ভারতের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি (UIDAI) আধার কার্ডধারী মৃত ব্যক্তিদের ১২-সংখ্যার পরিচয় নম্বর নিষ্ক্রিয় করার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয়পত্রের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশে মোট ১.১৭ কোটির বেশি মৃত নাগরিকের আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে UIDAI সম্প্রতি ‘মৃত্যুর রিপোর্টিং পরিষেবা’ (Reporting of Death of a Family Member) চালু করেছে, যা বর্তমানে ২৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কার্যকর হয়েছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে মৃতব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা myAadhaar পোর্টালে গিয়ে তাদের আত্মীয়ের মৃত্যুর তথ্য সরাসরি জানাতে পারবেন।
UIDAI এক সরকারি বিবৃতিতে জানিয়েছে, আধার তথ্যভান্ডারের নির্ভুলতা বজায় রাখতে তারা বিভিন্ন উৎস থেকে মৃত্যুর রেকর্ড সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাইয়ের পর সংশ্লিষ্ট আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করছে। এই প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত ১.৫৫ কোটি মৃত্যুর রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে, যেগুলি সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (CRS)-এর মাধ্যমে সংযুক্ত। এই তথ্য যাচাই করার পর প্রায় ১.১৭ কোটি আধার নম্বর বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে, CRS-এ সংযুক্ত নয় এমন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাথেও UIDAI কাজ করছে। ইতিমধ্যে ওইসব রাজ্য থেকে ৬.৭ লক্ষের বেশি মৃত্যুর রেকর্ড পাওয়া গেছে, যেগুলোর যাচাই প্রক্রিয়া চলছে এবং যথাযথ হলে সংশ্লিষ্ট আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হবে।
পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা:
UIDAI-এর নতুন ‘Reporting of Death of a Family Member’ পরিষেবায়, মৃত ব্যক্তির পরিবারের একজন সদস্যকে প্রথমে নিজের আধার নম্বরের মাধ্যমে প্রমাণীকরণ করতে হবে। এরপর তাকে মৃত আত্মীয়ের আধার নম্বর, মৃত্যু নিবন্ধনের নম্বর এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে।
UIDAI কর্তৃপক্ষ সেই তথ্য যাচাই করে দেখার পর যদি তথ্য সঠিক প্রমাণিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হবে। যদি তথ্য অসম্পূর্ণ বা ভুল হয়, তাহলে তা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।
এই পরিষেবা বর্তমানে myAadhaar পোর্টালে পাওয়া যাচ্ছে, এবং UIDAI ধাপে ধাপে বাকি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার কাজ করছে।
১০০ বছরের বেশি বয়সিদের যাচাই উদ্যোগ:
UIDAI আরও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে — যেসব আধার নম্বরধারীদের বয়স ১০০ বছরের বেশি, তাদের তথ্য রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে। এটি একটি পাইলট প্রকল্প, যার মাধ্যমে এই প্রবীণ নাগরিকরা আদৌ জীবিত আছেন কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার থেকে যাচাইয়ের রিপোর্ট পাওয়ার পর UIDAI সেই তথ্যের ভিত্তিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করছে।
UIDAI জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে আধার ডেটাবেসের নির্ভুলতা অনেকাংশে বাড়বে এবং একইসঙ্গে আধারের অপব্যবহার প্রতিরোধ করা যাবে। প্রায়ই দেখা যায়, মৃত ব্যক্তির আধার নম্বর ব্যবহার করে ব্যাংক, সিম কার্ড, রেশন কার্ড বা বিভিন্ন সরকারি সুবিধা গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয় — যা প্রতারণা এবং আইনত দণ্ডনীয়। এই নতুন পদক্ষেপ সেই ধরনের জালিয়াতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।
রাজ্য সরকারের সহযোগিতা:
UIDAI এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ, পৌরসভা এবং পঞ্চায়েত স্তরের রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই তথ্য যাচাই ও সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
এছাড়া, UIDAI সেন্ট্রাল সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (CRS)-এর সঙ্গে আরও গভীর সংযোগ তৈরি করছে, যাতে ভবিষ্যতে মৃত্যুর তথ্য আরও দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে আধার সিস্টেমে আপডেট করা যায়।
সাধারণ নাগরিকদের জন্য বার্তা:
UIDAI সাধারণ নাগরিকদের অনুরোধ করেছে যে, কেউ পরিবারের সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা হলে তা যথাসময়ে myAadhaar পোর্টালের মাধ্যমে জানিয়ে আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। এটি দেশের নিরাপত্তা ও ডিজিটাল পরিকাঠামোর স্বচ্ছতা বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই পরিষেবা বিনামূল্যে এবং সহজলভ্য। নাগরিকদের সুবিধার্থে পোর্টালে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। UIDAI আশ্বাস দিয়েছে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে এবং নির্ভুল যাচাইয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
এই ধরনের উদ্যোগ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অন্তর্গত আধার ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে। ভবিষ্যতে আধারভিত্তিক পরিষেবাগুলিতে এমন স্বয়ংক্রিয় যাচাই ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় করবে। UIDAI-এর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি ব্যবহারে মানবিক ও সামাজিক দিকটি আরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে — যা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার একটি বড় অঙ্গ।