পুজোর মাসে দেশে বিপুল কর্মসংস্থান

পুজোর মাস, অর্থাৎ অক্টোবর, এবার কর্মসংস্থানের (Employment) ক্ষেত্রে এক বিশেষ নজির স্থাপন করেছে। কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংস্থা (EPFO)-র সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে সংস্থার…

A group of young women in India, all members of the Employees' Provident Fund Organisation

পুজোর মাস, অর্থাৎ অক্টোবর, এবার কর্মসংস্থানের (Employment) ক্ষেত্রে এক বিশেষ নজির স্থাপন করেছে। কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংস্থা (EPFO)-র সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে সংস্থার মোট সদস্য সংখ্যা বেড়েছে ১৩.৪১ লক্ষ। এই পরিসংখ্যান কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের আর্থিক ও সামাজিক স্থিতির একটি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরছে।

ইপিএফও-র প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, নতুন নিযুক্ত হওয়া কর্মীদের মধ্যে ৭.৫ লক্ষ পুরোপুরি নতুন কর্মচারী। অর্থাৎ, এই কর্মীরা প্রথমবারের মতো চাকরির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং তাদের ইপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এটি একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, তেমনই অন্যদিকে দেশের যুব সমাজের কর্মজীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহও বাড়িয়ে তুলেছে।

   

যুবকদের প্রাধান্য
ইপিএফও-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিযুক্ত কর্মীদের মধ্যে ৫৮.৪৯ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এই তথ্যটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি স্পষ্ট করে যে দেশের যুবসমাজ এখন কর্মসংস্থানের মূল শক্তি হয়ে উঠছে। নতুন প্রজন্মের এই অংশটি কেবলমাত্র কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে না, বরং ভারতের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছে।

এছাড়াও, পুজোর মৌসুমে নানা অস্থায়ী এবং স্থায়ী কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে খুচরো ব্যবসা, পর্যটন, পরিষেবা খাত, এবং ই-কমার্সের মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়। এই ক্ষেত্রগুলি পুজোর সময় অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বাড়তি কর্মী নিয়োগ করে, যা সামগ্রিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইপিএফও-র ভূমিকা ও গুরুত্ব
ইপিএফও হল একটি জাতীয় স্তরের সংগঠন, যা দেশের চাকরিজীবী শ্রেণির জন্য অবসরকালীন সুরক্ষা প্রদান করে। নতুন সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে বোঝা যায় যে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এখন আনুষ্ঠানিক চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন। এটি কেবলমাত্র কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ইপিএফও-র সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি দেখায় যে নিয়ন্ত্রিত চাকরির বাজারে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে এবং আর্থিক লেনদেন আরও বেশি সংগঠিত হচ্ছে।

Advertisements

অর্থনীতির উপর প্রভাব
পুজোর সময়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। পুজোর সময় কেনাকাটার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এই সময় তাদের উৎপাদন এবং পরিষেবা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে। এর ফলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করে।

এছাড়া, ইপিএফও-র সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে ভারতে বেকারত্ব সমস্যা কিছুটা হলেও হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষত, কোভিড-১৯ মহামারির পরে চাকরির বাজারে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যদিও পুজোর মাসে কর্মসংস্থানের এই বৃদ্ধির ঘটনা অত্যন্ত ইতিবাচক, তবে তা অস্থায়ী নয়, সেটি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, উৎসবকালীন কাজগুলি স্বল্পমেয়াদী। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।

এছাড়া, কর্মসংস্থানের এই বৃদ্ধি শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামীণ এলাকাগুলিতেও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন। এতে দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।

পুজোর মাসে ইপিএফও-র সদস্য সংখ্যা ১৩.৪১ লক্ষ বৃদ্ধি পাওয়া দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এটি ভারতের অর্থনীতির উন্নতি এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থানে যোগদানের উজ্জ্বল সম্ভাবনা প্রকাশ করে। তবে এই বৃদ্ধিকে স্থায়ী করতে হলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোগও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উৎসবের কর্মসংস্থানকে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের রূপ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।a

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News