ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ইউনিয়ন ক্যাবিনেট অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। এই কমিশন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা প্রায় ৪৯ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন সংশোধন করবে। তবে, চুক্তিভিত্তিক সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে এই কমিশনের সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব যে, চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা অষ্টম বেতন কমিশনের সুবিধা পাবেন কিনা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে।
অষ্টম বেতন কমিশন: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
অষ্টম বেতন কমিশনের উদ্দেশ্য হল মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং কর্মীদের জীবনযাত্রার মান বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো, ভাতা এবং পেনশন পুনর্গঠন করা। এই কমিশনের প্রস্তাবিত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে, যার ফলে ন্যূনতম মৌলিক বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪১,০০০ থেকে ৫১,৪৮০ টাকা হতে পারে। এছাড়া, মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) এবং গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ) সংশোধন করা হবে, যা কর্মীদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। তবে, এই সুবিধাগুলি মূলত স্থায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং পেনশনভোগীদের জন্য প্রযোজ্য বলে ধরা হচ্ছে।
Also Read |
চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা কি সুবিধা পাবেন?
চুক্তিভিত্তিক সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে অষ্টম বেতন কমিশনের সুবিধা নিয়ে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, বেতন কমিশনগুলি প্রধানত স্থায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন এবং পেনশন সংশোধনের জন্য গঠিত হয়। চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা, যারা বিভিন্ন সরকারি বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন, সাধারণত বেতন কমিশনের সরাসরি সুবিধা পান না। তবে, অষ্টম বেতন কমিশনের প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি সংশোধনের ফলে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন পরোক্ষভাবে বাড়তে পারে।
বাজাজ ফিনসার্ভের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, যদি সরকার ন্যূনতম মজুরি সংশোধন করে, তবে চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা আনুপাতিকভাবে বেতন বৃদ্ধি পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, সপ্তম বেতন কমিশনের সময় ন্যূনতম বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮,০০০ টাকা হয়েছিল, যা কিছু ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতনেও প্রভাব ফেলেছিল। তবে, এই সুবিধা নির্ভর করে নির্দিষ্ট বিভাগের নীতি এবং চুক্তির শর্তাবলীর উপর।
বাংলার প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে হাজার হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী সরকারি বিভাগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পঞ্চায়েতে কাজ করছেন, অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে আশা এবং অনিশ্চয়তা উভয়ই রয়েছে। রাজ্য সরকার সাধারণত কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি অনুসরণ করে, তবে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন প্রায়শই বিলম্বিত হয় বা সীমিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী এবং আশা কর্মীরা প্রায়ই ন্যূনতম মজুরি এবং ভাতার জন্য সরকারের উপর নির্ভর করে। অষ্টম বেতন কমিশন যদি ন্যূনতম মজুরি বাড়ায়, তবে এই কর্মীরা কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন, তবে স্থায়ী কর্মীদের মতো পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হল তাদের অস্থায়ী চাকরির প্রকৃতি। বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি সাধারণত স্থায়ী কর্মীদের জন্য তৈরি করা হয়, এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নির্ভর করে বিভাগীয় বাজেট এবং নীতির উপর। জাতীয় যৌথ পরামর্শদাত্রী কাউন্সিল (এনসিজেসিএম) অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য টার্মস অফ রেফারেন্স (টিওআর) প্রণয়নে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করছে, তবে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব এখনও স্পষ্ট নয়।
এছাড়া, ২০২৫ সালের বাজেটে অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় বাস্তবায়নে বিলম্ব হতে পারে। এটি চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, যদি ন্যূনতম মজুরি সংশোধন করা হয়, তবে তা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য পরোক্ষ সুবিধা আনতে পারে।
অষ্টম বেতন কমিশন প্রধানত স্থায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং পেনশনভোগীদের জন্য বেতন এবং ভাতা সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত হলেও, চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা ন্যূনতম মজুরি সংশোধনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন। তবে, তাদের জন্য সরাসরি সুবিধা নির্ভর করবে বিভাগীয় নীতি এবং বাজেট বরাদ্দের উপর। পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা সরকারি পরিষেবার একটি বড় অংশ গঠন করে, সরকারের কাছে তাদের দাবি পূরণের জন্য আরও স্পষ্ট নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন। অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ এবং টিওআর প্রকাশের পরই এই বিষয়ে আরও স্পষ্টতা আসবে।