মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Trump) মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন যে, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়ের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় আমদানির উপর শুল্ক “উল্লেখযোগ্যভাবে” বাড়ানো হবে। সিএনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ভারত আমাদের সঙ্গে অনেক ব্যবসা করে, কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে ব্যবসা করি না।
আমরা ২৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছিলাম, কিন্তু রাশিয়ার তেল কেনার কারণে আমি এটি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াব।” তিনি ভারতকে “ভালো বাণিজ্যিক অংশীদার নয়” বলে সমালোচনা করে যোগ করেন, “তারা রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে জ্বালানি দিচ্ছে।” এই হুমকি ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে ৩১ জুলাই ঘোষিত ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য অতিরিক্ত “শাস্তি” আরোপের হুমকির পর। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “ভারত শুধু রাশিয়ার থেকে প্রচুর তেল কিনছে না, তারা এই তেল বাজারে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের দ্বারা কত মানুষ নিহত হচ্ছে, তা তারা গ্রাহ্য করে না।” তিনি আরও বলেন, ভারতের উচ্চ শুল্ক এবং অ-শুল্ক বাণিজ্য বাধা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের প্রধান সমস্যা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হুমকির তীব্র জবাব দিয়েছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “ভারতের তেল আমদানি জাতীয় স্বার্থ এবং বিশ্ব বাজারের বাস্তবতার দ্বারা পরিচালিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভারতীয় রিফাইনারিদের এককভাবে দোষারোপ অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি উল্লেখ করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়ার তেল আমদানির জন্য উৎসাহিত করেছিল বৈশ্বিক শক্তি বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য। তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য বাণিজ্য করেছে, যা তাদের নিজেদের বাণিজ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ভারত বর্তমানে রাশিয়ার তেলের বৃহত্তম ক্রেতাদের মধ্যে একটি, যা ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউরোপীয় দেশগুলির বাণিজ্য হ্রাসের ফলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফিনল্যান্ড-ভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ভারত রাশিয়ার তেলের পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষ ক্রেতা। তবে, ভারত দাবি করেছে যে, এই আমদানি জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের প্রয়োজনীয়তার দ্বারা চালিত।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি ভারতের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ২৫ শতাংশ শুল্ক ২০২৫-২৬ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধিকে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে।
ভারতের প্রধান রপ্তানি পণ্য, যেমন স্মার্টফোন, ওষুধ, রত্ন, টেক্সটাইল এবং শিল্প যন্ত্রপাতি, এই শুল্কের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে, গত বছর ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করা ভারতের জুয়েলারি খাত হাজার হাজার চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, “আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য সব পদক্ষেপ নেব।” তিনি জানান, ভারত মার্কিন শুল্কের প্রভাবকে ন্যূনতম রাখতে রপ্তানিকারকদের দেশীয় ব্র্যান্ড তৈরি ও প্রচারে উৎসাহিত করছে। তবে, বিশ্লেষক ম্যাট গার্টকেনের মতে, ট্রাম্পের এই শুল্ক হুমকি একটি কূটনৈতিক কৌশল হতে পারে, এবং ভারত রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ থেকে তেল ক্রয়ের মাধ্যমে এই চাপ এড়াতে চেষ্টা করতে পারে।
ডায়মন্ড হারবার ম্যাচের আগে ধাক্কা, চোটের কবলে বাগানের এই ফুটবলার
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ভারতের ১৯০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং আগামী বছরগুলিতে এটিকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য এখন অনিশ্চয়তার মুখে। তবে, ভারত দৃঢ়ভাবে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।