রাজস্থানে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। চিত্তৌড়গড় জেলার বানাস নদীতে একটি পরিবারের গাড়ি ভেসে যায়, যার ফলে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং এক শিশু এখনও নিখোঁজ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গুগল ম্যাপসের (Google Map) নির্দেশ মেনে গাড়িচালক বন্ধ একটি সেতুর দিকে গাড়ি নিয়ে যান। সেই সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িটি নদীর প্রখর স্রোতে আটকে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যায়।
চিত্তৌড়গড় জেলার পুলিশ সুপার মণীশ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী পরিবারটি ভিলওয়ারা থেকে ধর্মীয় সফর শেষে বাড়ি ফিরছিল। ওই সময় এলাকার সমস্ত নদী পারাপারের পথ জলস্ফীতির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চালক গুগল ম্যাপসের ওপর নির্ভর করে সোমি-উপ্রেডা সেতুর দিকে চলে যান। এই সেতুটি কয়েক মাস ধরেই বন্ধ ছিল। গাড়িটি সেতুর মাঝপথে আটকে গেলে পরিবারের লোকজন জানালা ভেঙে গাড়ির ছাদে উঠে যান। এরপর পরিবারের এক সদস্য আত্মীয়কে ফোন করে খবর দেন। খবর পেয়ে রাশ্মি থানা পুলিশের স্টেশন ইনচার্জ দেবেন্দ্র সিং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে উদ্ধার অভিযানে নামেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাতের অন্ধকারে বানাস নদীর উত্তাল স্রোতে উদ্ধার অভিযান চালানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে উদ্ধারকারীদের সংকেত দেন। পুলিশ ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় গাড়ির ছাদে বসে থাকা পাঁচজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু ততক্ষণে দুই মহিলা ও দুই শিশু নদীর স্রোতে ভেসে যান।
পরে উদ্ধারকারীরা একে একে দুই মহিলা এবং এক শিশুর দেহ উদ্ধার করে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ২১ বছরের চাঁদা, তার মেয়ে ৬ বছরের ঋত্বী, ২৫ বছরের মমতা এবং তার মেয়ে ৪ বছরের খুশি। এখনও এক শিশুর দেহের সন্ধান চলছে।
চিত্তৌড়গড় জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলেও এলাকায় পর্যাপ্ত সতর্কীকরণ বোর্ড ছিল। তবুও গুগল ম্যাপসের নির্দেশে সেতুর দিকে চলে আসেন গাড়িচালক। এই ঘটনার পর গুগল ম্যাপসের ন্যাভিগেশন সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে দুর্গম বা বিপজ্জনক রুটে ভুল নির্দেশ দেওয়া নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবারই রাজস্থানের জালোর জেলাতেও একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। ছয়জন যুবক সুকড়ি নদীর ধারে বেড়াতে গিয়ে নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে যান। ইতিমধ্যেই তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে এবং বাকি তিনজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। উদ্ধারকারীরা নদীর ধারে তাদের গাড়ি, জামাকাপড় এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র খুঁজে পেয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বর্ষার সময় রাজস্থানের বহু নদী-নালা ও সেতু বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া বন্ধ সেতু বা বিপজ্জনক এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটি গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রযুক্তির ওপর অন্ধ বিশ্বাস মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারের শোকাহত সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।