কলকাতা: ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আজ, ৩ মার্চ থেকে শুরু হতে চলেছে। এ বছরই পুরনো সিলেবাসের শেষ পরীক্ষা৷ আগামী বছর থেকে শুরু হবে সেমেস্টার সিস্টেম। যদিও এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে গিয়েছে৷ তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরীক্ষার কাঠামোতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে৷
এ বছর রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লক্ষ ৯ হাজার। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৯০ হাজারের কাছাকাছি। সংসদ সূত্রে খবর, ২০২৩ সালে উত্তীর্ণদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে গিয়েছে। তবে, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই বছর ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রদের তুলনায় ৪৫ হাজার ৫৭১ জন বেশি।
এই বছর মোট ৭৯৮টি পরীক্ষাকেন্দ্রে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে৷ যার মধ্যে ১৩৬টি কেন্দ্রকে বিশেষভাবে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টা থেকে৷ শেষ হবে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে৷
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে। নকল করা রুখতে বেশ কয়েকটি কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে সংসদ। বলা হয়েছে, এই বছর পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকবে মেটাল ডিটেক্টর৷ পুরো পরীক্ষাকেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় থাকবে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে ২৫ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ১ জন করে গার্ড নিযুক্ত থাকবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টুকলি করা থেকে রোখা যাবে বলেই আশাবাদী সংসদ৷
এছাড়াও বলা হয়েছে, পরীক্ষাকেন্দ্রে স্মার্ট ওয়াচ বা অন্য কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না৷ যদি কোনও পরীক্ষার্থী এমন যন্ত্র নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন, তাহলে তার পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে৷ ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬২টি বিষয়ের পরীক্ষা হবে। গত বছর এটি ছিল ৬০টি। নতুন দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে— এআরটিআই (আরটিআই আইন) এবং ডেটা সায়েন্স। এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য রয়েছে।
এছাড়া, পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিট আগে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খোলা হবে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্রের সেট তৈরি করা হয়েছে, এবং তা শুধুমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে খোলা হবে। এই পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
যদিও শিক্ষাবোর্ড নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে, তবুও রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা রয়েই গিয়েছে৷ ৩ মার্চ থেকেই রাজ্যের বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে তারা রাজ্যজুড়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের আয়োজন করেছে। তবে, শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পরীক্ষার সময় কোনো ধরণের ব্যাঘাত না ঘটানোর জন্য তারা পুরোপুরি প্রস্তুত।
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নতুন সিলেবাসের অন্তর্ভুক্তি এবং প্রশ্নপত্র খোলার পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় যথাযথভাবে তাদের যোগ্যতা প্রদর্শন করার সুযোগ প্রদান করবে। একই সঙ্গে, সেমেস্টার সিস্টেমের প্রস্তুতির জন্যও শিক্ষাবোর্ড তাদের কার্যক্রমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। সুতরাং, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এবং ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এই পরিবর্তনগুলোর সুফল পাবে।