একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘খেলা হবে’ স্লোগান বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে এক নতুন জোয়ার তৈরি করেছিল। বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল সেই স্লোগানকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’। এবার সেই ‘ভয়ঙ্কর খেলা’র হুঁশিয়ারি শোনা গেল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) কণ্ঠে। তবে এবারের খেলা রাজনীতির ময়দানে নয়, কিংবা তাঁর প্রিয় ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের খেলার মাঠেও নয়। অভিষেকের হুঁশিয়ারি আন্তর্জাতিক মঞ্চে, যুদ্ধক্ষেত্রে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তাঁর এই বিস্ফোরক মন্তব্য ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে তুমুল আলোড়ন ফেলেছে।
সোমবার সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ভারতের পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও ক্ষেত্রেই কোনও সম্পর্ক রাখা উচিত নয়। তিনি বলেন, “ভারতের পাকিস্তানের সঙ্গে একমাত্র সম্পর্ক হওয়া উচিত যুদ্ধক্ষেত্রে। আর আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর (PoJK) দখল করা।” তাঁর এই বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি ক্রিকেট বা অন্য কোনও খেলাধুলার মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের তীব্র বিরোধী। তিনি বলেন, “যে দেশ বছরের পর বছর ধরে ভারতে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে, আমাদের দেশের মানুষের জীবন নষ্ট করেছে, তাদের সঙ্গে ক্রিকেট মাঠে হাত মেলানো মানে আমাদের শহিদ সেনাদের রক্তের অপমান।”
অভিষেকের এই মন্তব্যের পেছনে রয়েছে পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনা, যেখানে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ভারতীয় নাগরিক ও সেনাদের উপর হামলা চালিয়েছিল। এই হামলার পর ভারতীয় সেনা ‘অপারেশন সিঁদুরে’র মাধ্যমে কড়া জবাব দিয়েছিল। পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছিল, এমনকি পাক বায়ুসেনার কয়েকটি ঘাঁটিও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় সেনার এই সফল অভিযান নিয়ে অভিষেক বিদেশের মাটিতেও গর্বের সঙ্গে বড়াই করেছেন। তিনি সবসময়ই পাক অধিকৃত কাশ্মীর (PoJK) দখলের পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন। তাঁর মতে, এটিই হবে ভারতের জন্য একমাত্র ‘ট্রফি’, যা আমাদের শহিদ সেনাদের প্রতি সত্যিকারের সম্মান প্রদর্শন করবে।
অভিষেকের এই মন্তব্য এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটেও এসেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা মানে শত্রুর সঙ্গে হাত মেলানো। এটা কূটনীতি নয়, এটা আমাদের শহিদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের তিরঙ্গা উড়ছে ক্রিকেটের ব্যাট-বলের জন্য নয়, আমাদের সেনাদের অপরিসীম সাহস ও বীরত্বের জন্য।” তাঁর এই বক্তব্যে তিনি ক্রিকেটারদের প্রতি সম্মান প্রকাশ করলেও স্পষ্ট করেছেন, জাতি হিসেবে আমাদের প্রথম কর্তব্য আমাদের সেনাদের প্রতি। তিনি বলেন, “যখন আমরা স্টেডিয়ামে উল্লাস করি, তখন আমাদের সেনারা সীমান্তে প্রাণপণ লড়াই করে। তাদের রক্তের সঙ্গে ক্রিকেট মাঠের হাত মেলানো যায় না।”
অভিষেকের এই পোস্টে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনও ধরনের সম্পর্কের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে দেশ আমাদের সীমান্তে গুলি চালায়, তাদের সঙ্গে হাত মেলানো মানে বিশ্বাসঘাতকতা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ন্যায়বিচার, বিনোদন নয়। যদি পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও ম্যাচ হয়, তবে তা হওয়া উচিত সীমান্তে, লাইন অফ কন্ট্রোলে। আর আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত পাক অধিকৃত কাশ্মীর। এর চেয়ে কম কিছু হলে তা আমাদের শহিদদের প্রতি অপমান এবং পহেলগাঁওয়ের শিকারদের প্রতি অবিচার।”
এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে যেখানে অভিষেকের সমর্থকরা তাঁর এই জাতীয়তাবাদী অবস্থানের প্রশংসা করছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, এই মন্তব্য ক্রিকেটের মতো খেলাধুলাকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলছে। তবে অভিষেকের বক্তব্যে একটা বিষয় স্পষ্ট—তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতার পক্ষে নন। তাঁর এই ‘ভয়ঙ্কর খেলা’র হুঁশিয়ারি কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও গর্বের প্রশ্নে তাঁর দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন।
আগামী দিনে এই মন্তব্য কীভাবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়। তবে একটা কথা স্পষ্ট, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এই হুঁশিয়ারির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের এক নতুন ধারাকে সামনে এনেছেন। তাঁর এই বক্তব্য কেবল বাংলার রাজনীতিতেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
পহেলগাঁও হামলার পর অপারেশন সিঁদুরে প্রত্যাঘাত করে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তানের একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। একাধিক পাক বায়ুসেনা ঘাঁটিও ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতীয় সেনার এই সফল অভিযান নিয়েও বিদেশের মাটিতে বড়াই করেন অভিষেক। পাকিস্তানকে ধুয়ে দিয়েছিলেন। তবে শুরু থেকেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দখল নেওয়ার পক্ষে তিনি সওয়াল করেছেন। এশিয়া কাপে ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে বিতর্কে বিস্ফোরক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে ভয়ঙ্কর খেলার হুঁশিয়ারি।