৩৫ বছরের পাত্রী, পাত্রর বয়স ১৮! লাভ জিহাদের ভয়ানক কাহিনি

ঘটনা উত্তরপ্রদেশের৷ সম্প্রতি এক বিরল এবং বিতর্কিত ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, এক ৩৫ বছর বয়সী মুসলিম মহিলা, নাম মরিয়ম, নাকি এক ১৮ বছর বয়সী হিন্দু…

ঘটনা উত্তরপ্রদেশের৷ সম্প্রতি এক বিরল এবং বিতর্কিত ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, এক ৩৫ বছর বয়সী মুসলিম মহিলা, নাম মরিয়ম, নাকি এক ১৮ বছর বয়সী হিন্দু তরুণ, উজ্জ্বল, কে প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করে তাকে বিয়েতে বাধ্য করেছেন। উজ্জ্বলের পরিবারের দাবি, এটি নিছকই “লাভ জিহাদ”-এর (Love Jihad) অংশ, যেখানে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে হিন্দু যুবকদের বা যুবতীদের ধর্মান্তর করা হয়।

Advertisements

ঘটনার সূত্রপাত হয় গাজিয়াবাদে, যেখানে উজ্জ্বলের পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানায়, তাদের ছেলে একটি চাকরির প্রলোভনে গুরুগ্রামে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎ করে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বহু খোঁজাখুঁজির পর জানা যায়, উজ্জ্বল হায়দরাবাদে আছে এবং সে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে মরিয়মের সঙ্গে নিকাহ করেছে। পরবর্তীতে তাকে বাঘপত থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।

Advertisements

উজ্জ্বলের পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, মরিয়ম শুরু থেকেই তার পরিচয় গোপন রেখেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে উজ্জ্বলকে চাকরি, ভালো জীবনযাত্রা ও প্রেমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের ফাঁদে ফেলেন। তাঁরা আরও বলেন, ছেলের বয়স মাত্র ১৮ – অর্থাৎ সে আইনত বিয়ের জন্য পূর্ণবয়স্ক হলেও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়।

এই ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই এটিকে “লাভ জিহাদ”-এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। ২০২৩ সালের NCRB রিপোর্টে ধর্মান্তরণ সম্পর্কিত ৬০টি অভিযোগের উল্লেখ পাওয়া যায়, যদিও সেগুলির সবগুলোতেই অপরাধ প্রমাণিত হয়নি।

তবে এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের একাংশ ভিন্ন মত পোষণ করেন। ২০২২ সালের Journal of Intercultural Studies এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, ২০০টি আন্তঃধর্ম বিবাদের মধ্যে মাত্র ১৫% ক্ষেত্রে পরিচয় গোপন বা প্রতারণার অভিযোগ এসেছে। অন্যদিকে, Economic and Political Weekly এর ২০২১ সালের এক গবেষণায় দাবি করা হয়, মাত্র ২% আন্তঃধর্ম বিয়েতে জোরপূর্বক ধর্মান্তরণের উপাদান ছিল।

এছাড়াও, South Asia Research এর ২০২৩ সালের এক বিশ্লেষণ বলছে, “লাভ জিহাদ” সংক্রান্ত বহু খবরই মিডিয়ার অতিরঞ্জন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাস্তবের তুলনায় অনেক বেশি হাইপ তৈরি হয় সামাজিক উত্তেজনা বাড়াতে।

অবশ্য ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০% আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন, যার ফলে সরকার ও মিডিয়ার মনোযোগ ঘরে ফিরে এসেছে, এবং এমন সামাজিক ইস্যুতে নজরদারি আরও বেড়েছে।

এই ঘটনাটি নিঃসন্দেহে সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায় — এটি কি সত্যিই “লাভ জিহাদ”-এর প্রমাণ? নাকি আবারও একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করা হচ্ছে? সময়ই দেবে তার সঠিক উত্তর। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত, আমাদের উচিত সত্য ও গুজবের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখা।