বিশ্বখ্যাত মিউজিক মাইস্ট্রো এ আর রহমান (AR Rahman) এবং তার স্ত্রী সাইরা বানু তাদের ২৮ বছরের বিবাহিত সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। সাইরা বানুর আইনজীবী ভন্দনা শাহ সম্প্রতি একটি অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশ করে তাদের এই বিচ্ছেদের কথা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অনেক বছর সংসারের পর, সাইরা বানু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার স্বামী এ আর রহমানের সাথে বিচ্ছিন্ন হতে। তাদের সম্পর্কের মধ্যে ব্যাপক আবেগিক চাপ এবং নানা ধরনের সংকটের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের গভীর ভালোবাসা সত্ত্বেও, তারা বুঝতে পেরেছেন যে সম্পর্কের মধ্যে যে বৈরিতা সৃষ্টি হয়েছে, তা আর সেতু তৈরি করা সম্ভব নয়। সাইরা বানু বলেছেন যে তিনি এই সিদ্ধান্ত ব্যথা এবং কষ্টের মধ্যে নিয়ে নিয়েছেন। তিনি সকলের কাছে প্রার্থনা করছেন যেন এই কঠিন সময়ে তাকে গোপনীয়তা এবং সহানুভূতির সাথে সম্মানিত করা হয়।”
এছাড়া, বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাইরা বানু এবং এ আর রহমানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সম্পর্কের পরিণতিতে তাদের মধ্যে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল, তা আর তাদের মধ্যে পুরানো সম্পর্কের বন্ধন বজায় রাখতে সহায়ক ছিল না। এমনকি তারা একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করলেও, সম্পর্কের বিভিন্ন দিকের মধ্যকার চাপ তাদের বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে গেছে।
এ আর রহমান এবং সাইরা বানুর সম্পর্ক নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে তাদের বিবাহ হয়, যা ছিল একটি আড়ম্বরপূর্ণ সঙ্গীত প্রেমিক যুগলের কাহিনী। এ আর রহমান নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার মা এই বিয়ে ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি সত্যিই সময় পাইনি একটি বউ খুঁজতে, আমি তখন অনেক ব্যস্ত ছিলাম সিনেমার কাজ নিয়ে, যেমন রেঙ্গেলা এবং বম্বে। তবে আমি জানতাম এটি বিয়ের জন্য সঠিক সময়। আমি ২৯ বছর বয়সী ছিলাম এবং বললাম, ‘আমার জন্য একটি বউ খুঁজে দিন।’” রহমান আরও বলেছিলেন যে তিনি তার মায়ের কাছে একটি “সরল” মেয়ে চাইছিলেন, এমন একজন যিনি তাকে কোনো ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করবে না, যাতে তিনি তার সঙ্গীতের উপর পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারেন।
এছাড়া, রহমান একাধিকবার বলেছেন যে তিনি সাইরাকে বেছে নিয়েছিলেন কারণ তিনি তার জীবনের গতি এবং প্রেরণার উৎস হিসেবে তাকে দেখতে চেয়েছিলেন। তাদের এই সম্পর্কের মধ্যে যে গভীর ভালবাসা ছিল, তা অনেকেই জানতেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে, কাহতিজা, রাহিমা, এবং আমিন।
এ আর রহমানের এই বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ তিনি শুধুমাত্র একজন বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী নন, বরং একজন ব্যক্তি হিসেবেও অনেকের কাছে প্রিয়। তাদের বিবাহিত জীবনেও অনেক ঝড় উঠেছিল, কিন্তু তারা কখনো তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। সাইরা বানু, যিনি বহু বছর ধরে এ আর রহমানের পাশে ছিলেন, তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন ছিল। তিনি সবসময় শান্ত এবং গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন এবং তার মেধা ও সহানুভূতি দিয়ে সবার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।
এ আর রহমানের মিউজিক ক্যারিয়ার নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন তার সঙ্গীতের পৃথিবী ও তার অবদান অমোঘ হয়ে উঠেছে। ভারতের চলচ্চিত্র সঙ্গীতের এক কিংবদন্তি হিসেবে তিনি একাধিক পুরস্কার এবং সম্মান অর্জন করেছেন। “রেঙ্গেলা”, “বম্বে”, “তুমা হি তুম”, “জয় হো” প্রভৃতি গানগুলি তাকে শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। তার সঙ্গীতের মধ্যে একধরনের গভীরতা এবং অনুভুতি থাকে, যা দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
তবে, ব্যক্তিগত জীবনেও এ আর রহমানের অর্জন এবং সংগ্রাম সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিচ্ছেদের পর, সাইরা বানু তার সন্তানদের সাথে সময় কাটাতে এবং নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে কাজ করছেন। তার এই কঠিন সিদ্ধান্তের পর, একাধিক সমর্থনকারী বার্তা এবং সঙ্গীত শিল্পীদের সমবেদনা এসেছে।
এ আর রহমান বর্তমানে তার পেশাগত জীবনের পরবর্তী পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার সাম্প্রতিক কাজগুলির মধ্যে রয়েছে ধানুষের দ্বিতীয় ছবি “রায়ান”, এছাড়াও তিনি চহাভা, থাগ লাইফ, গান্ধী টকসসহ একাধিক ছবির জন্য সঙ্গীত পরিচালনা করছেন। একদিকে তার ব্যক্তিগত জীবন যখন উত্তাল, তখন তার পেশাগত জীবন একইভাবে ধাবমান।
এ আর রহমান এবং সাইরা বানুর বিচ্ছেদের ঘোষণা মিউজিক এবং বিনোদন দুনিয়ার এক বড় চমক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেইসাথে, এটি প্রমাণ করেছে যে, যদিও একজন মানুষের কর্মজীবন অত্যন্ত সফল হতে পারে, কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি কখনও কখনও অন্য কিছু হয়ে দাঁড়ায়।
এখন, সাইরা বানু এবং এ আর রহমানের বিচ্ছেদ কীভাবে তাদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলবে। তবে তাদের সম্পর্কের সমাপ্তি সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগতে একটি বড় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।