Mirzapur:পুলিশের সামনেই চলছিল গুলি…ওয়েব সিরিজ নয় রিয়েল মির্জাপুরের রানি ফুলনদেবী (১)

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বারাণসীর চুনার দুর্গের ঝরোখা থেকে নিচে  বহমান গঙ্গার ঘোলা জলের ওপারটা অন্যরকম। হাজার বছরের পুরনো জীবন্ত কাশীর কাছে ম্লান একটি জনপদ-মির্জাপুর (Mirzapur) ওই…

Mirzapur Mirzapur:পুলিশের সামনেই চলছিল গুলি...ওয়েব সিরিজ নয় রিয়েল মির্জাপুরের রানি ফুলনদেবী (১)

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বারাণসীর চুনার দুর্গের ঝরোখা থেকে নিচে  বহমান গঙ্গার ঘোলা জলের ওপারটা অন্যরকম। হাজার বছরের পুরনো জীবন্ত কাশীর কাছে ম্লান একটি জনপদ-মির্জাপুর (Mirzapur) ওই দিকে রয়েছে। গঙ্গার তীরে উত্তর প্রদেশের অদ্ভুত শহর। ওয়েব সিরিজের শ্লীল-অশ্লীলের বেড়া পেরিয়ে চলুন ভারতের গালিচা রাজধানীতে যাই কিছু ভয়-কে সঙ্গী করে। বারাণসীর নিকটস্থ মির্জাপুর। তবে আমাদের ঘুরে আসতে হবে লুটিয়েনসের দিল্লি।

রিল বনাম রিয়েল মির্জাপুর kolkata 24×7 প্রকাশ করছে আসল মির্জাপুরের কাহিনী। 

   

গুলিতে রক্তাক্ত ফুলন দেবীর দেহ পড়েছিল। দেশ ততক্ষণে তোলপাড়। নয়াদিল্লির সাংসদ আবাসের সামনেই ভয়ঙ্কর অপারেশন হয়ে গিয়েছে। পরপর গুলির শব্দে দিল্লির রাজনৈতিক মঞ্চে ভয়ের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছিল। নিহত চম্বল উপত্যকার কিংবদন্তি ‘দস্যুরানি’।  যাঁর হাতের বন্দুক বারবার গণধর্ষণের ‘বদলা’ নিতে ধর্ষক উচ্চবর্ণের জীবন নিয়েছে, সেই সাংসদ ফুলন শেষ হয়ে গেলেন গুলিতেই।

দলিত ফুলন দেবী গণধর্ষিতা। বদলা নিতে গিয়ে তিনি হয়েছিলেন গণহত্যাকারী। চম্বল নদীর ঘোলা জলের নিশ্চিত আহ্বান ‘বদলা’। এই ডাক উপেক্ষা করা কঠিন। উত্তর প্রদেশের মির্জাপুরের সাংসদ ফুলন দেবীও বদলার শিকার। ২০০১ সালের ২৬ জুলাই এমনই তারিখ। 

উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের আন্তঃরাজ্য সীমানায় বিশ্বের অন্যতম খণ্ডহর ভূমি বৈশিষ্ট্য ছড়িয়ে আছে। এর নাম বেহড়। চম্বল ও কুঁয়ারি নদী ঘেরা এলাকার ‘বেহড়’ মানে গিরিখাদ ভরা জটিল ভূমিরূপের গোলকধাঁধা। পথ হারানো নিশ্চিত। সেই পথে যে হারায় তার পরিণতি ‘বাগী’ মানে বিদ্রোহী। চম্বল উপত্যকার বাগী গোটা দুনিয়ার কাছে ডাকাত। সেই তালিকায় দুই কিংবদন্তি পুতলিবাঈ ও ফুলন দেবী। দু’জনের জীবন কেড়ে নিয়েছিল কয়েকটা বুলেট। 

বাগী হতে চায়নি ফুলন। কেউ চায়ও না। পরিস্থিতি বাগী তৈরি করে দেয়। বেহমই গ্রামে উচ্চবর্ণের রাজপুতরা পালা করে দলিত দেবিদিনের দুলারি ফুলনকে গণধর্ষণের অট্টহাসিতে ভরিয়ে দিয়েছিল গ্রাম। ধর্ষকদের স্ত্রী কন্যারা জানে এটাই রীতি। এরকম হয়েই থাকে। মেনে নিতে না পারলেও প্রবল পুরুষতান্ত্রিক চাপে নীরব সমর্থন থাকে। ফুলনকে ধর্ষণ করা হচ্ছিল। তার চিতকারের মধ্যেই নিশ্চিন্তে রুটি তৈরি করছিলেন ধর্ষকদের ঘরের বউ বেটিরা। প্রতিশোধ নিতে বন্দুক নিয়ে একদিন বাগী হয়ে বেহমইতে ঢুকেছিল ফুলন। ১৯৮১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গুলিতে রক্ত নদী পুরো বেহমই গ্রাম। ২০ জন ধর্ষকের জীবন হাসতে হাসতে নিল ফুলন। দুনিয়া জানল ‘চম্বলের দস্যুরানি’ (Bandit Queen) ফুলন দেবীর জন্মকথা।

বেহমই গ্রামে নিম্নবর্ণের যুবতী ফুলন তারপর আদতেই ‘ত্রাস’।  গণহত্যার ভয়াবহ পটভূমিতে ডাকাত সাম্রাজ্য ছেড়ে একদিন রাজনৈতিক দুনিয়ায় ভয়াল আত্মপ্রকাশ সবই ঘটেছিল। সেই কথা ছড়িয়ে আছে গঙ্গা তীরের অতি আলোচিত মির্জাপুরে। জীবন এখানে গঙ্গার মতো বহমান। সেই বহতা স্রোতের নাম ফুলন দেবী। 

“एक इशारा ही, हाँ इशारा ही…”

কালো, খর্বকায়া, গোলগাল ফুলন দেবী যেদিন সাদা গাড়ি থেকে হাত জোড় করে নামলেন মির্জাপুরে সমাজবাদী পার্টির জনসভা মঞ্চের সামনে, কেঁপে গেল জেলা প্রশাসন। খোদ সপা প্রধান যদুকুলপতি মুলায়ম সিংয়ের আশীর্বাদ নিয়ে জনতার ভিড়ে অতি উজ্জ্বল ফুলন। সবাই জানল ভোটে জয় নিশ্চিত। 

মঞ্চে বসে থাকা সপা দলের উচ্চবর্ণের নেতৃত্বের দিকে একটু বাঁকা চোখে তাকালেন ফুলন। তারপর সেই অদ্ভুত হাসি। ফুলন দেবী কি জয় য় য় য় য়…গগন বিদারী স্লোগানে ঢেকে গেল মির্জাপুর। সমর্থকরা বন্দুক নিয়ে নাচানাচি করছে। দূরে দাঁড়িয়ে উত্তর প্রদেশ পুলিশের তাবড় তাবড় কর্তারা। এদের কয়েকজন তো দিনরাত এক করে চম্বলের বেহড়ে রিভলভার হাতে একসময় তাড়া করেছেন ফুলন দেবীকে। তাদেরই সামনে ফুলন দেবী তখন ‘ম্যাডাম ফুলন’ নামে পুলিশ ভ্যান থেকে ঘনঘন ওয়াকিটাকি বার্তা যাচ্ছে আসছে। 

১৯৮৩ সালে আত্মসমর্পণের এক যুগ পরে ১৯৯৬ সালে প্রকাশ্যে ‘দস্যুরানি’কে দেখল গোটা বিশ্ব। সে এক রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত। জাতীয়স্তরে জোট রাজনীতির ঝড় চলছিল। সেই রাজনীতির এক রঙিন চরিত্র মুলায়ম সিং যাদব। তিনি ফুলনকে ভোটের রঙ্গমঞ্চে নামালেন।

মির্জাপুর সেই শহর। (চলবে)