Tarun Majumdar: উত্তমকুমারকে নিয়ে তরুণ মজুমদার টিনের তলোয়ার করতে চেয়েছিলেন

গণদেবতা ছবিটা করার পর তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar ) কিছুদিন কাজ থেকে বিশ্রাম নিয়ে অন্য ভাবে সময় কাটাচ্ছিলেন৷ অন্য ভাবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া নাটক…

tarun majumdar

গণদেবতা ছবিটা করার পর তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar ) কিছুদিন কাজ থেকে বিশ্রাম নিয়ে অন্য ভাবে সময় কাটাচ্ছিলেন৷ অন্য ভাবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া নাটক কিংবা ক্রিকেট ম্যাচ দেখা এই সব আর কি৷ সেই সময় একদিন তিনি রবীন্দ্র সদনে উৎপল দত্তের টিনের তলোয়ার নাটকটি দেখেন৷ বেশ মনে দাগ কেটেছিল তাঁর ফলে কয়েক দিনের মধ্যে আরও দুবার নাটকটি দেখে ফেললেন৷ কারণ মনের মধ্যে একটা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল এই নাটক নিয়ে ছবি করা যায় কি না? শেষবার এক প্রযোজক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে নাটকটি দেখতে যান তরুণবাবু৷

জন্মসূত্রে উত্তর প্রদেশের লোক তবে বাংলায় ব্যবসা বলে ওই প্রযোজক বন্ধুটি কিছুটা বাংলা বোঝেন। নাটক শেষ হতেই তাঁকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতে আসতে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এমন একটা বিষয় নিয়ে ছবি হতে পারে কি না? উৎসাহ নিয়ে তিনি জবাবে জানান ছবিটি করতে চান ৷ সবুজ সংকেত পাওয়ার পর চিত্রস্বত্ব নেওয়ার জন্য তরুণবাবু উৎপল দত্তের বাড়ি যান৷ এমন প্রস্তাব শুনে তিনি তো একেবারে মাইকেলিয় ভঙ্গিতে জানিয়েদেন, ইহা অপেক্ষা অধিক তর সুখ- সংবাদ এ ধরনীতে আর কী সম্ভবে! পাশাপাশি তরুণবাবু আর একটা বিষয় মাথায় এসেছিল সেটা হল এই ছবির চিত্রনাট্য যদি উৎপল দত্তকে দিয়ে লেখানো যায় তাহলে বেশ হয়৷ তিনি উৎপলবাবুকে সেই অনুরোধ করলে তিনি অবশ্য ওই কাজে রাজী হলেন না৷ তবে কথা দেন, নাটকটির একটা সাইক্লোস্টাইল কপি উনি দু’-দিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেবেন এবং সেটা তিনি দিয়েছিলেনও।

অগত্যা তিনি নিজেই চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু করলেন, পাশাপাশি প্রোডাকশনের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে—স্টুডিওর অফিসে লোকজনের যাতায়াত বেড়ে গেল। মানে উনি যে টিনের তলোয়ার’ ছবি করছেন সেটা এক প্রকার চাউর হয়ে গেল৷ এদিকে সরাসরি নয় একটা উড়ো খবর এল উত্তমকুমার নাকি ‘টিনের তলোয়ার’-এ বীরকৃষ্ণ দাঁ- এর চরিত্রটা অভিনয় করতে আগ্রহী। অবাক লাগল কারণ বীরকৃষ্ণ দাঁ ‘টিনের তলোয়ার’- এর মুখ্য চরিত্র নয়। বরং ভাঁড় আর ভিলেনের মিশ্রণে এক অনবদ্য জগাখিচুড়ি। খামোকা উত্তম এমন চরিত্র কেন করবেন? নায়ক হিসেবে যার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। সেখানে এমন একটা ক্যারেক্টার এক্টরের ভূমিকায় নামতে ওঁর কী দায় পড়েছে? এই রকম গুজবটা যদি মিথ্যে হয় আর কোনওরকমে সেটা উত্তমকুমারের কানে যায়, তাহলে অকারণে একটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।

এই ঘটনার সময়ে একদিন স্টুডিওতে উত্তমকুমার এবং তরুণ মজুমদার মুখোমুখি দেখা হয়৷ তখন কিছুক্ষণ এ কথা সে কথা হওয়ার পর ‘টিনের তলোয়ার প্রসঙ্গ ওঠে৷ বোঝা যায় নেহাৎ গুজব নয় ব্যাপারটা সত্যি৷ কারণ উত্তমকুমার জানান, নায়ক- টায়ক অনেক হল জীবনে। এবার টোট্যালি অন্যরকম। ভিলেন, ভীতু, মেরুদণ্ডহীন,খেয়ালি—যত রকম উল্টোপাল্টা ক্যারেক্টার আছে—সব করবেন। বাইরে নয়, নিজের কাছে প্রুভ করবেন—তিনিই পারেন। তরুণ মজুমদারও জানিয়ে দেন-ব্যস আর কথা নয়। ধরে নিন বীরকৃষ্ণ দাঁ আপনিই। খবরটা ছড়াতে লাগল হু হু করে।

প্রযোজক ভদ্রলোক তো উত্তেজনায় ছটফট করছেন। বারবার বলতে থাকেন, লোহা গরম থাকতে থাকতে এগ্রিমেন্ট পেপারটা সই করিয়ে নিন। বড়-বড় স্টারদের ব্যাপার। হঠাৎ যদি কোনও কারণে মতি পাল্টে যায়, তার আগেই সব কিছু পাকা করে নেওয়া উচিত ? এর পর কাজ করার জন্য কাগজপত্রেও সই করে দেন তিনি৷ শুধু তাই নয় এর পর মাঝে মাঝেই ফোনে উত্তমকুমার জানতে চাইতেন চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে কি না,সংলাপের পাতাগুলি ও পাওয়া যাবে কি না, ওঁর রূপসজ্জা কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন তরুণ মজুমদার তাঁকে জানান- ক’টা দিন একটু ধৈর্য ধরুন। চিত্রনাট্যের শেষ কয়েকপাতা লেখা হলেই যোগাযোগ করব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার কয়েকদিনের মধ্যেই উত্তমকুমারের মৃত্যু হয়৷ ফলে সেইমতো কাজ আর হলো না৷