বেশিদিন চলবে না ৬ বালিগঞ্জ প্লেস রেস্তোরাঁ!

বিশ্বজুড়ে বাংলা খাবারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের নানা রেস্তোরাঁ বাংলা খাবারকে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তেমনই একটি রেস্তোরাঁ হলো কলকাতার বিখ্যাত ‘৬…

6 Ballygunge Place Delhi Branch

বিশ্বজুড়ে বাংলা খাবারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের নানা রেস্তোরাঁ বাংলা খাবারকে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তেমনই একটি রেস্তোরাঁ হলো কলকাতার বিখ্যাত ‘৬ বালিগঞ্জ প্লেস’ (6 Ballygunge Place)। বাঙালি ঐতিহ্য আর সুস্বাদু খাবারের জন্য এ রেস্তোরাঁটি কলকাতায় দারুণ জনপ্রিয়। তবে সম্প্রতি এর দিল্লি শাখা নিয়ে লেখিকা তসলিমা নাসরিনের একটি মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সাড়া ফেলেছে।

তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, কলকাতার ৬ বালিগঞ্জ প্লেস তার অন্যতম প্রিয় রেস্তোরাঁ। এখানে পাওয়া যেত একেবারে ঘরের মতো রান্না করা বাঙালি খাবার—লইট্যা শুটকি, চেপা শুটকি, কৈ মাছ, ইলিশ মাছ, আর মরোলা মাছের চচ্চড়ি। এই খাবারগুলো তার কাছে স্মৃতির মতো প্রিয় ছিল। তবে দিল্লির শাখায় খাবারের মান তাকে হতাশ করেছে।

   

তিনি লিখেছেন, “দিল্লির ৬ বালিগঞ্জ প্লেসে গিয়ে খাবারের মান একেবারেই ভালো লাগেনি। একখানা করে রাধাবল্লভী, লুচি, কচুরি আর পরোটা নিয়েছিলাম। সঙ্গে কষা মাংস। কষা মাংস মনে হচ্ছিল কয়েকদিন আগে রাঁধা, আর পরোটা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। দিল্লির রেস্তোরাঁটি কলকাতার শাখার ধারে কাছেও নয়।”

দিল্লির শাখাটি বাংলা খাবার পরিবেশন করলেও সেখানে তসলিমা নাসরিনের অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত ছিল। তিনি উল্লেখ করেছেন, খাবারের দাম অত্যন্ত বেশি, অথচ খাবারের গুণগত মান কলকাতার মতো নয়। ব্যুফের ব্যবস্থাও নেই। তার মতে, দিল্লির বাঙালিদের এখানে খাওয়ার কোনো কারণ নেই। এমনকি ধনী অবাঙালিরাও হয়তো বাংলা খাবারের প্রেমে পড়ে যেতে পারে, তবে তাতে রেস্তোরাঁটি বেশিদিন টিকবে বলে মনে হয় না।

রেস্তোরাঁটির জনপ্রিয়তা ও সমালোচনা
৬ বালিগঞ্জ প্লেস মূলত বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী খাবারকে শহরের নতুন প্রজন্ম ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। তাদের মেনুতে বাংলার প্রায় প্রতিটি জনপ্রিয় খাবারের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে অন্য শহরে শাখা খোলার পর খাবারের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অনেকে মনে করছেন, দিল্লির শাখাটি কলকাতার মতো হতে পারছে না স্থানীয় চাহিদার কারণে। দিল্লির রেস্তোরাঁ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। প্রতিটি রেস্তোরাঁকে তাদের মান বজায় রেখে কাস্টমার ধরে রাখতে হয়। আর যেহেতু দিল্লিতে বাঙালি জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তাই এই রেস্তোরাঁর সফলতা নির্ভর করছে অবাঙালি খদ্দেরদের ওপর।

Advertisements

তবে তসলিমা নাসরিনের মতো একজন প্রখ্যাত লেখিকার এমন মন্তব্য রেস্তোরাঁটির ব্র্যান্ড ইমেজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তার এই পোস্ট ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার মন্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন, রেস্তোরাঁর মান উন্নয়ন না হলে এটি সত্যিই বেশিদিন টিকবে না।

দিল্লির বাঙালিদের প্রতিক্রিয়া
দিল্লিতে বসবাসরত কিছু বাঙালি জানিয়েছেন, তারা রেস্তোরাঁটি পরিদর্শন করেছেন এবং খাবারের মানে কিছুটা হতাশ হয়েছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাঙালি খাবারের আসল স্বাদ ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় এই ধরনের উদ্যোগ শুধু ক্ষতির মুখেই পড়বে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
৬ বালিগঞ্জ প্লেস দিল্লিতে টিকে থাকতে হলে খাবারের গুণগত মান বজায় রাখা ও গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মেনুতে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং দাম যথাযথ রাখতে হবে। বিশেষ করে, বাংলা খাবারের প্রতি আগ্রহী অবাঙালি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হলে রেস্তোরাঁটির পরিবেশন ও সেবার মান বাড়াতে হবে।

তবে তসলিমা নাসরিনের মতো প্রখ্যাত ব্যক্তির সমালোচনা রেস্তোরাঁটির জন্য সতর্ক সংকেত হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, তারা এই সমালোচনাকে কিভাবে গ্রহণ করে এবং মান উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে কিনা।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News