রাজনীতির আগে দেশ, সুর চড়ালেন অভিষেক

জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া: দেশপ্রেমের বার্তা নিয়ে ফের দৃঢ় সুরে বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ভারতীয় প্রবাসীদের…

Abhishek Banerjee Jakarta

জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া: দেশপ্রেমের বার্তা নিয়ে ফের দৃঢ় সুরে বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি জানান, “রাজনীতি আমার জায়গায় থাকবে, কিন্তু তার আগে থাকবে আমার দেশ। আমি কখনোই রাজনৈতিক স্বার্থকে দেশের স্বার্থের আগে স্থান দেব না।”

এই সফরে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় অভিষেক বলেন, “আমি শাসকদলের সঙ্গে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না, কিন্তু দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেব না। আমি দেশের জন্য কাজ করে যাব, আমার রাজনৈতিক অবস্থান তার পথে বাধা হতে পারবে না।”

   

তিনি আরও বলেন, “আমরা সবাই আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ রইল। পরের বার যখন আপনারা ভারতে যাবেন, তখন যদি ৭ দিনের পরিকল্পনা করে থাকেন, সেটাকে ১০ দিনের করুন। সেই অতিরিক্ত ৩ দিন আপনারা কাশ্মীরে কাটান। সেখানে পরিবারসহ কিছু সময় অতিবাহিত করুন। এতে কাশ্মীরের পর্যটন এবং অর্থনীতির উন্নতি হবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে অভিষেক মূলত এমন এক বার্তা দিলেন, যেখানে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নের কথা বললেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে যে প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছে, তার মধ্যেই এই ধরনের বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রবাসী ভারতীয়দের অভিষেক বলেন, “আপনারা বিদেশে থেকেও ভারতের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গর্ব বজায় রেখেছেন। আজ যখন দেশ এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে, তখন আপনাদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। কাশ্মীরে গিয়ে সময় কাটালে শুধু আপনাদের পরিবার নয়, স্থানীয় মানুষেরও উপকার হবে।”

তিনি যোগ করেন, “আমার দলের সঙ্গে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু আমি কখনও আমার জাতীয়তাবাদকে বিসর্জন দেব না। দেশের স্বার্থে আমি যেকোনো লড়াইয়ে সামিল হব, কিন্তু কখনোই এমন কিছু করব না যা ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী।”

Advertisements

অভিষেকের এই বক্তব্যে একদিকে যেমন রাজনৈতিক অবস্থানের দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে, অন্যদিকে জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে কাজ করার বার্তাও স্পষ্ট হয়েছে। বিরোধী দলে থেকেও সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর সময়, দেশের সার্বিক উন্নয়নে সক্রিয় সহযোগিতার বার্তা দেওয়া বিরল ঘটনা — এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কাশ্মীর প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “কাশ্মীর শুধু একটা ভূখণ্ড নয়, এটা ভারতের গর্ব। কাশ্মীরের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। আপনারা সেখানে ঘুরতে যান, স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিন।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে অভিষেক একদিকে যেমন সরকারের কাশ্মীর নীতিকে সমর্থন করছেন, অন্যদিকে সেখানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে তাঁর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্ববোধ স্পষ্ট।

রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চে যখন দলবাজি ও ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রাধান্য পাচ্ছে, তখন অভিষেকের এই “রাজনীতির আগে দেশ” বার্তা নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী অবস্থান। এই বক্তব্য ভবিষ্যতের রাজনীতির রূপরেখায় কোনো নতুন মোড় আনবে কিনা, সে উত্তর ভবিষ্যতের হাতে। তবে আপাতত, প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও তাঁর বক্তব্য ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়েছে বলে খবর।