বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খান (Aamir Khan) সবসময়ই তার অপ্রত্যাশিত এবং সাহসী পদক্ষেপের জন্য পরিচিত। সম্প্রতি, তিনি বলিউডের বর্তমান ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে থিয়েটারে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলি মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলে যায়। এই দ্রুত ওটিটি রিলিজের ফলে থিয়েটারে দর্শকদের উপস্থিতি কমছে বলে তিনি মনে করেন। এই প্রেক্ষাপটে, শিল্পে গুঞ্জন উঠেছে যে আমির তার পরবর্তী প্রকল্প হিসেবে একটি হাই-বাজেট ওটিটি সিরিজ নিয়ে কাজ করতে পারেন, সম্ভবত নেটফ্লিক্স বা আমাজন প্রাইম ভিডিওর জন্য। গুজব রয়েছে যে এটি একটি পিরিয়ড ড্রামা বা সমাজ-রাজনৈতিক থ্রিলার হতে পারে, যা তার স্বভাবসুলভ শৈলীতে গভীর বার্তা এবং উচ্চমানের গল্প বলার মিশ্রণ হবে।
Read Hindi: आमिर खान ला सकते हैं ओटीटी पर बड़ा धमाका
আমিরের দৃষ্টিভঙ্গি: থিয়েটার বনাম ওটিটি
আমির খান সম্প্রতি তার আসন্ন ছবি সিতারে জমিন পর-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে এটি শুধুমাত্র থিয়েটারে মুক্তি পাবে, ওটিটি বা ইউটিউব পে-পার-ভিউতে নয়। তিনি বলেছেন, “আমি থিয়েটারের অভিজ্ঞতাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি ছবি মুক্তির কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উপলব্ধ হয়ে যাওয়ায় দর্শকরা থিয়েটারে যাওয়ার প্রেরণা হারিয়ে ফেলছেন। তবে, শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, আমির সম্ভবত ওটিটির সম্ভাবনাকেও উপেক্ষা করছেন না। তিনি এমন একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে, যা ওটিটির গ্লোবাল পৌঁছানোর সুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে পৌঁছাবে।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, আমিরের এই দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গি—থিয়েটারের ঐতিহ্য রক্ষা করা এবং ওটিটির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো—বলিউডের ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক মডেলের জন্য একটি নতুন দিশা নির্দেশ করতে পারে। ফিল্মমেকার রাকেশ শর্মা বলেন, “আমির সবসময়ই ঝুঁকি নিতে ভয় পান না। তিনি যদি একটি ওটিটি সিরিজ নিয়ে কাজ করেন, তবে তা নিশ্চিতভাবে গল্প বলার ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।”
সম্ভাব্য ওটিটি প্রকল্প: পিরিয়ড ড্রামা বা সামাজিক থ্রিলার?
শিল্পে গুঞ্জন রয়েছে যে আমির খান একটি বড় বাজেটের ওটিটি সিরিজ নিয়ে কাজ করছেন, যা হতে পারে একটি ঐতিহাসিক পিরিয়ড ড্রামা বা একটি সমাজ-রাজনৈতিক থ্রিলার। এই ধরনের প্রকল্পগুলি আমিরের স্বভাবসুলভ শৈলীর সঙ্গে মানানসই, কারণ তিনি সবসময়ই সামাজিক ইস্যু এবং শক্তিশালী গল্পের মিশ্রণে দক্ষ। উদাহরণস্বরূপ, তার পূর্ববর্তী কাজ যেমন লগান, রং দেবাসন্তি এবং দঙ্গল দেখায় যে তিনি ঐতিহাসিক এবং সমাজ-কেন্দ্রিক গল্প বলতে পারেন।
শোনা যাচ্ছে, আমিরের দল ইতিমধ্যেই নেটফ্লিক্স এবং আমাজন প্রাইম ভিডিওর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, “আমির এমন একটি প্রকল্প চান যা শুধুমাত্র ভারতীয় দর্শকদের নয়, আন্তর্জাতিক দর্শকদেরও আকর্ষণ করবে। তিনি মহাভারতের মতো একটি মহাকাব্যিক গল্প বা একটি সমসাময়িক রাজনৈতিক থ্রিলার নিয়ে কাজ করতে পারেন।” তবে, এই প্রকল্পগুলি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
থিয়েটার এবং ওটিটির ভারসাম্য
আমিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি থিয়েটারের গুরুত্বের উপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, “থিয়েটারের ব্যবসা যদি শেষ হয়ে যায়, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।” তবে, তিনি ওটিটির সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, আমির সম্ভবত এমন একটি মডেলের দিকে এগোচ্ছেন যেখানে থিয়েটারে একটি দীর্ঘ রানের পর ছবি বা সিরিজ ওটিটিতে মুক্তি পাবে। এটি দর্শকদের থিয়েটারে যাওয়ার প্রেরণা দেবে এবং ওটিটির মাধ্যমে বৃহত্তর দর্শকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
বলিউডের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যেখানে দক্ষিণ ভারতীয় ছবি এবং হলিউডের কনটেন্ট বলিউডকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, আমিরের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি একটি ওটিটি সিরিজ নিয়ে কাজ করেন, তবে তা বলিউডের জন্য নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। শিল্প বিশ্লেষক সুজিত বর্মন বলেন, “আমিরের প্রকল্পগুলি সবসময়ই শিল্পে নতুন ট্রেন্ড তৈরি করে। তার ওটিটি সিরিজ যদি সফল হয়, তবে অন্যান্য নির্মাতারাও এই পথ অনুসরণ করতে পারেন।”
আমির খানের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে গুঞ্জন তুঙ্গে। তিনি কি একটি মহাকাব্যিক পিরিয়ড ড্রামা বা একটি সমাজ-রাজনৈতিক থ্রিলার নিয়ে ওটিটিতে আত্মপ্রকাশ করবেন? নাকি তিনি থিয়েটারের উপরই জোর দেবেন? যাই হোক না কেন, আমিরের প্রকল্পগুলি সবসময়ই দর্শকদের জন্য একটি অভিজ্ঞতা। তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বলিউডের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে।