ভারতীয় সিনেমার গতিপথে এক নতুন ধারার উত্থান ঘটছে—অ্যান্টি-হিরোর যুগ। ২০২৫ সালে বলিউডে (Bollywood) ত্রুটিপূর্ণ, নৈতিকভাবে দ্বন্দ্বময় চরিত্রের জনপ্রিয়তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ‘অ্যানিমাল’-এর মতো বিতর্কিত চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত সিরিজ—দর্শকরা এখন আর ঐতিহ্যবাহী নায়কের পরিবর্তে জটিল, বাস্তবসম্মত চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। এই প্রবণতার পিছনে রয়েছে দর্শকদের মানসিকতার পরিবর্তন এবং গল্প বলার নতুন শৈলী। বিখ্যাত পরিচালক মধুর ভান্ডারকর বলেন, “ভালো গল্প এবং স্তরযুক্ত চরিত্রের সঙ্গে দর্শকরা সংযোগ স্থাপন করেন। আজকের অ্যান্টি-হিরোরা মানুষের গভীরতাকে প্রতিফলিত করে, আর তাই তারা এত জনপ্রিয়।”
Read Hindi: बॉलीवुड में एंटी-हीरो की लहर: 2025 में त्रुटिपूर्ण किरदारों का जलवा
অ্যান্টি-হিরোর উত্থানের পটভূমি
২০২০-এর দশকের শুরু থেকে, বিশেষ করে মহামারীকালীন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থানের পর, দর্শকদের পছন্দে বড় পরিবর্তন এসেছে। ‘সেক্রেড গেমস’, ‘মির্জাপুর’, ‘পাতাল লোক’-এর মতো সিরিজে নায়করা আর ঐতিহ্যবাহী ভালো মানুষ নন, বরং তারা ত্রুটিপূর্ণ, নৈতিকভাবে ধূসর। এই চরিত্রগুলো সেন্সর বোর্ডের বাধা ছাড়াই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অবাধে গল্প বলার সুযোগ পেয়েছে। সিনেমাতেও এই ধারা প্রতিফলিত হয়েছে। ‘অ্যানিমাল’ (২০২৩)-এ রণবীর কাপুরের চরিত্র বিতর্ক সৃষ্টি করলেও বক্স অফিসে এর সাফল্য প্রমাণ করেছে যে দর্শকরা এখন এমন চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট। মধুর ভান্ডারকর বলেন, “‘অ্যানিমাল’-এর মতো চলচ্চিত্র পোলারাইজিং হলেও প্রভাবশালী। আমি চলচ্চিত্রকে গল্প হিসেবে দেখি, নৈতিক বা সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়।”
১৯৭০-এর দশকে অমিতাভ বচ্চনের ‘জঞ্জির’-এর মাধ্যমে অ্যান্টি-হিরোর ধারা শুরু হলেও, আধুনিক যুগে এটি নতুন রূপ পেয়েছে। ‘পুষ্পা’ (২০২১)-তে আল্লু অর্জুন, ‘কবীর সিং’ (২০১৯)-এ শাহিদ কাপুরের মতো চরিত্রগুলো নৈতিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ হলেও দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এই চরিত্রগুলো সমাজের ক্রোধ, হতাশা, এবং জটিলতার প্রতিফলন ঘটায়।
কেন জনপ্রিয় অ্যান্টি-হিরো?
আজকের দর্শকরা আর কালো-সাদা নৈতিকতায় বিশ্বাসী নন। তারা এমন চরিত্র চান, যারা তাদের নিজেদের ত্রুটির প্রতিফলন ঘটায়। সমাজের অস্থিরতা, অন্যায়, এবং দ্বন্দ্বের মধ্যে অ্যান্টি-হিরোরা এক ধরনের ক্ষমতার ফ্যান্টাসি প্রদান করে। তারা হয়তো সঠিক পথে লড়াই করে না, কিন্তু তাদের লড়াই বাস্তবসম্মত। মধুর ভান্ডারকরের মতো পরিচালকরা এই চরিত্রগুলোর মাধ্যমে সমাজের গভীর সত্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “‘ফ্যাশন’ বা ‘হিরোইন’-এর মতো চলচ্চিত্রে আমি ধূসর চরিত্র তৈরি করেছি, যারা দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।”
২০২৫-এর শীর্ষ অ্যান্টি-হিরো চলচ্চিত্র ও সিরিজ
২০২৫ সালে অ্যান্টি-হিরো কেন্দ্রিক বেশ কিছু প্রকল্প দর্শকদের মন জয় করতে প্রস্তুত। কিছু উল্লেখযোগ্য শিরোনাম হলো:
‘কিং’: শাহরুখ খানের নেতৃত্বে একটি অ্যাকশন-ড্রামা, যেখানে তিনি একজন ধূসর চরিত্রে অভিনয় করছেন।
- ‘পুষ্পা ৩’: আল্লু অর্জুনের পুষ্পারাজ চরিত্রের আরও গভীরতর গল্প।
- ‘ডন ৩’: রণবীর সিং-এর নেতৃত্বে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন অধ্যায়।
- ‘মির্জাপুর সিজন ৪’ (ওটিটি): কালিন ভাইয়ার গল্পে নতুন মোড়।
- ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান সিজন ৩’ (ওটিটি): মনোজ বাজপেয়ীর জটিল চরিত্রের নতুন অ্যাডভেঞ্চার।
ভবিষ্যৎ প্রবণতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টি-হিরোর এই ঢেউ আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের স্বাধীনতা এবং গ্লোবাল সিনেমার প্রভাবে পরিচালকরা আরও সাহসী গল্প বলতে উৎসাহিত হচ্ছেন। দর্শকরা এখন এমন চরিত্র চান, যারা তাদের নিজেদের জটিলতার প্রতিফলন ঘটায়। এই ধারা বলিউডকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
