জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (abdullah) পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ঘটনায়, যাতে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, রাজনীতি না করে মানবিকতার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, নিরীহ নাগরিকদের মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে তিনি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহালের দাবি তুলবেন না।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের এই নেতা (abdullah) গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহাল একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলেও, এই মুহূর্তে মানুষের জীবনকে রাজনৈতিক দরকষাকষির হাতিয়ার করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব আমাদের হাতে নেই। কিন্তু আমি আজকের পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের মর্যাদা দাবি করব না। মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে রাজ্যের মর্যাদা চাইব না। আমরা অন্য সময়ে এই দাবি তুলব।”
আবদুল্লাহ বলেন (abdullah)
আবদুল্লাহ (abdullah) আরও বলেন, “আমার রাজনীতি এত সস্তা নয় যে ২৬ জনের প্রাণের বিনিময়ে রাজ্যের মর্যাদা দাবি করব। রাজনীতির একটা সীমা থাকা উচিত, বিশেষ করে যখন মানুষের জীবন জড়িত।”
রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহালের দাবি কেন্দ্র ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে দীর্ঘদিনের বিতর্কের বিষয়। ২০১৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়।
ন্যাশনাল কনফারেন্স তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭০ ধারা পুনর্বহাল, রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া এবং স্বায়ত্তশাসন রেজোলিউশন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, আবদুল্লাহ স্পষ্ট করেছেন, সন্ত্রাসবাদে প্রাণ হারানো মানুষদের শোকের সময়ে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা উত্থাপন করা অনুচিত।
পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা
বিধানসভায় বক্তৃতাকালে আবদুল্লাহ (abdullah) পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “আজ আমরা পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।” তিনি বিধানসভায় শিকার ব্যক্তিদের নাম পড়ে শোনান এবং বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্ব তার।
তিনি বলেন, “এই হামলা আমাদের মধ্যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। আমরা এই অন্ধকারে একটি আলোর রশ্মি খুঁজছি। গত ২৬ বছরে আমি এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে জনগণের এমন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ দেখিনি।” তিনি জানান, মানুষ স্বেচ্ছায় ব্যানার, পোস্টার নিয়ে রাস্তায় নেমে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন।
কাশ্মীরের পরিবর্তিত চিত্র তুলে ধরেন
আবদুল্লাহ (abdullah) কাশ্মীরের পরিবর্তিত চিত্র তুলে ধরে বলেন, “জনগণ যখন আমাদের সমর্থন করবে, তখনই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ শেষ হবে। এটি তারই শুরু। আমাদের এমন কিছু বলা বা দেখানো উচিত নয় যা এই জন আন্দোলনের ক্ষতি করে।
বন্দুক দিয়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু এটি শেষ হবে তখনই যখন জনগণ আমাদের সমর্থন করবে। এখন মনে হচ্ছে জনগণ সেই জায়গায় পৌঁছেছে।” তিনি উল্লেখ করেন, কাশ্মীরের মসজিদগুলিতে শিকার ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নীরবতা পালন করা হয়েছে, যাকে তিনি “বিরাট এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ” বলে অভিহিত করেন।
মঙ্গলে KKR প্রতিপক্ষ অক্ষর-রাহুলের দিল্লি, ভেঙ্কটেশকে নিয়ে বড় বার্তা কিংবদন্তির
কাশ্মীরি যুবক আদিলের বীরত্ব
তিনি একজন স্থানীয় কাশ্মীরি যুবক আদিলের বীরত্বের কথা উল্লেখ করেন, যিনি নিজের জীবনের পরোয়া না করে অনেক পর্যটককে বাঁচিয়েছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ বলেন, “আদিল পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে পর্যটকদের বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”
তিনি পনি চালকদের প্রশংসা করেন, যারা পর্যটকদের উদ্ধার করেছেন এবং আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। খাবারের দোকানিরাও বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করেছেন। তিনি বলেন, “এটাই আমাদের আতিথেয়তা। আমি এই মানুষদের অভিনন্দন জানাই।”
বেদনা প্রকাশ করে আবদুল্লাহ বলেন
শিকার ব্যক্তিদের দুর্দশায় গভীর বেদনা প্রকাশ করে আবদুল্লাহ বলেন, “যে নৌসেনা অফিসারের কয়েক দিন আগে বিয়ে হয়েছিল, তার বিধবা স্ত্রীকে আমি কী বলব? আমার কাছে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। অনেক শিকার পরিবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তাদের অপরাধ কী ছিল? আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও আমি আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নেই, আমিই পর্যটকদের কাশ্মীরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তাদের হোস্ট হিসেবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব ছিল। পর্যটকদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা আমার নেই।”
আবদুল্লাহ (abdullah) হামলার পর কাশ্মীরি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি সকল রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, যারা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করেছে।”
পহেলগাঁও হামলা, যা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরের সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলির একটি, জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। আবদুল্লাহর বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যকে শক্তিশালী করতে চান। তিনি বলেন, “এই প্রতিবাদ আমাদের আশা জাগিয়েছে। জনগণের সমর্থনই সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাবে।”
এক্স-এ পোস্টে দেখা গেছে
এক্স-এ পোস্টে দেখা গেছে, অনেকে আবদুল্লাহর মানবিক অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ওমর আবদুল্লাহ প্রমাণ করেছেন, রাজনীতি মানবিকতার উপরে নয়। কাশ্মীরিদের ঐক্য নতুন আশা জাগিয়েছে।”
তবে, কেউ কেউ বলেছেন, রাজ্যের মর্যাদার দাবি তুলতে বিলম্ব না করাই ভালো হতো। আবদুল্লাহর বক্তব্য কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানিয়েছে। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বিত ও মানবিক পন্থার পক্ষে কথা বলেছেন।