বর্তমানে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ট্যাব কেলেঙ্কারি। ট্যাবের টাকা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে যাওয়া নিয়ে যেভাবে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে বর্তমানে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। আর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এরকম বেনিয়মের অভিযোগের মুখে পড়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। এ কারণে রাজ্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শিক্ষা দফতরকে নতুন নির্দেশনা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের (Lakshmi Bhandar Model) পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নবান্নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্যাব বা অন্য কোনও জনমুখী প্রকল্পে অর্থ প্রদান করতে গিয়ে যাতে আর কোনও দুর্নীতি বা বেনিয়মের ঘটনা না ঘটে সেজন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের (Lakshmi Bhandar Model) সাফল্যকে একটি ‘মডেল’ হিসেবে অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শাসকদলের নেতাদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পই তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্বাচনী রাজনীতিতে সাফল্য এনে দিয়েছে।
শুক্রবার থেকেই রাজ্যে শীতের আমেজ, তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে
এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাধারণ মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে এবং এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেনি। শিক্ষাক্ষেত্রে ট্যাব কেনার টাকার মতো প্রকল্পে যাতে একই ধরনের সাফল্য এবং স্বচ্ছতা বজায় থাকে তার জন্য শিক্ষা দফতরকে এই মডেল অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ বৈঠকে শিক্ষা দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন যে, শিক্ষা দফতরের ট্যাব প্রদান প্রকল্পে যাতে কোনও ধরনের বেনিয়ম বা দুর্নীতি না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ সরকারের ভাবমূর্তি এই ধরনের প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে তৈরী হয়। তাই যদি কোন প্রকল্পে অর্থ প্রদান প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয় তার দায় রাজ্য সরকারকেই বহন করতে হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে অপরিবর্তিত পেট্রোলের দাম
রাজ্য সরকার মনে করছে, ট্যাব দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নাম এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য পোর্টালে নথিভুক্ত করাটা ঠিক হলেও আধার কার্ড সংযুক্ত না থাকার কারণে অনেক সময় সমস্যা দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে যেমন প্রতিটি আবেদনকারী মহিলার আধার কার্ড নম্বর বাধ্যতামূলকভাবে নেওয়া হয়, তেমনই শিক্ষাক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থা চালু করলে প্রকল্পের কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
স্কুল শিক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সময় আধার কার্ড নম্বর সংগ্রহ করা হয় এবং স্কুলের কাছে ওই তথ্য থাকে। ফলে পোর্টালে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত করা হলে অর্থ প্রদান প্রক্রিয়া আরও নির্ভুল এবং স্বচ্ছ হবে। তাছাড়া বর্তমানে ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও আধার কার্ড নম্বর সংযুক্ত থাকে যার ফলে আর্থিক বেনিয়ম আটকানো সহজ হবে।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, ভারতীয় করনীতি ও বিশ্ববাজারের প্রভাব
এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি মহিলার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং একটিও ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েনি। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রকল্পটি চললেও কোনও ধরনের বেনিয়মের অভিযোগ আসেনি। তাই এই মডেল অনুসরণ করার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নবান্নের পরামর্শ অনুযায়ী, শিক্ষাদপ্তরকে আরও সচেতন হয়ে এবং লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সফল দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আগামী বছর থেকে ট্যাব কেনার জন্য দেওয়া অর্থের বিষয়ে কোনও দুর্নীতি বা ভুল যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় ট্যাব পাবে এবং রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তিও বজায় থাকবে। রাজ্য সরকারের এই নতুন নির্দেশনা এবং লক্ষ্য আগামীতে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও কার্যকর এবং স্বচ্ছতা পূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণে সাহায্য করবে। এতে শুধু শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে না রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তিও আরও শক্তিশালী হবে।