কলকাতা, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫: কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘোষিত এই কমিশনটি ২০২৬ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এতে প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর বেতন, ভাতা এবং পেনশনের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, পেনশনভোগীদের দীর্ঘদিনের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন মুদ্রাস্ফীতির কারণে পেনশনের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, পেনশন সংশোধনের বিলম্ব, এবং পেনশন সংক্রান্ত প্রশাসনিক জটিলতা, এই কমিশন কতটা সমাধান করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
Also Read | অন্য UPI ID-তে ভুলে চলে গিয়েছে টাকা? জেনে নিন কীভাবে ফেরত পাবেন
পেনশনভোগীরা দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রথমত, মুদ্রাস্ফীতির কারণে তাদের পেনশনের প্রকৃত মূল্য ক্রমাগত কমছে। উদাহরণস্বরূপ, সপ্তম বেতন কমিশনের অধীনে ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় এই পরিমাণ অপ্রতুল। দ্বিতীয়ত, পেনশন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় বিলম্ব এবং প্রশাসনিক জটিলতা। অনেক পেনশনভোগী তাদের পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া বা সংশোধনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে বাধ্য হন। তৃতীয়ত, কমিউটেড পেনশন পুনরুদ্ধারের সময়কাল, যা বর্তমানে ১৫ বছর, অনেক পেনশনভোগীর জন্য অসুবিধাজনক। এছাড়া, প্রাক-২০১৬ এবং পোস্ট-২০১৬ পেনশনভোগীদের মধ্যে সমতা বজায় রাখার বিষয়টিও বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৫ সালের ফিনান্স বিলে সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসেস (CCS) পেনশন নিয়মে সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেস এবং অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC)-এর মতো সংগঠন দাবি করেছিল যে ২০২৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীরা অষ্টম বেতন কমিশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তবে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ রাজ্যসভায় স্পষ্ট করেছেন যে এই সংশোধনী কেবল প্রক্রিয়াগত এবং পেনশন সুবিধাগুলোর ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য সৃষ্টি করবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সপ্তম বেতন কমিশনের মতোই, অষ্টম বেতন কমিশনও প্রাক- এবং পোস্ট-২০২৬ পেনশনভোগীদের জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করবে।
Also Read | মাত্র ৫ মিনিটে ঘরে বসেই আধারে নামের ভুল সংশোধন করুন
অষ্টম বেতন কমিশনের মাধ্যমে পেনশনভোগীদের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, এই কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬-এর মধ্যে হতে পারে। যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ নির্ধারণ করা হয়, তবে ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ২৫,৭৪০ টাকা হতে পারে, যা ১৮৬% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। সর্বোচ্চ পেনশন ১,২৫,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩,৫৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, ডিয়ারনেস রিলিফ (DR), গ্র্যাচুইটি সিলিং, এবং ফ্যামিলি পেনশনেও উন্নতি আনার সম্ভাবনা রয়েছে।
একটি প্রস্তাবিত ইউনিফাইড পেনশন স্কিম (UPS) নিয়েও আলোচনা চলছে। এই স্কিমে ২৫ বছর বা তার বেশি চাকরির জন্য পেনশন হবে গত ১২ মাসের গড় বেসিক বেতনের ৫০%, এবং ১০ বছরের বেশি চাকরির জন্য ন্যূনতম পেনশন ১০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এই স্কিম পেনশন গণনাকে সহজ করবে এবং অবসরপ্রাপ্তদের জন্য আরও কাঠামোগত সুবিধা প্রদান করবে।
যদিও অষ্টম বেতন কমিশন পেনশনভোগীদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। কমিশনের আনুষ্ঠানিক গঠন এবং এর সুপারিশ চূড়ান্ত করতে সময় লাগবে। সূত্র অনুযায়ী, কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৬ সালের শেষ বা ২০২৭ সালের শুরুতে জমা পড়তে পারে, এবং বাস্তবায়ন ২০২৮ সাল পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে। এই বিলম্ব পেনশনভোগীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, কর্মচারী সংগঠনগুলো কমিউটেড পেনশন পুনরুদ্ধারের সময়কাল ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১২ বছর করার দাবি জানিয়েছে। তারা ন্যূনতম মজুরি পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভিত্তিতে নির্ধারণ এবং নিম্ন বেতন স্তরের একীকরণের মতো বিষয়েও জোর দিচ্ছে। এই প্রস্তাবগুলো পেনশনভোগীদের জন্য আরও ন্যায়সঙ্গত কাঠামো তৈরি করতে পারে।
অষ্টম বেতন কমিশন পেনশনভোগীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছে। পেনশন বৃদ্ধি, ভাতার সংশোধন, এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার উন্নতি পেনশনভোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। তবে, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের সময়সীমা এবং সরকারের আর্থিক সক্ষমতা এই সুবিধাগুলোর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পেনশনভোগীদের উচিত সরকারি ঘোষণা এবং অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে আপডেটগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। অষ্টম বেতন কমিশন কি সত্যিই পেনশনভোগীদের সমস্যার সমাধান করবে, তা সময়ই বলে দেবে।