নিউজ ডেস্ক: একটা সময় পর্যন্ত কলকাতার অলিগলিতে তো বটেই, বাংলার প্রায় সব মফঃস্বল শহরেও গোপনে বিক্রি হত ‘চটি বই’৷ আদি রসাত্মক গল্পের সেই বইগুলো লেখা হত ছদ্মনামে৷ চটি বইয়ের বাইরে ‘অপরাধ’, সত্যকাহিনি’, ‘দফা ৩০২’ -এর মতো নিরীহ নামের কিছু ‘পিনআপ’ ম্যাগাজিনও ছিল, যেগুলো প্রকাশের উদ্দেশ্যই ছিল নারীদেহ এবং যৌনকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়ে পাঠক মনে যৌন উদ্দীপনা জাগানো৷ এছাড়া বড় শহরগুলোয় ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনও পাওয়া যেত৷
ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার, অর্থাৎ ভিসিআরের এখন আর কোন চিহ্নই থাকবে না৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে জাপানে তৈরি হয় বিশ্বের সর্বশেষ ভিসিআর৷ মানে বিশ্বের কোথাও আর কখনও ভিসিআর তৈরি হবে না ও হচ্ছে না৷ বাংলায় পর্নোগ্রাফির বিস্তারে এই ভিসিআর একসময় খুব বড় ভূমিকা রেখেছে৷ সিনেমা হলে না গিয়ে ঘরে বসে হিন্দি, ইংরেজি ছবি দেখা শুরু হয়েছিল ভিসিআর দিয়ে৷ একটি চক্র তখন নানা জায়গায় গোপনে ‘ব্লু ফিল্ম’-ও দেখাতে শুরু করে৷
দেশের কিছু প্রেক্ষাগৃহে হলিউডের মুভি দেখানো হত৷ এক সময় ঘোষিত মুভির ফাঁকে ফাঁকে দেখানো শুরু হয় ‘ব্লু ফিল্ম’৷ এই প্রবণতা অন্য হলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে৷ বাংলা ছবির ফাঁকে ফাঁকে দেখানো শুরু হয় ‘কাট পিস’, অর্থাৎ নীল ছবির অংশ বিশেষ৷
কম্পিউটারের আসার পর থেকে অল্প অল্প করে কমপ্যাক্ট ডিস্ক, অর্থাৎ সিডিতেও ঢুকে পড়ে নীল ছবি৷ সেই ছবি পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে৷ সিডির পর এল ডিজিটাল ভার্সেটাইল ডিস্ক, অর্থাৎ ডিভিডি৷ ভার্সেটাইল ডিস্ক দেশে জ্ঞান এবং সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে নিঃসন্দেহে ‘ভার্সেটাইল’ ভূমিকাই রাখছে, তবে পাশাপাশি যে পর্নোগ্রাফির ধারক, বাহক হিসেবেও এর একটা পরিচিতি গড়ে উঠেছে তা-ও অস্কীকার করা যাবে না৷
গত কয়েক বছরে দেশে ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বিষ্ময়কর হারে বেড়েছে৷ সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে এক এমবি-র ছবি ডাউনলোড করতে সময় লাগত প্রায় সাত মিনিট। ২০০০ সালে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৫৫ লাখ। আর এখন সেটা ৭০ কোটি। ২০১২-১৩ সালেও ৩০ এমবি থ্রিজি ইন্টারনেট পাওয়ার জন্য ১০ থেকে ১২ টাকা দিতে হত। কিন্তু ২০১৬ সালে জিও আসার পর দেশে ইন্টারনেট পরিষেবার ছবিটাই বদলে গেল। শুরুর দিকে দেশবাসীকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়েছিল জিও।
ইন্টারনেটের অপব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে৷ পর্নোসাইটের দৌরাত্ম এত ভয়াবহভাবে যে, সম্প্রতি পর্নোগ্রাফি ও আপত্তিকর কন্টেন্ট প্রকাশ বন্ধের উদ্যোগ হিসেবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বহু পর্নোসাইট বন্ধ করেছে৷
ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল ডেটার তথ্যে গিয়েছে, ভারতের শহরের থেকে গ্রামীণ এলাকায় ১০ শতাংশ সার্চ হয়েছে। শহরাঞ্চলের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেখানে ২০.৫ কোটি, সেখানে গ্রামীণ এলাকার ২২.৭ কোটি বলে সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে৷ ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০.৪ কোটি, চিনের কাছে তা দ্বিতীয়। চিনে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যার সংখ্যা ৮৫০ কোটি৷ ফলে মোবাইলই হয়ে উঠেছে পর্নোগ্রাফির সবচেয়ে বড় উৎস৷ এখন হাতে হাতে মোবাইল৷ তাই পর্নোগ্রাফি ও আপত্তিকর কন্টেন্টও হয়ে উঠেছে সহজলভ্য৷
একটি হিসেব বলছে, দেশে প্রতি ১২ সেকেন্ডে অন্তত একটি করে নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে৷ নতুন অ্যাকাউন্টগুলোর উল্লেখযোগ্য একটি অংশই ‘ভুয়ো’৷ এভাবে কিছু লোক ফেসবুক, টুইটারেও নানা ধরণের অপতৎপরতা চালাচ্ছে৷ এর ফলে সোস্যাল সাইটের মাধ্যমেও পর্নোগ্রাফির বিস্তার বাড়ছে হু হু করে৷ এই অবাধ ব্যবহারের ফলে বাড়ছে নীল ছবি তৈরি৷ এক সময় দক্ষিণের বি-গ্রেড ছবিতে অল্প বিস্তর খোলামেলা দৃশ্য থাকত৷ ইংরেজি নীলছবির মতো খোলামেলা হত না৷
কিন্তু, এই মোবাইল ব্যবহারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট করার সুবিধার কারণে এখন বাংলা, হিন্দিতে চলছে নীলছবি তৈরি৷ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েব সিরিজের দৌলতে নীল ছবির বাড়-বাড়ন্ত৷ আর তাকে কাজে লাগাচ্ছেন রাজ কুন্দ্রার মতো নীল ছবি নির্মাতারা৷