অবশেষে অপেক্ষার অবসান। এক দশক পর ফের বড়পর্দায় একসঙ্গে ফিরলেন টলিউডের সুপারহিট জুটি—দেব ও শুভশ্রী। ২০১৪ সালের পর দীর্ঘ ১০ বছরের বিরতি ভেঙে দর্শকদের সামনে হাজির তাঁদের বহু প্রতীক্ষিত ছবি ধূমকেতু (Dhumketu)। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই জুটি ফের যেন ফিরিয়ে এনেছে বাংলা সিনেমার সোনালি যুগের স্মৃতি।
মুক্তির দিন থেকেই শহরে শুরু হয়েছে ধূমকেতু–উন্মাদনা। প্রথম দিনের প্রথম শো—সকাল ৬টা! বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এমন ভোরবেলার শোয়ের রেকর্ড খুবই বিরল। কিন্তু দেব-শুভশ্রীর অনুরাগীদের জন্য সময় যেন কোনও বাধা নয়। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কলকাতার নানা সিনেমা হলের বাইরে দেখা গিয়েছে ভক্তদের লম্বা লাইন, হাতে পোস্টার, ব্যানার, এমনকি দেব-শুভশ্রীর মুখোশ পর্যন্ত।
ছবির গল্পে রয়েছে মিষ্টি প্রেম, অপ্রত্যাশিত টুইস্ট, এবং এক আবেগঘন বয়ান। রুদ্রনীল ঘোষ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও দুলাল লাহিড়ীর দুরন্ত অভিনয় ছবিটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। ধূমকেতু কেবল প্রেমের গল্প নয়, এটি এক সামাজিক বার্তাও বহন করে—যেখানে স্বপ্ন, আশা, সংগ্রাম ও ভালোবাসা মিলেমিশে এক নতুন আলো তৈরি করেছে।
মুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ধূমকেতু–র রিভিউ। অধিকাংশ দর্শকই ছবিকে ‘দুর্দান্ত’ ও ‘ফ্রেশ ব্রিদ অফ এয়ার’ বলে প্রশংসা করেছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর বাংলা সিনেমা এমন এক কন্টেন্ট পেয়েছে যা একই সঙ্গে পরিবার, তরুণ প্রজন্ম এবং সিনেপ্রেমীদের মন জয় করতে সক্ষম।
দেব নিজেও উচ্ছ্বাস লুকোতে পারেননি। বক্স অফিসে ধূমকেতু–র রেকর্ড ব্রেকিং ওপেনিংয়ের পর নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন— “সকলকে অনেক ধন্যবাদ জানাই ধূমকেতুকে বাংলা সিনেমার Biggest Opening দেওয়ার জন্য, সকাল থেকে এত ভালো ভালো Review দেওয়ার জন্য ও এই ছবিটাকে ভালোবাসা দিয়ে এত বড় করে তোলার জন্য। This is just the beginning, picture abhi baki hai! Lastly, thank you এত বছরের অপেক্ষার জন্য ও এত বছর ধূমকেতুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য!”
বাংলা সিনেমার এই সাফল্য বলিউডকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। একই সময়ে মুক্তি পাওয়া বলিউডের বিগ বাজেট অ্যাকশন ফিল্ম War 2–কে টেক্কা দিচ্ছে ধূমকেতু। কলকাতার পাশাপাশি বাংলার জেলাগুলিতেও সমান সাড়া মিলছে, অনেক হলে শো হাউজফুল হয়ে যাচ্ছে মুক্তির প্রথম দিন থেকেই।
দেব-শুভশ্রীর ভক্তদের কাছে ধূমকেতু কেবল একটি সিনেমা নয়—এটি তাঁদের আবেগ, নস্টালজিয়া ও অপেক্ষার ফল। অনেক দর্শক জানিয়েছেন, ১০ বছর পর প্রিয় জুটিকে বড়পর্দায় দেখে তাঁদের কিশোর বয়সের স্মৃতি ফিরে এসেছে। ভোরবেলা হলের সামনে চায়ের দোকান, ঢাক-ঢোলের আওয়াজ, সেলফি, লাইভ ভিডিও—সব মিলিয়ে যেন উৎসবের পরিবেশ।
প্রথম দিন থেকেই যেভাবে দর্শকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে যে ধূমকেতু আগামী সপ্তাহে বক্স অফিসে রেকর্ড গড়তে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন পর কোনও বাংলা ছবি একসঙ্গে বাণিজ্যিক ও সমালোচক প্রশংসা পাচ্ছে, যা টলিউডের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সংকেত।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ধূমকেতু শুধু এক সিনেমার নাম নয়—এটি বাংলা সিনেমার জন্য নতুন ভোরের প্রতীক। আর এই ভোরবেলার শো থেকে শুরু হওয়া যাত্রা হয়তো আগামী দিনে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে।