পশ্চিমবঙ্গের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার (WBJEE) ফলপ্রকাশ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গভীর জটিলতা। ওবিসি শ্রেণিভুক্ত মেধাতালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে স্থগিত হয়েছে ফল প্রকাশ। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) যাচ্ছে। শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিষয়টি স্পষ্ট করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
তিনি বলেন, “রাজ্য জয়েন্টের ফল প্রকাশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আমরা আজই (শুক্রবার) সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব।”(Supreme Court)
প্রসঙ্গত, ৭ অগস্ট বৃহস্পতিবার রাজ্য জয়েন্ট বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। সমস্ত প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাই কোর্টের একটি নির্দেশে রীতিমতো চমকে ওঠে বোর্ড ও রাজ্য সরকার।
আদালতের আপত্তির কেন্দ্রবিন্দু
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানিয়েছেন, ওবিসি এ ও বি ক্যাটেগরি অনুযায়ী যেভাবে সংরক্ষিত মেধাতালিকা প্রস্তুত হয়েছে, তা বৈধ নয়। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার যেসব নতুন সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকাভুক্ত করেছে, তা ২০১০ সালের পরে। অথচ ২০২3 সালের একটি ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, ২০১০ সালের আগের তালিকা অনুযায়ীই সংরক্ষণ দিতে হবে।
এই রায়ের ভিত্তিতে বিচারপতি কৌশিক চন্দ স্পষ্ট বলেন, “জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন করে সংরক্ষিত তালিকা তৈরি করতে হবে। ২০১০ সালের আগে যাঁরা ওবিসি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, শুধুমাত্র তাঁদের নিয়েই তৈরি হবে সংরক্ষিত মেধাতালিকা।”
এর ফলে গোটা সংরক্ষণ কাঠামো নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ওবিসি শ্রেণির প্রায় ৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ আপাতত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে সময় মতো কলেজে ভর্তি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
রাজ্যের অবস্থান
রাজ্য সরকারের দাবি, হাই কোর্টের এই রায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থের পরিপন্থী। বহু পড়ুয়া যারা নতুন ওবিসি তালিকাভুক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই ভিত্তিতে সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছে। এখন ফল প্রকাশের দিন হঠাৎ করে তালিকা বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছে তারা।
ব্রাত্য বসু বলেন, “এই রায় শুধু রাজ্য জয়েন্ট নয়, সামগ্রিকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাবে।”
পড়ুয়াদের দুশ্চিন্তা
এদিকে ফল প্রকাশ স্থগিত হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী। যারা ইতিমধ্যেই পরবর্তী ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তারা এখন দোটানায়। বিশেষ করে সংরক্ষিত শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, তাদের দীর্ঘদিনের পাওয়া স্বীকৃতি হয়তো আইনি জটিলতায় খারিজ হয়ে যাবে।
পড়ুয়াদের একাংশ বলছে, “যদি ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে এত সমস্যা হয়, তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার আগেই তা স্পষ্ট করা উচিত ছিল। এখন যখন সব কিছু শেষ, তখন আদালতের এই নির্দেশ আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দিচ্ছে।”