Jyoti Basu: জ্যোতি বসুর ছোটবেলার কিছু অজানা কথা

একেবারে ছোটবেলায় জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu) পরিবার এক সময় ভাড়া থাকতেন কলকাতায় যেখানে এলিট সিনেমা তার উল্টো দিকের বাড়িটিতে ৷ ওই বাড়ির মালিক ছিলেন নলিনীরঞ্জন…

Jyoti Basu

একেবারে ছোটবেলায় জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu) পরিবার এক সময় ভাড়া থাকতেন কলকাতায় যেখানে এলিট সিনেমা তার উল্টো দিকের বাড়িটিতে ৷ ওই বাড়ির মালিক ছিলেন নলিনীরঞ্জন সরকার। তিনি আবার হিন্দুস্থান ইনস্যুরেন্সের মালিক। ওঁনার বাবা দেশে ফিরে ডাক্তারি শুরু করেছিলেন সেখানে। ওই বাড়িটিতে জ্যোতি বসুর বাবার চেম্বার ছিল যেখানে সেখানে এখন আমিনিয়া হোটেল। বেশ কয়েক বছর তাঁর কেটেছে ওই বাড়িটিতে ।

কিন্ডারগার্টেনে ওঁনাকে ভর্তি করা হয়েছিল লরেটোতে। ওনার থেকে আট বছরের বড় দিদিও লরেটোতেই পড়তেন এবং এক। খুড়তুতো বোনও সেখানে পড়তেন। তবে ঐ স্কুলে ফার্স্ট স্ট্যান্ডার্ড থেকে কোনো ছেলেকে ভর্তি করত না। তখন ওটা সম্পূর্ণ মেয়েদের স্কুল। ওই সময় ওঁনার বাবা চেষ্টা করলেন সেন্ট জেভিয়ার্সে ভর্তি করাতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানালেন, সে বছরের মতো অ্যাডমিশন কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। নামটা লিখিয়ে রাখতে পরের বছরের জন্য। তখন ওঁনার বাবা চেষ্টা করলেন মিডলটন রোডের লরেটোতে। ঐ স্কুলের মাদার ইনচার্জও জানালেন, ফার্স্ট স্ট্যান্ডার্ডে ওঁরা ছেলেদের ভর্তি করেন না। তখন ধর্মতলার লরেটোতে যোগাযোগ করা হল। সেখানে মাদার ইনচার্জ অবস্থাটা বুঝে জ্যোতি বসুকে নিয়ে নিলেন। ফলে তখন ঐ ক্লাসে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছেলে। বাকি সব পড়ুয়াই মেয়ে। ওঁনার বাবা বলেছিলেন, শুধু শুধু একটা বছর নষ্ট করবে কেন? বরং ওখানেই পড়ুক। পরের বছর তিনি ভর্তি হলেন সেন্ট জেভিয়ার্সে সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডে।

১৯৩০ সালেই একদিন শুনলেন সুভাষ বসু অক্টরলোনি মনুমেন্টে (শহিদ মিনার ময়দান) ভাষণ দেবেন। ১৫-১৬ বছরের জ্যোতি বসু এবং তাঁর এক জ্যাঠতুতো ভাই ঠিক করলেন সেখানে যাবেন। তাঁরা তখন খদ্দর পরতেন না। কিন্তু সেদিন একটা আবেগ পেয়ে বসল। দুই ভাই খদ্দর পরে সেখানে গেলেন। সেখানে ঘোড়সওয়ার পুলিস, লাঠিধারী পুলিস, সার্জেন্টে মিলে গোটা তল্লাট রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল৷

পুলিশের দু-এক ঘা লাঠি পড়ল পিঠে ৷ বাড়িতে এসে মাকে বলতে মা চুন হলুদ লাগিয়ে দিলেন। সেটাই বোধহয় ছিল রাজশক্তির বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ।

লন্ডনে পড়তে গিয়ে ভারতীয় ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তোলেন লন্ডন মজলিশ। জ্যোতি বসুই ছিলেন তার প্রথম সম্পাদক। ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে মত গঠন করা এবং চাঁদা সংগ্রহ ছিল মূলত তাঁর কাজ। সেখানে পুনর্গঠিত হলো ব্রিটেনের ভারতীয় ছাত্রদের ফেডারেশন। তারই মুখপত্র ‘ভারতীয় ছাত্র ও সমাজতন্ত্র’ প্রকাশ পেতে থাকল। লন্ডন মজলিশের অন্যতম একটি কাজ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ লন্ডনে এলে তাঁদের সংবর্ধনা জানানো। এইভাবেই তাঁরা জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীমতী বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের (সি এস পি) নেতা ইউসুফ মেহের আলি প্রমুখকে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন।

ইন্ডিয়া লিগের নেতা কৃষ্ণ মেননই নেহরুর সঙ্গে জ্যোতি বসুর প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। লন্ডনে নেহরুর বাসস্থানে কৃষ্ণ মেনন তাঁকে নিয়ে যান। সেখানে তিনি নেহরুকে বলেন, ‘‘আমরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী।’’ নেহরু উত্তরে বলেন, ‘‘আমাদের সামনে এখন প্রধান কাজ ভারতের জন্য স্বাধীনতা অর্জন। এ বিষয়ে তোমরা আমার সঙ্গে একমত কি?’’ সেদিন জ্যোতি বসু বলেছিলেন , ‘‘আমরা একমত।’’ তিনি সেদিন নেহরুকে সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত হবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷

আবার সুভাষচন্দ্র বসু যখন ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলেন, তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন লন্ডন মজলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে এক অভিনন্দনবার্তা পাঠাবার। স্থির হয়, লন্ডনের একটি হলে সমাবেশ করা হবে। সেখানে তাঁরা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে ফিরোজ গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানান। ফিরোজ গান্ধী বলেন, তাঁর সমর্থন আছে, তিনি সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন ৷ ওই সমাবেশে তিনি এসেছিলেন তবে কোনও ভাষণ দেননি। সেদিনের অনুষ্ঠানে দুজন বক্তা ছিলেন- এন কে কৃষ্ণাণ আর জ্যোতি বসু। সমাবেশ থেকে সুভাষচন্দ্র বসুকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছিল।

  • তথ্যঋণ
    যতদূর মনে পড়ে: জ্যোতি বসু