বাংলাদেশে মুক্ত জঙ্গি নেতা! বাংলা-দিল্লিতে সক্রিয় আল-কায়েদা সহযোগী ‘এবিটি‘

দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা মানচিত্রে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ (Ansarullah Bangla Team বা ABT), যা আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (AQIS)-এর সহযোগী সংগঠন, তার কার্যকলাপ নিয়ে ফের তীব্র সতর্কতা জারি করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।

Advertisements

একদিকে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তে ABT প্রধান জাশিমুদ্দিন রহমানি মুক্তি পেয়েছে, অন্যদিকে ভারতের অসম, মুর্শিদাবাদ ও দিল্লিতে ক্রমাগত ABT জঙ্গি গ্রেপ্তার হচ্ছে—যা ইঙ্গিত দিচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনটি ফের সক্রিয় হচ্ছে।

   

💣 অসমে গ্রেপ্তার ও নয়া তৎপরতা

অসম পুলিশের Special Task Force (STF) গত মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (ABT)-এর সঙ্গে যুক্ত একাধিক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

NDTV ও IANS সূত্রে খবর—জানুয়ারি ১৯ তারিখে গ্রেপ্তার হয়েছে এক “ভয়ঙ্কর সদস্য”, সে বাংলাদেশ-সংযুক্ত এই সংগঠনের সক্রিয় ক্যাডার ছিল।

এর আগে ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪-এ STF আরও দুজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে, যাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাদের পরিকল্পনা ছিল অসমে বড়সড় জঙ্গি হামলা ঘটানো।

অসম পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বলেন,

“আমরা আগেই সতর্ক ছিলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এই জঙ্গিরা বাংলাদেশ থেকে নির্দেশ পাচ্ছিল এবং ভারতীয় ভূমি ব্যবহার করে হামলার পরিকল্পনা করছিল।”


🧨 দিল্লি বিস্ফোরণ মামলায় নতুন সংযোগ

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-এর তদন্তে উঠে এসেছে, সাম্প্রতিক দিল্লি বিস্ফোরণ মামলায় ABT ও লস্কর-ই-তোইবা (LeT)-এর যোগসূত্র রয়েছে।

তদন্তে দেখা গেছে,

  • পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার নিম গ্রাম থেকে মাইনুল হাসান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে “ABT সংযোগে কাজ করত।”

  • তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সন্দেহজনক ডিজিটাল ডেটা ও লস্কর মডিউলের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় ABT, LeT এবং ISI একত্রে ভারতবিরোধী নেটওয়ার্ক গঠন করছে—বিশেষত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল লক্ষ্য করে।

Advertisements

⚠️ বাংলাদেশে ABT প্রধানের মুক্তি ও উদ্বেগ

ইন্ডিয়া টুডে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস, তিনি ABT প্রধান জাশিমুদ্দিন রহমানিকে মুক্তি দিয়েছেন।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লিতে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ রহমানিই ছিল বাংলাদেশের ভেতরে জিহাদি নেটওয়ার্ক সংগঠনের মূল স্থপতি

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার মতে, রহমানির মুক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গি সংগঠনগুলির নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে। বিশেষত, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ABT-র সক্রিয় স্লিপার সেল পুনরায় সক্রিয় হতে শুরু করেছে।

ABT leader Jashimuddin Rahmani
ABT leader Jashimuddin Rahmani

🕵️‍♂️ গোয়েন্দা সূত্রে যা জানা গেছে

🔸 অসম ও মুর্শিদাবাদে একাধিক গোপন আশ্রয়স্থল চিহ্নিত হয়েছে, যেখান থেকে অস্ত্র ও প্রচুর ডিজিটাল নথি উদ্ধার করা হয়েছে।

🔸 লস্কর-ই-তৈইবা ও ISI-এর সহযোগিতায় ABT সদস্যদের ভারতে অনুপ্রবেশ ও অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা চলছিল।

🔸 তদন্তে উঠে এসেছে, ভারতীয় মাটিতে নতুন করে “দুই ফ্রন্টে প্রোক্সি ওয়ার (proxy war)” শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান ও তার মিত্র জঙ্গি সংগঠনগুলি।

🧭 ভারতের নিরাপত্তা বলয়ে সতর্কতা

গোয়েন্দা মহল বলছে, উত্তর-পূর্ব ভারতে এখনই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে।

এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন,

“ABT আবার সক্রিয় হলে, তা শুধু অসম বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, সমগ্র পূর্ব ভারতের জন্য বিপজ্জনক।”

🌍 আন্তর্জাতিক প্রভাব

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে সরকারের পরিবর্তন এবং জঙ্গি নেতার মুক্তি সরাসরি ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে।

দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মহল মনে করছে—এই পরিস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কেও নতুন জটিলতা তৈরি করবে।