শারদ উৎসবের আবহে পুজোর ছবি হিসেবে মুক্তি পেতে চলেছে শুভজিৎ মিত্র পরিচালিত ‘দেবী চৌধুরানী’ (Devi Chaudhurani )। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা ইতিমধ্যেই দর্শকমহলে আলোড়ন তুলেছে। তবে এই আলোড়নের কেন্দ্রে প্রশংসার চেয়ে বিতর্কই যেন বেশি। ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই উঠছে সাহিত্য বিকৃতির অভিযোগ।
এই ছবির অন্যতম মূল আকর্ষণ জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, যিনি পর্দায় অবতীর্ণ হয়েছেন দেবী চৌধুরানীর ভূমিকায়। বিপরীতে রয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিনি রয়েছেন ডাকাত সর্দার ভবানী পাঠকের চরিত্রে। কিন্তু এখানেই জন্ম নিয়েছে বিতর্ক।
ট্রেলারে প্রসেনজিতের মুখে শোনা যাচ্ছে, তিনি নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন “ভবানী চরণ পাঠক” বলে। অথচ সাহিত্যপ্রেমীরা জানেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর উপন্যাসে কখনওই ‘চরণ’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। চরিত্রটির নাম শুধু ভবানী পাঠক। এমন একটা অতিরিক্ত নাম সংযোজন কি শুধুই সৃজনশীল স্বাধীনতা, না কি এর পিছনে আছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃতি? এই প্রশ্নেই সরব সাহিত্য ও সংস্কৃতি মহল।
এখানেই শেষ নয়। ট্রেলারের আরেকটি দৃশ্যেও উঠেছে ভিন্ন বিতর্ক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভবানী পাঠকের সঙ্গে এক মুসলিম নেতার সাক্ষাৎ ও সহযোগিতা। সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা ভরত কৌল। এই দৃশ্যে তাঁরা একসঙ্গে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অংশীদার হচ্ছেন। অথচ বঙ্কিমচন্দ্রের মূল উপন্যাসে এমন কোনও চরিত্র বা ঘটনা ছিল না। ফলে প্রশ্ন উঠছে, নির্মাতারা কি ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাস ও সাহিত্যের মিশ্রণে বিকৃতি ঘটাচ্ছেন?
সাহিত্য ও সিনেমার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকতেই পারে — এই যুক্তি তুলে ধরছেন অনেকেই। পরিচালকেরা প্রায়ই দাবি করেন, “সাহিত্য অবলম্বনে” নির্মিত সিনেমা মানেই তার হুবহু প্রতিলিপি নয়, বরং একটি আলাদা চিত্রনাট্য। কিন্তু কালজয়ী সাহিত্য যখন জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তখন এমন পরিবর্তন অনেকের কাছেই অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
সমালোচকদের একাংশের দাবি, পরিচালক শুভজিৎ মিত্র হয়তো সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের প্রতিফলন ঘটাতে চেয়েছেন সিনেমায়। কিন্তু সেই প্রয়াসে যদি মৌলিক সাহিত্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তা দৃষ্টিকটু বলেই মনে করছেন তাঁরা।
এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সাহিত্য মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ‘দেবী চৌধুরানী’। ট্রেলার দেখে অনেকেই বলছেন, শুধুমাত্র বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য যদি সাহিত্যিক স্বাধীনতা এমনভাবে ক্ষুণ্ন হয়, তবে তা ভাবনার বিষয়।
এখন দেখার বিষয়, পরিচালক ও নির্মাতারা এই বিতর্ক নিয়ে কী বলেন, এবং আসল ছবিতে আদৌ কতটা মিল বা অমিল থাকে বঙ্কিমচন্দ্রের মূল সৃষ্টির সঙ্গে। তবে একথা নিশ্চিত — পুজোর মরসুমে ছবি যেমন আলোচনায় থাকবে, তেমনই বিতর্কও থাকবে সমান তীব্র।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
