কোজাগরী চাঁদ ঢেকেছিল মেঘে, তিস্তার বানে লক্ষ্মীপূজার রাতে জলপাইগুড়িতে ছিল মৃত্যুমিছিল

হাহাকার চলছে (Malbazar) মালবাজারে। মাল নদীর হড়পা বানে (Malbazar Flash Flood) দুর্গাপূজার বিসর্জন হয়েছে বিষাদময়। ঠিক কতজন ভেসে গেছেন তার সঠিক হিসেব নেই জলপাইগুড়ি  (Jalpaiguri)…

কোজাগরী চাঁদ ঢেকেছিল মেঘে, তিস্তার বানে লক্ষ্মীপূজার রাতে জলপাইগুড়িতে ছিল মৃত্যুমিছিল

হাহাকার চলছে (Malbazar) মালবাজারে। মাল নদীর হড়পা বানে (Malbazar Flash Flood) দুর্গাপূজার বিসর্জন হয়েছে বিষাদময়। ঠিক কতজন ভেসে গেছেন তার সঠিক হিসেব নেই জলপাইগুড়ি  (Jalpaiguri) জেলা প্রশাসনের কাছে। যেমন পাঁচ দশক পার করলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কোনও তথ্য মিলবে না তিস্তার ভয়াবহ বন্যার। অর্থনীতির বিশ্নেষণে উঠে আসে সেই বন্যায় (Jalpaiguri Flood 1968) জলপাইগুড়ির আর্থিক মেরুদণ্ড যেভাবে ভেঙে গেছে তার মেরামতি সম্ভব হয়নি। লক্ষ্মীপুজোর দিনে তিস্তা (Teesta) তেড়ে এসেছিল অলক্ষ্মীর রূপ নিয়ে। করলা (Karala River) নদী দিয়েছিল ছোবল।

ভারতের বন্যা ইতিহাসে ১৯৬৮ সালের তিস্তা-করলার ভয়াবহ বন্যা অতি উল্লেখযোগ্য। এমন বন্যা বিপর্যয় পরবর্তীতে বারবার ১৯৭৮ সালের দামোদর, অজয়, দারকেশ্বর, ময়ুরাক্ষীর ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় হয়।

বুধবার জলপাইগুড়ি জেলারই মালবাজারে যে হড়পা বান এসেছিল তার পর থেকে আটষট্টির তিস্তা-করলা বন্যার ভয়াল স্মৃতি উস্কে উঠেছে। অভিযোগ, পাঁচ দশক আগে যে নাব্যতা ছিল করলা নদীর তার অর্ধেকের বেশি কমে গেছে এখন। কোনও কারণে বিরূপ প্রকৃতি যদি তিস্তাকে তেমন রুষ্ট করে দেয় তাহলে জলপাইগুড়ি শহরে আবার বিপর্যয় নামবে।

কোজাগরী চাঁদ ঢেকেছিল মেঘে, তিস্তার বানে লক্ষ্মীপূজার রাতে জলপাইগুড়িতে ছিল মৃত্যুমিছিল

মেঘে ঢাকা কোজাগরী চাঁদের রাতে করলা ভেঙেছিল জল-শহর

জলপাইগুড়ির এক ডাক নাম জল-শহর। উত্তরবঙ্গের তথা রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক জনপদ। পাঁচ দশক আগের ১৯৬৮ সালের ৪ অক্টোবর। সেদিন কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা। দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। জল-শহরবাসী উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন তিস্তার রোষ। তীর ছাপিয়ে হু হু করে জল ঢুকছে জল-শহরে। দিন গেল উদ্বেগে। কালো মেঘের আড়ালে ঢেকে গেল কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ। বাড়ল বৃষ্টির দাপট। ইতি উতি ভেসে আসল শঙ্খধ্বনি। থেকে থেকে ভয়, কী জানি কী হয়।

Advertisements

সন্ধে হতেই তিস্তার জল ঢুকছে জল-শহরে। জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা যে যেমন পারছেন উঁচু জায়গায় উঠছেন।  সন্ধে থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়েছিল জলপাইগুড়ি শহর। তিস্তার তোড়ে একসময় উপচে গেল করলা। ভাঙল করলার সেতু। ততক্ষণে জলপাইগুড়ি ডুবতে চলছে জলের তলায়।

ভারতের বন্যা ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে এই বিপর্যয়। এত কম সময়ে একটি শহর তলিয়ে যেতে পারে তা ভাবা যায়নি। পাঁচ দশক আগের সেই জলপাইগুড়ি অনেক আটপৌরে, ছিমছাম। তিস্তা-করলার সেই বন্যায় একেবারে লক্ষ্মীছাড়া চেহারা হয়ে গেছিল। সে রাতেই জলপাইগুড়ি ডুবে যায়। বন্যার মাঝে, অন্ধকারে জীবন বাঁচাতে যে যেমন পেরেছিলেন চেষ্টা করেছিলেন। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল জলের তলায়। বহু রোগী ডুবে মারা যান। ৫ অক্টোবর ভয়াবহ দৃশ্য সামনে আসে। এ যে মৃতদের শহর! জলে ভাসছে সারি সারি মানুষের দেহ, গোরু মোষ কুকুর। টাটকা মাংস খেতে উড়ে আসছে শকুন। বীভৎস পরিবেশ। জল নামার পরে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি।

কোজাগরী চাঁদ ঢেকেছিল মেঘে, তিস্তার বানে লক্ষ্মীপূজার রাতে জলপাইগুড়িতে ছিল মৃত্যুমিছিল

তিস্তা-করলার সেই বন্যা একটি ভয়াল স্মৃতি। লক্ষ্মীপূজা এলে জলপাইগুড়ি শহরে উঁকি দেয় সেই ভয়। মালবাজারের মর্মান্তিক বিসর্জন বিপর্যয়ের পর আরও বড় করে ফিরে এসেছে সেই স্মৃতি। আসছে লক্ষ্মীপুজো কী জানি কী হয়!