‘অরণ্যের দিন রাত্রি’র রিমেক কি সত্যি হতে চলেছে? এই অভিনেতাকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

Aranyer Din Ratri Remake: সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’ (১৯৭০) বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই…

Aranyer Din Ratri Remake Rumours

Aranyer Din Ratri Remake: সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’ (১৯৭০) বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্র শহুরে জীবনের বিচ্ছিন্নতা, শ্রেণিবৈষম্য এবং আত্ম-অন্বেষণের গভীর গল্প দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। সম্প্রতি ২০২৫ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবির ৪কে রিস্টোরড সংস্করণ প্রদর্শিত হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে এবং সিনেমা প্রেমীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে—‘অরণ্যের দিন রাত্রি’র রিমেক কি সত্যিই হতে চলেছে? এবং এই রিমেকে কারা অভিনয় করতে পারেন? বিশেষ করে একজন জনপ্রিয় অভিনেতার নাম নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। আসুন, এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

কান উৎসবের পর নতুন আলোচনা
২০২৫ সালের মে মাসে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ক্লাসিক্স বিভাগে ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’র ৪কে রিস্টোরড সংস্করণ প্রদর্শিত হয়। এই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন ছবির অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর এবং সিমি গারেওয়াল। হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসন, যিনি সত্যজিৎ রায়ের ভক্ত, এই রিস্টোরেশন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছবিটিকে “রায়ের ফিল্মোগ্রাফির একটি লুকানো রত্ন” বলে উল্লেখ করেন। এই ঘটনা ছবিটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আবারও জনপ্রিয় করে তুলেছে।

   

এই প্রদর্শনীর পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’র রিমেক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভক্তরা এই ছবির আধুনিক সংস্করণ নিয়ে উৎসাহী, এবং অনেকে মনে করছেন যে এই গল্পের শহুরে বিচ্ছিন্নতা এবং মানব সম্পর্কের জটিলতা আজকের প্রজন্মের সঙ্গেও প্রাসঙ্গিক। তবে, এই রিমেকের গুজব কতটা সত্য? এবং কোন অভিনেতা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন?

রিমেকের গুজব: কী বলছে সামাজিক মাধ্যম?
এক্স-এর পোস্টগুলোতে অনেকে জল্পনা করছেন যে একটি প্রখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা এই ছবির রিমেকের পরিকল্পনা করছে। যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি, তবে এই গুজব কান উৎসবের পর থেকে আরও জোরালো হয়েছে। অনেকে মনে করছেন যে এই রিমেকটি আধুনিক বাংলা সিনেমার পরিচালক, যেমন সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতো কেউ পরিচালনা করতে পারেন, যারা সত্যজিৎ রায়ের গল্প বলার ধরনের সঙ্গে পরিচিত। তবে, এই গুজবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা দেব।

দেব, যিনি বাংলা সিনেমার একটি বড় নাম, তার অভিনয় দক্ষতা এবং বাণিজ্যিক আবেদনের জন্য পরিচিত। এক্স-এর কিছু পোস্টে ভক্তরা জল্পনা করছেন যে দেব এই ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র, অশিম (যিনি মূল ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত) বা সঞ্জয় (শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় অভিনীত) চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন। তার আধুনিক শহুরে ইমেজ এবং গভীর চরিত্রে অভিনয়ের দক্ষতা তাকে এই রিমেকের জন্য আদর্শ প্রার্থী করে তুলেছে। একজন ভক্ত এক্স-এ লিখেছেন, “দেব যদি ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’র রিমেকে অশিম হয়, তবে এটা অবশ্যই হিট হবে! তার রোমান্টিক এবং জটিল চরিত্রের মিশ্রণ ছবিটিকে নতুন মাত্রা দেবে।”

অভিনেতা নিয়ে জল্পনা
দেব ছাড়াও, অন্যান্য অভিনেতাদের নামও আলোচনায় উঠে আসছে। অশিমের চরিত্রে অঙ্কুশ হাজরার নামও কিছু ভক্ত উল্লেখ করেছেন, কারণ তার শহুরে কিন্তু সংবেদনশীল ইমেজ এই চরিত্রের সঙ্গে মানানসই। নারী চরিত্রগুলোর জন্য, অপর্ণা (শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত) এবং দুলি (সিমি গারেওয়াল অভিনীত) চরিত্রে রাইমা সেন, নুসরত জাহান, বা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের নাম উঠে আসছে। বিশেষ করে রাইমা সেন, যিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত, তার অভিনয় দক্ষতা এই রিমেকে একটি নস্টালজিক স্পর্শ যোগ করতে পারে।

Advertisements

তবে, রিমেকের ক্ষেত্রে ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেন যে সত্যজিৎ রায়ের এই কালজয়ী সৃষ্টির রিমেক করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অরণ্যের দিন রাত্রির মতো ছবি আবার বানানো কঠিন। রায়ের গল্প বলার ধরন এবং সৌমিত্র-শর্মিলার রসায়ন অতুলনীয়।” অন্যদিকে, নতুন প্রজন্মের দর্শকরা মনে করেন যে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সমসাময়িক গল্প বলার ধরন এই ছবিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারে।

রিমেকের সম্ভাবনা: চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
‘অরণ্যের দিন রাত্রি’র গল্পটি আজকের প্রেক্ষাপটেও প্রাসঙ্গিক। শহুরে জীবনের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, এবং শ্রেণিবৈষম্যের বিষয়গুলো আজকের দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। তবে, রিমেকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল ছবির আবেগপ্রবণ গভীরতা এবং সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনার সূক্ষ্মতা ধরে রাখা। মূল ছবির কেচকি ফরেস্ট রেস্ট হাউস, যেখানে ছবির বেশিরভাগ দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছিল, তা এখন আর অস্তিত্বে নেই। এই পরিবেশটি আধুনিক প্রেক্ষাপটে কীভাবে পুনর্সৃষ্টি করা হবে, তা একটি বড় প্রশ্ন।

এছাড়া, মূল ছবির মেমরি গেমের দৃশ্য, যা রায়ের গল্প বলার দক্ষতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, তা আধুনিক দর্শকদের জন্য কীভাবে উপস্থাপন করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। এই দৃশ্যটির মাধ্যমে চরিত্রগুলোর মানসিক জটিলতা এবং সম্পর্কের গতিশীলতা ফুটে উঠেছিল, যা রিমেকে ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘অরণ্যের দিন রাত্রি’র রিমেক নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও, কান উৎসবের পর থেকে এই জল্পনা দর্শকদের মধ্যে নতুন উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। দেব বা অন্য জনপ্রিয় অভিনেতাদের নিয়ে এই ছবি পুনর্নির্মাণ হলে, এটি নতুন প্রজন্মের কাছে সত্যজিৎ রায়ের গল্পকে পৌঁছে দিতে পারে। তবে, ভক্তরা আশা করছেন যে এই রিমেক মূল ছবির আত্মাকে অক্ষুণ্ণ রাখবে।