পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্প বর্তমানে একটি নজিরবিহীন অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। কাঁচা পাটের (jute) অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহে ঘাটতি এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চটের বস্তার দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত— এই তিনটি কারণে শিল্পের সব স্তরেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি জুট-মিলগুলো উৎপাদন খরচ সামলাতে না পেরে বন্ধের মুখে পড়েছে।
চটকল মালিকরা অভিযোগ করেছেন, এই পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে শ্রমিকদের প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতায়। বহু শ্রমিকের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিক মতো দেওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যের চটকল মালিকরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ৫৮০ গ্রাম বি-টুইল বস্তার দাম স্থির করা বড় মিল থেকে শুরু করে ছোট মিল পর্যন্ত সবকেই ভয়াবহ লোকসানের মুখে ফেলেছে।
যদি বর্তমান পরিস্থিতি অদ্যাবধি চলতে থাকে, তবে ছোট ও মাঝারি জুট-মিলগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান সংকট তৈরি করবে। কাঁচা পাটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সরবরাহ চেইনের সমস্যা এবং বাজারে পাটের অভাব মিলগুলোর জন্য মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। মালিকদের মতে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে নির্দিষ্ট দামে বস্তা সরবরাহ বাধ্যতামূলক হওয়ায় উৎপাদনের খরচ এবং বিক্রির দামের মধ্যে ফারাক ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেছে।
এই পরিস্থিতি শুধু মিল মালিকদের জন্য নয়, শ্রমিকদের জন্যও আর্থিক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অনেক শ্রমিকের মাসিক বেতন দিতে পারা যাচ্ছে না, পাশাপাশি অন্যান্য প্রণোদনা ও ভাতার সুবিধা স্থগিত রাখতে হয়েছে। চটকল মালিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি দ্রুত সমাধান না করা হয়, তবে শ্রমিকদের ভোগান্তি আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
অন্যদিকে, শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় নীতি ও বাজারের বাস্তবতার মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা বাংলার পাটশিল্পকে সংকটময় পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। উৎপাদন খরচ, কাঁচামালের অভাব এবং সীমিত বিক্রয় মূল্য মিলগুলোর জন্য আর্থিক চাপ বাড়িয়েছে। ফলে পাটশিল্পের জন্য একটি সামগ্রিক সমন্বিত নীতি প্রয়োজন, যা কাঁচামাল সরবরাহ, উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম।
প্রতিবাদ এবং হুমকির মধ্যেও মালিকরা আশা প্রকাশ করেছেন যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যদি মিলের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে হস্তক্ষেপ করে, তবে শিল্প আবার সচল ও স্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। চটকল মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, তারা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে সব ধরনের সমাধান খুঁজে বের করতে প্রস্তুত, কিন্তু সরকারি সমর্থন না থাকলে তা সম্ভব নয়।
