ভারতের ১.৪ বিলিয়ন অধিবাসীর জন্য আধার কার্ড (Aadhaar Card) আজ শুধুমাত্র একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি অপরিহার্য নথি। ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) দ্বারা ২০০৯ সালে চালু হওয়া আধার কার্ড প্রতিটি ভারতবাসীকে একটি ১২-সংখ্যার ইউনিক নম্বর দেয়, যা তাঁদের বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ ও আইরিশ স্ক্যান) এবং ব্যক্তিগত তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। আজ এই আধার নম্বরই সারাজীবনের জন্য পরিচয় ও ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে দেশজুড়ে স্বীকৃত।
নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত আধার কার্ড
যে কোনও ভারতীয় নাগরিক, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, বিনামূল্যে আধার কার্ডের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। একবার আধার কার্ড তৈরি হয়ে গেলে তা নানা পরিষেবা পাওয়ার চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়ায়। আধার এখন শুধু একটি সাধারণ পরিচয়পত্র নয়, বরং সরকারি ও বেসরকারি বহু পরিষেবা গ্রহণের প্রথম ধাপ।
ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণ থেকে শুরু করে মোবাইল সংযোগ চালু করা, সরকারি ভর্তুকি পাওয়া বা সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করা—সব ক্ষেত্রেই আধার অপরিহার্য। এছাড়াও, আধারের মাধ্যমে ডিজিটাল ই-নথিপত্র যাচাইকরণ (e-KYC) সম্ভব হওয়ায় ডিজিটাল পরিষেবায় প্রবেশ আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে।
অফিসিয়াল কাজে একাধিক নথির বিকল্প আধার
আধারের একটি বড় সুবিধা হল, এটি একাধিক অফিসিয়াল ডকুমেন্টের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট আবেদন, গ্যাস সংযোগ, কিংবা স্কুল-কলেজে নাম নথিভুক্তির জন্য আর আলাদা করে ঠিকানা বা পরিচয়পত্র প্রমাণ দিতে হয় না। আধার থাকলেই অনেক পরিষেবা পাওয়া সহজ হয়ে যায়।
এছাড়া, আধারের সাথে মোবাইল নম্বর ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত থাকলে, সরাসরি আর্থিক লেনদেন বা ভর্তুকির টাকা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়, যা ভুয়ো দাবিদারদের দৌরাত্ম্য কমায় এবং সরকারি অর্থব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ করে তোলে।
সরকারি প্রকল্প ও সুবিধায় আধার সংযুক্তির তাৎপর্য
১. পিএফ (EPF):
কর্মচারী ভবিষ্য তহবিল সংস্থা (EPFO) আধার কার্ডকে UAN (Universal Account Number)-এর সঙ্গে সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করেছে। ফলে PF ব্যালেন্স দেখা, দাবি জমা দেওয়া কিংবা অনলাইনে টাকা তোলা সহজ হয়েছে। এতে আর্থিক লেনদেন আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য হয়েছে।
২. এলপিজি ভর্তুকি:
যারা তাঁদের আধার নম্বর গ্যাস সংযোগের সঙ্গে যুক্ত করেছেন, তারা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এলপিজি ভর্তুকি পেয়ে থাকেন। এটি নকল সংযোগ এবং ভর্তুকির অপব্যবহার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. শিক্ষাবৃত্তি:
সরকারি স্কলারশিপ বা শিক্ষার প্রকল্পগুলিতে আবেদন করতে আধার অপরিহার্য। এটি প্রকৃত ছাত্রদের হাতে সঠিক সময়ে বৃত্তির অর্থ পৌঁছে দিতে সাহায্য করে এবং দুর্নীতি হ্রাস করে।
৪. রেশন কার্ড:
সরকার আধারের সঙ্গে রেশন কার্ড সংযুক্ত করে কালোবাজারি রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে রেশন পেতে প্রকৃত প্রাপকেরা উপকৃত হচ্ছেন, এবং সময়মতো ন্যায্য মূল্যের খাদ্য সামগ্রী পাচ্ছেন।
৫. কৃষি বীমা ও কৃষকদের সহায়তা:
প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকেরা যেন সহজেই বীমা টাকা পেতে পারেন, তার জন্য আধার সংযুক্তিকরণ গুরুত্বপূর্ণ। আধারভিত্তিক যাচাই কৃষকদের সঠিক সময়ে আর্থিক সহায়তা দিতে সাহায্য করে, যা তাঁদের জীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব কমায়।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সহায়ক আধার কার্ড:
ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে আধার। আধার ভিত্তিক ই-কে ওয়াই সি (e-KYC) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র একটি ওটিপি বা আঙুলের ছাপ দিয়েই পরিষেবা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর, ই-কমার্স, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়া দ্রুততা ও নিরাপত্তা এনে দিয়েছে।
আধার কার্ড শুধু একটি পরিচয়পত্র নয়—এটি ডিজিটাল ভারতের আত্মা। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন জনগণ সরকারি পরিষেবার সহজ প্রাপ্যতা পাচ্ছেন, অন্যদিকে তেমনি সরকারও দেশের বিপুল জনসংখ্যার তথ্য নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে সংরক্ষণ করতে পারছে। এখন সময় এসেছে আধারের ব্যবহার ও গুরুত্ব আরও ভালোভাবে বুঝে প্রতিটি নাগরিকের জীবনে এর সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার।