নিউজ ডেস্ক: শতাব্দী পেরিয়েছে, গত শতকের সত্তরের দশকে ভিয়েতনামে (Vietnam war) চরম পরাজয়ের ছায়া এখনও হোয়াইট হাউসে (White House) লম্বা হয়ে পড়ে। এ যেন রীতিমতো এক ‘অভিশাপ’-যেটা আরও কত শতাব্দী বইবে মার্কিন সরকার তা অজানা। ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের পর মার্কিন (USA) প্রেসিডেন্ট নিক্সন মাথা নামিয়েছিলেন। সেই ঘটনা ফিরে এসেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) আফগানিস্তান ইস্যুতে হতাশার চরমে পৌঁছে গেছেন। তিনিও মাথা নামালেন।
![Photo of Biden from Afghanistan news conference goes viral](https://www.ekolkata24.com/wp-content/uploads/2021/08/baiden.jpg)
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধম্য, সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মাথা নামানোর ছবি। বৃহস্পতিবার আফগান রাজধানী তথা তালিবান (Taliban) অধিকৃত কাবুলের বিমান বন্দরের ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। সেই রক্তাক্ত ঘটনার পর সাংবাদিক সম্মেলনে বাইডেন ছিলেন হতাশ। তবে তিনি শেষ দেখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিস্ফোরণে শতাধিক মৃত। মৃত তালিকায় আছে মার্কিন সেনা।
হোয়াইট হাউসে বাইডেনের মাথা নামানোর ছবি দেখে ১৯৬০-৭০ দশকের প্রবীন ভিয়েতকং গেরিলা কমান্ডার ও যোদ্ধারা ফিরে গিয়েছেন তাঁদের সোনালি জয়ের মুহূর্তে। প্রবল শক্তিশালী মার্কিন সেনা, তাদের অন্যতম সহযোগী ফরাসি সেনাকে পরাজিত করে ভিয়েতনাম স্বাধীনতার যুদ্ধে জয়ী হয়, নেতৃত্বে ছিলেন কিংবদন্তি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক হো চি মিন।
![Richard Nixon](https://www.ekolkata24.com/wp-content/uploads/2021/08/Nixon.jpg)
ভিয়েতনাম যুদ্ধ অতীত। তবে যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে তৎকালীন মার্কিন সেনার দখলে থাকা দক্ষিণ ভিয়েতনামের সায়গনের পতন আলোচিত হয়। যেমনটা হয়েছে গত ১৫ আগস্ট কাবুল থেকে মার্কিন সেনা নিয়ে বিমান উড়ে যাওয়ার ছবি বের হওয়ার পর। সেই দিনই দ্বিতীয়বারের জন্য আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবান জঙ্গিরা।
বিবিসি জানায়, কাবুল তালিবান দখলে যেতেই আমেরিকান দূতাবাস থেকে হেলিকপ্টারে লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। এ যেন সেই ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন থেকে মার্কিন সেনা ও দূতাবাসকর্মীদের চলে যাওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ‘৭৫ সালের ৩০শে এপ্রিল সায়গনের দখল নেয় ভিয়েতনামের গেরিলা বাহিনি। ফটোগ্রাফার হিউবার্ট ফন এস এমন একটি ছবি তুলেছিলেন যা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। ছবিতে ধরা পড়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিনগুলিতে সায়গন শহরের মানুষ হুড়োহুড়ি করে একটি হেলিকপ্টারে উঠে পালিয়ে যাচ্ছে।
![Vietnam war](https://www.ekolkata24.com/wp-content/uploads/2021/08/us-army-1.jpg)
সায়গন দখল করেছিল ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি। ভিয়েতকং গেরিলা যোদ্ধাদের ভয়ে ভীত মার্কিন সেনা তখন পালাতে ব্যাস্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন। হোয়াইট হাউসের ততকালীন সংবাদাতারা এখন অতি বৃদ্ধ। তাঁরা সেই ঘটনার স্মৃতিতে রেখে দিয়েছেন। ঠিক তেমনই প্রবীণ ভিয়েতকং যোদ্ধারা মনে রেখেছেন তাঁদের সায়গন দখলের কথা।
‘ভিয়েতনামের যুদ্ধ’ বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক বাঁক। সেই যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি চরম ধিকৃত হয় বিশ্বে। খোদ মার্কিন মুলুকেই বিক্ষোভ প্রবল আকার নিয়েছিল। আর ভিয়েতনামে চলছিল ভয়ঙ্কর লড়াই।
বিবিসি জানাচ্ছে, যুদ্ধের দুই পক্ষ, উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকার বনাম দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার ও তাদের সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। যুদ্ধ চলেছিল প্রায় ২০ বছর ধরে। ব্যয়বহুল যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকা ছিল আলোড়িত।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামকে সমর্থন করছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার কমিউনিস্ট মিত্র দেশগুলি। আর দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা। যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর লক্ষ লক্ষ সেনা ভিয়েতনামে মোতায়েন করা হয়েছিল।
গত কুড়ি বছর ধরে আফগানিস্তানেও মার্কিন সেনা ছিল। বিশাল খরচ বহন করছিল ওয়াশিংটন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগান নীতির পরিবর্তন আনেন। সরানো শুরু হয় সেনা। এই গত দু দশকে জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত মার্কিন সেনা তাদের গায়ে শেষ বড় ক্ষত নিয়ে দেশে ফিরছে।