। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারবে। বিনা ওয়ারেন্টে যে কোন জায়গায়, যে কারও বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবে। কোথাও জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে বলে সন্দেহ হলে, তা নির্দ্বিধায় উড়িয়ে দিতে পারবে। রাস্তায় কোনও যানবাহনের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করলে, তা থামিয়ে তৎক্ষণাৎ তল্লাশি চালানো যাবে। এবং সর্বোপরি এই আইনানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সেনা আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত বা আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না।

ভারতীয় সংসদে ১৯৫৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাস হয় আফস্পা। এটির মাত্র ছয়টি ধারা ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে অশান্ত এলাকায় আইন প্রয়োগের অনুমোদন দেয়। ভারতের উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্য অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অসম ও ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে গঠিত হয়। নাগাল্যান্ড, অসম এবং মনিপুরে ওই আইন বলবৎ ছিল। গত শতকের আশির দশকে পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তান আন্দোলন এবং পরে ৯০ দশকে জম্মু ও কাশ্মীরে এই আইন প্রয়োগ করা হয়। তখন থেকে সেখানেও এই আইন বলবৎ রয়েছে।