ঘুষ কেলেঙ্কারিতে গৌতম আদানিকে সমন গুজরাত আদালতের

ভারতের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (US SEC)-এর একটি সমন গুজরাটের একটি আদালতে পাঠিয়েছে। এই সমন শিল্পপতি গৌতম আদানির (Gautam…

US SEC Summons Gautam Adani in Bribery Case, Gujarat Court Notified

ভারতের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (US SEC)-এর একটি সমন গুজরাটের একটি আদালতে পাঠিয়েছে। এই সমন শিল্পপতি গৌতম আদানির (Gautam Adani) কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছে। এটি একটি ঘুষকাণ্ডের মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে আদানি এবং তাঁর ভাইপো সাগর আদানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

Also Read |  বিশ্বের সেরা ১০ ধনীর তালিকা থেকে আম্বানি বাদ, আদানির চমক

   

মার্কিন এসইসি অভিযোগ করেছে যে, গৌতম আদানি এবং সাগর আদানি শত শত মিলিয়ন ডলারের একটি ঘুষের জাল চালিয়েছেন। এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে তারা উচ্চমূল্যের শক্তি চুক্তি হাতে পেয়েছেন। এই মামলায় অ্যাজিওর পাওয়ারের একজন কর্মকর্তা সিরিল কাবানেসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, আদানি গ্রিন এবং অ্যাজিওর আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছিল, কিন্তু চুক্তি হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

হেগ কনভেনশনের অধীনে সমন প্রেরণ

এই সমন গত ফেব্রুয়ারি মাসে হেগ কনভেনশনের অধীনে পাঠানো হয়েছিল, যা মার্কিন সরকারের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, আইন মন্ত্রণালয় ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি অভ্যন্তরীণ নোট জারি করে গুজরাটের সেশন আদালতকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। জি ২৪ কলক জেলা আদালতের রেজিস্ট্রার এবং পাবলিক প্রসিকিউটরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু মামলাটি বিচারাধীন থাকায় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারের অধীনে থাকায় তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সূত্রের খবর, আমেদাবাদ আদালত শিগগিরই গৌতম আদানির কাছে একটি নোটিশ জারি করতে পারে। আদালত ইতিমধ্যে নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, অনুরোধের দুটি সেট এবং সহায়ক নথি সংযুক্ত করা হয়েছে। আদালতকে “সার্ভিসের প্রমাণ সহ একটি রিপোর্ট (দ্বিতীয় সেট সহ)” নয়াদিল্লিতে বিভাগের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। এরপর তা সংশ্লিষ্ট বিদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “যেহেতু এই বিষয়টি বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিঠিপত্রের সঙ্গে জড়িত, তাই সার্ভিসের প্রমাণের রিপোর্টটি ইংরেজিতে দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে। যদি বেলিফ/প্রসেস সার্ভারের রিপোর্ট আঞ্চলিক ভাষায় থাকে, তবে তার ইংরেজি অনুবাদ সংযুক্ত করার অনুরোধ করা হচ্ছে।”

মার্কিন আদালতে মামলা

এই মামলাটি একটি আমেরিকান জেলা আদালতে বিচারাধীন, যেখানে মার্কিন বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গৌতম আদানি, সাগর আদানি এবং অন্যদের নাম একটি ঘুষকাণ্ডে জড়িয়েছে। গৌতম আদানি এবং আদানি গ্রুপ উভয়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আদানি এবং অন্যান্যরা যে আইনের অধীনে অভিযুক্ত হয়েছেন, তা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে স্থগিত করেছিলেন। হোয়াইট হাউসের মতে, এই বিদেশি ঘুষ আইন “অতিরিক্ত বিস্তৃত এবং অনির্দেশ্য” এবং এটি “আমেরিকান অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।”

গত নভেম্বরে, নিউ ইয়র্ক ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট গৌতম আদানি এবং তাঁর ভাইপো সাগর আদানিকে মার্কিন নিয়ন্ত্রকের অভিযোগের জবাব দিতে সমন জারি করেছিল। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা লাভজনক সৌরশক্তি চুক্তি হাতে পাওয়ার জন্য ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছেন। ২১ নভেম্বরের নোটিশে বলা হয়েছে, সমন প্রাপ্তির ২১ দিনের মধ্যে (প্রাপ্তির দিন বাদে) তাদের জবাব দিতে হবে।

নিউ ইয়র্ক আদালতের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গৌতম আদানি এবং সাতজন অভিযুক্ত, যার মধ্যে আদানি গ্রিন এনার্জির ডিরেক্টর সাগর আদানি রয়েছেন, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছেন। এটি সৌরশক্তি চুক্তি হাতে পাওয়ার জন্য করা হয়েছিল, যা ২০ বছরে ২ বিলিয়ন ডলার লাভের সম্ভাবনা তৈরি করবে।

Advertisements

আদানি গ্রুপের প্রতিক্রিয়া

এই অভিযোগের পর আদানি গ্রুপের একজন মুখপাত্র মার্কিন বিচার বিভাগ এবং এসইসি-র অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “গ্রুপটি সমস্ত সম্ভাব্য আইনি পথের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে লড়বে।” গ্রুপের দাবি, তারা সর্বদা সর্বোচ্চ শাসন, স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রক সম্মতি মেনে চলে।

মামলায় নাম জড়িত ব্যক্তিরা

মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, এই মামলায় নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নাম অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:
গৌতম এস আদানি
সাগর এস আদানি
ভনীত এস জৈন
রঞ্জিত গুপ্ত
সিরিল কাবানেস
সৌরভ আগরওয়াল
দীপক মালহোত্রা

মামলার গুরুত্ব

এই ঘটনা গৌতম আদানি এবং আদানি গ্রুপের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মার্কিন এসইসি এবং বিচার বিভাগের অভিযোগের মধ্যে দুর্নীতি, সিকিউরিটিজ জালিয়াতি এবং তারের জালিয়াতির ষড়যন্ত্রের মতো গুরুতর বিষয় রয়েছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বিদেশি ঘুষ আইন স্থগিত রয়েছে, তবুও এই মামলা চলমান রয়েছে।

ভারত সরকার হেগ কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এই সমন পৌঁছে দিতে বাধ্য। তবে, এটি কূটনৈতিক এবং আইনি প্রক্রিয়ার একটি জটিল অংশ। আমেদাবাদ আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং আদানির প্রতিক্রিয়া এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

জনমনে প্রশ্ন

এই ঘটনা ভারতীয় ব্যবসায়ী সমাজে আলোড়ন ফেলেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এই অভিযোগ কি আদানি গ্রুপের আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলবে? অন্যদিকে, গ্রুপের সমর্থকরা বলছেন, এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে।

গৌতম আদানির বিরুদ্ধে এই ঘুষকাণ্ড মামলা শুধু একটি আইনি লড়াই নয়, এটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি পরীক্ষা। আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং আদানি গ্রুপের প্রতিক্রিয়া এই গল্পের পরিণতি নির্ধারণ করবে।