কলকাতার আরজি কর কাণ্ডে (RG Kar Issue) তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। এই নৃশংস্য ঘটনার প্রতিবাদে রাজ পথে নেমেছিল আমজনতা থেকে সব মহল। এই তালিকায় বাদ যায়নি বিনোদন জগতও। অনেক তারকা শিল্পীরা তাদের সমাজ মাধ্যম থেকে শুরু করে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya) বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও, অনির্বাণ এই পরিস্থিতিতে যেন কিছুটা অবিচল।
তিনি বিজেপির বিরোধিতা করেছেন, এনআরসি নিয়ে গান বেঁধেছেন, কবিতা লিখেছেন এবং বলেছে, “আমি অন্য কোথাও যাব না, এই দেশেতেই থাকব।” কিন্তু আরজি কর কাণ্ডের পর তাঁর নীরবতা অনেককে চমকে দিয়েছে, এমনকি তিনি ট্রোলিং-এর মুখোমুখিও হয়েছেন।
সম্প্রতি, আসন্ন সিরিজ ‘তামলার রোমিও জুলিয়েট’-এর প্রচারে সংবাদ মাধ্যমে অনির্বাণ (Anirban Bhattacharya) বলেন, আরজি কর হাসপাতালে ৯ অগস্ট যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে তা তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তবে তাঁর মনে প্রতিবাদের প্রভাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গভীরভাবে ভেবে দেখেছি, বদলে যাওয়া এই নতুন সময়ে আমাকেও স্ট্র্যাটেজি নতুনভাবে ভাবতে হবে।”
অনির্বাণের (Anirban Bhattacharya) মতে, প্রতিবাদ করে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “যদি সত্যি কেউ চান অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি আমাদের সমাজ থেকে নিমূল হোক, তাহলে সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে।” তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, প্রতিবাদের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করা এখন কেবল একটি ধারণা। এজন্য সরাসরি সমাজ শোধনের কাজে যুক্ত হতে হবে।
তিনি জানান, রাজনীতিতে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ না থাকার কারণে শিল্পীদের দিকে বন্দুকের নজর যাচ্ছে। প্রতিবাদের মাঠে নামতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ, তারা তো সারাদিনই সেই কাজ করছেন। অনির্বাণ মনে করেন, সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করতে গেলে একজনকে ‘হোলটাইমার’ হতে হবে, যা অভিনয়ের মাঝে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় গরম-গরম বক্তৃতা দিলে মার্ক জুকারবার্গ লাভবান হবে, গণমাধ্যম লাভবান হবে, সমাজের কিছু হবে না।” এর মানে, তিনি বিশ্বাস করেন যে, শুধু কথায় নয়, কাজে ফলাফলের প্রয়োজন।
অনির্বাণের (Anirban Bhattacharya) এই দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং দায়বদ্ধতার দিক থেকে এক নতুন আলোর দিকে ইঙ্গিত করে। তিনি মনে করেন, সময় এসেছে নিজেদের কণ্ঠস্বর ও কাজের মাধ্যমে সমাজের জন্য কিছু করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে, সমাজ বদলাতে হলে তাঁর মতে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা অপরিহার্য। কেবল ব্যক্তিগত প্রতিবাদের আওয়াজ নয়, বরং সক্রিয়ভাবে সমাজের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
অনির্বাণের এই ভাবনা, যে প্রতিবাদ ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে একটি গভীর সংযোগ রয়েছে, বর্তমান সময়ের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর এই উপলব্ধি সমাজের তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন পথের সন্ধান দিচ্ছে।