FPO Scheme India: ৩০ লক্ষ কৃষকের আয় বাড়াতে কেন্দ্রের নয়া পথ এফপিও

কেন্দ্র সরকারের কৃষক উৎপাদক সংগঠন (FPO Scheme) গঠন ও প্রচার প্রকল্পে দেশজুড়ে ৩০ লক্ষ কৃষক যোগ দিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,…

Farmers Join Centre’s FPO Scheme to Boost Earnings & Market Access

short-samachar

কেন্দ্র সরকারের কৃষক উৎপাদক সংগঠন (FPO Scheme) গঠন ও প্রচার প্রকল্পে দেশজুড়ে ৩০ লক্ষ কৃষক যোগ দিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই কৃষকদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই মহিলা। এই প্রকল্পের আওতায় গঠিত এফপিওগুলি এখন কৃষি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই উদ্যোগ ক্ষুদ্র কৃষকদের আয় বাড়াতে, বাজারে সরাসরি প্রবেশাধিকার, দর কষাকষির ক্ষমতা এবং বাজার সংযোগ উন্নত করতে সাহায্য করছে।

   

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। “১০,০০০ কৃষক উৎপাদক সংগঠন গঠন ও প্রচার” নামের এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হল উৎপাদন এবং বিপণনে স্কেলের অর্থনীতি ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। এটি দক্ষ, ব্যয়-কার্যকর এবং টেকসই সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য স্থায়ী আয়-ভিত্তিক চাষ নিশ্চিত করার লক্ষ্য রাখে। এর ফলে কৃষি উৎপাদনের খরচ কমছে এবং কৃষকদের আয় বাড়ছে।

Also Read |  ১২ জেলার কৃষকদের থেকে আলু কেনার বিজ্ঞপ্তি জারি রাজ্য সরকারের 

প্রকল্পের সুবিধা ও আর্থিক সহায়তা
এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি নতুন এফপিওকে পাঁচ বছরের জন্য সাহায্য এবং তিন বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা খরচ মেটাতে ১৮ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া, প্রতি কৃষক সদস্যের জন্য ২,০০০ টাকা পর্যন্ত ম্যাচিং ইকুইটি গ্রান্ট দেওয়া হয়, যার সর্বোচ্চ সীমা ১৫ লক্ষ টাকা প্রতি এফপিও। এফপিওগুলির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সহজলভ্য করতে, যোগ্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি এফপিও প্রকল্পের জন্য ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পটি ২০২৭-২৮ সাল পর্যন্ত ৬,৮৬৫ কোটি টাকার বাজেটে চালু করা হয়েছিল। চালুর পর থেকে ৪,৭৬১টি এফপিওকে ২৫৪.৪ কোটি টাকার ইকুইটি গ্রান্ট এবং ১,৯০০টি এফপিওকে ৪৫৩ কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি কভার দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি, বিহারের ভাগলপুরে পিএম-কিষাণ প্রকল্পের ১৯তম কিস্তি প্রকাশের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ১০,০০০তম এফপিওর উদ্বোধন করেন। এই এফপিওটি বিহারের খাগড়িয়া জেলায় নিবন্ধিত এবং ভুট্টা, কলা এবং ধানের ওপর কাজ করছে।

এফপিও কী এবং এর উদ্দেশ্য
এফপিও বা কৃষক উৎপাদক সংগঠন হল এমন একটি নিবন্ধিত সংস্থা, যা কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে উৎপাদন এবং বিপণনে স্কেলের অর্থনীতি ব্যবহার করে কৃষকদের সংগঠিত করে। এর মূল ধারণা হল, কৃষি পণ্যের উৎপাদক কৃষকরা গ্রুপ গঠন করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াকে সহজ করতে, কৃষি ও সমবায় বিভাগের অধীনে স্মল ফার্মার্স অ্যাগ্রিবিজনেস কনসোর্টিয়াম (এসএফএসি)-কে রাজ্য সরকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সংগঠনগুলো কোম্পানি আইন, ২০১৩ বা রাজ্যের সমবায় সমিতি আইনের অধীনে নিবন্ধিত হয়।

এফপিওগুলো ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বাজার সংযোগ উন্নত করতে এবং তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি কৃষি পণ্যের সমষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমায় এবং বাজারে ভালো দাম পেতে সহায়তা করে। এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি বড় বাজারে প্রবেশ করতে পারেন এবং মধ্যস্থতাকারীদের উপর নির্ভরতা কমাতে পারেন। ফলে কৃষকদের হাতে বেশি টাকা থাকে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

প্রকল্পের সাফল্য ও প্রভাব
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, এই প্রকল্পে যোগ দেওয়া ৩০ লক্ষ কৃষকের মধ্যে ১২ লক্ষের বেশি মহিলা রয়েছেন। এটি কৃষিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই এফপিওগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করছে, যা কৃষি অর্থনীতিতে নতুন গতি এনেছে। বিহারের খাগড়িয়ায় ১০,০০০তম এফপিওর উদ্বোধন এই প্রকল্পের বিস্তৃতি এবং সাফল্যের প্রতীক।

এই প্রকল্পে কৃষকদের জন্য পাঁচ বছরের হ্যান্ডহোল্ডিং সাপোর্ট দেওয়া হয়, যাতে তারা সংগঠন পরিচালনা, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মূল্য সংযোজন এবং বাজার সংযোগের দক্ষতা শিখতে পারেন। এটি কৃষকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। উদাহরণস্বরূপ, খাগড়িয়ার এফপিও ভুট্টা, কলা এবং ধানের মতো ফসলের উৎপাদন ও বিপণনে কৃষকদের একত্রিত করছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।

কৃষকদের জন্য নতুন আশা
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা বড় বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। এটি তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং বাজারে ভালো দাম পেতে সাহায্য করছে। এফপিওগুলো কৃষকদের জন্য বীজ, সার এবং যন্ত্রপাতির মতো উৎপাদন উপকরণ সরবরাহ করছে, যা তাদের কৃষি কার্যক্রমকে আরও দক্ষ করে তুলেছে। এছাড়া, এই সংগঠনগুলো কৃষি পণ্য সংগ্রহ করে বড় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে, যার ফলে মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা কমছে এবং কৃষকদের লাভ বাড়ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই প্রকল্প দেশের কৃষি খাতে একটি নতুন দিশা এনেছে। এফপিওগুলোর মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি বাজারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন এবং তাদের উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। এটি কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা কৃষকদের অংশগ্রহণ এই প্রকল্পকে আরও সমৃদ্ধ করেছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে মহিলাদের ভূমিকাকে শক্তিশালী করছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০২৭-২৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের জন্য ৬,৮৬৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আরও এফপিও গঠন এবং বিদ্যমান সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই প্রকল্পকে কৃষকদের আত্মনির্ভর করার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, “এফপিওগুলো কৃষকদের শক্তি বাড়াবে এবং তাদের উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করবে।”

এই প্রকল্পের সাফল্য দেশের কৃষি খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। ৩০ লক্ষ কৃষকের অংশগ্রহণ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা দেখায় যে, এটি কৃষকদের জন্য একটি টেকসই আয়ের পথ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে আরও কৃষক এই প্রকল্পে যোগ দিলে গ্রামীণ ভারতের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।