টিভিকে-এর প্রধান এবং জনপ্রিয় অভিনেতা থালাপতি বিজয় (Vijay) তামিলনাড়ুতে চলমান ভোটার তালিকার SIR প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়াটি যদি যথাযথ স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতার সঙ্গে সম্পন্ন না হয়, তবে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার সমান ৬.৩৮ কোটি মানুষই ভোটাধিকার হারানোর ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে সামনে এনে তিনি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার ঝড় তুলেছেন।
বিজয় তাঁর ভিডিও বার্তায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভোটাধিকার শুধুমাত্র একটি সাংবিধানিক অধিকার নয়—এটি নাগরিক জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজের প্রতিটি মানুষ এই অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু বর্তমানে যে ভাবে SIR প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে, তা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তিনি দাবি করেন, অনেক নাগরিকই জানেন না এই উদ্যোগের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী। এটি কি শুধুই একটি নিয়মিত যাচাই-বাছাই, নাকি এর আড়ালে চলছে “অপ্রকাশ্য পুনঃনিবন্ধন”? এই প্রশ্নই এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বিজয়ের কথায়, তামিলনাড়ুর জনসংখ্যা জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬.৩৮ কোটি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে যদি প্রত্যেক নাগরিকের নাম সঠিকভাবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হয়, তবে অনেকেই হয়তো আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। এটি শুধু রাজনৈতিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়; এটি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তাই তিনি SIR প্রক্রিয়ার কড়া পর্যালোচনা ও সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।
শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করেই থেমে থাকেননি বিজয়। তিনি জানিয়েছেন, টিভিকে দল রাজ্যজুড়ে ১৬ নভেম্বর একটি বৃহত্তর গণবিক্ষোভের আয়োজন করতে চায়। এই আন্দোলনের লক্ষ্য—SIR প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ তুলে ধরা এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে জবাবদিহি দাবি করা। তবে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন পুরোপুরি নির্ভর করছে রাজ্য সরকারের অনুমতির উপর। দল জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় অনুমতি পেলে তারা শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যের সর্বত্র এই আন্দোলন পরিচালনা করবে।
বিজয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ উঠছে যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। অনেকেই নোটিস পাচ্ছেন না, আবার কিছু জায়গায় বাড়ি-বাড়ি যাচাই না করেই নাম বাদ পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন—তারা বুঝতে পারছেন না তাঁদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত আছে কি না। এই পরিস্থিতিতে বিজয় মনে করেন যে সরকারের উচিত জনগণের প্রতি স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। তিনি আরও বলেন, ভোটার তালিকা সংশোধন রাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব। এটি মানুষের ভবিষ্যত রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই এমন সংবেদনশীল কাজ নিয়ে কোনো ধরনের গাফিলতিই গ্রহণযোগ্য নয়। বিজয়ের দাবি—SIR প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও জনগণের কাছে পরিষ্কার হতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের কাছে পরিষ্কার তথ্য পৌঁছানো এবং তাঁদের নাম তালিকায় সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা নিশ্চিত করতে হবে।
বিজয়ের এই বক্তব্য এবং পরিকল্পিত বিক্ষোভ তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ইস্যু নিঃসন্দেহে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। SIR প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কী হবে, সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কতটা দূর হবে, এবং সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে—এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।


