২০২২ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের (TET Exam 2022) তথ্য ফাঁসের ঘটনা নিয়ে রাজ্যে ফের উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, একযোগে প্রায় দেড় লক্ষ পরীক্ষার্থীর(TET Exam 2022) ব্যক্তিগত তথ্য হঠাৎই ভিন্ন এক ওয়েবসাইটে প্রকাশ্যে চলে আসে। এই ঘটনার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে তথ্য ফাঁস হওয়া কোনও সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে বড়সড় জালিয়াতির ছক থাকতে পারে।
চাকরিপ্রার্থীদের (TET Exam 2022) একাংশের দাবি, এত সংখ্যক পরীক্ষার্থীর তথ্য একসঙ্গে বাইরে চলে যাওয়া প্রমাণ করে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া আবারও অস্বচ্ছ হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, “তবে কি ফের নতুন করে নিয়োগ দুর্নীতি শুরু হতে চলেছে?” ২০১৪ থেকে শুরু করে একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্য প্রশাসন এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই তথ্য ফাঁসের ঘটনা সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল অবশ্য ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং কারা কীভাবে এই তথ্য ফাঁস করল, তা তদন্তের মাধ্যমে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা মনে করছেন, কেবলমাত্র আশ্বাস দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাঁরা সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা চাইছেন।
উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকদিন আগেই টেট উত্তীর্ণরা (TET Exam 2022) পর্ষদ অভিযান চালিয়ে চাকরির দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, পরীক্ষায় পাশ করার পরও কেন তাঁদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। সেই আবহেই হঠাৎ এই তথ্য ফাঁসের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক পরীক্ষার্থী বলেন, “আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে বাইরে চলে গেল, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এর মানে হচ্ছে, কোনও না কোনও জায়গায় আমাদের তথ্য সুরক্ষিত নয়। আমরা যারা টেট পাস করেছি, আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বারবার রাজনীতি হচ্ছে। এবার মনে হচ্ছে আমাদের তথ্যও বেআইনিভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।”
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষার্থীদের নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন আইডি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য যদি এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসে, তবে তা সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রেও বড়সড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কারণ এই তথ্য ব্যবহার করে ভুয়ো চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা চালানো সম্ভব।
রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধী শিবিরের দাবি, রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনা বারবার প্রকাশ্যে এসেছে, আর এবার তথ্য ফাঁস তারই আরেকটি উদাহরণ। তাঁদের বক্তব্য, চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার পরিবর্তে প্রশাসনের গাফিলতিতেই বারবার তাঁদেরকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।
অন্যদিকে, শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শুধু তথ্য ফাঁসের তদন্ত করলেই হবে না, বরং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও ডিজিটালি নিরাপদ করার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। প্রতিটি পরীক্ষার্থীর তথ্য যেন কেবলমাত্র সুরক্ষিত সার্ভারে রাখা হয় এবং কোনও অবস্থাতেই বাইরে না যায়, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, টেট পরীক্ষার্থীদের(TET Exam 2022) তথ্য ফাঁস কেবল একটি তথ্যপ্রযুক্তি সমস্যা নয়, বরং তা বৃহত্তর শিক্ষাক্ষেত্রের সংকটের প্রতিচ্ছবি। এই ঘটনা প্রমাণ করে, পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও বিশ্বাস বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। এখন দেখার বিষয়, পর্ষদ কত দ্রুত এবং কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। পরীক্ষার্থীরা অন্তত আশাবাদী, এবার যেন তাঁদের কণ্ঠস্বর গুরুত্ব পায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।