এবার শেয়ারবাজারে টানা পতনের ধারাবাহিকতা আরও একধাপ গভীর হলো। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দালাল স্ট্রিটে সূচকগুলির উপর চাপ এতটাই প্রবল হয় যে বাজার ষষ্ঠ দিনের মতো লালচিহ্নে বন্ধ হয়। দিন শেষে বিএসই সেনসেক্স ৭০০-এরও বেশি পয়েন্ট ভেঙে ৮০,৫০০–র নীচে স্থির হয়। অন্যদিকে এনএসই নিফটি ২০০–রও বেশি পয়েন্ট হারিয়ে ২৪,৬৭১-এ গড়ায়।
বাজারের পতনের মূল কারণ:
বিশ্লেষকদের মতে, এই পতনের নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি। বৃহস্পতিবার তিনি হঠাৎ করেই একাধিক পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে ওষুধ শিল্পের দিকে। ব্র্যান্ডেড ও পেটেন্ট ওষুধ আমদানির উপর ট্রাম্প প্রশাসন সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে।
ভারত তার মোট ওষুধ রপ্তানির প্রায় ৩১ শতাংশ মার্কিন বাজারে পাঠায়। যদিও ভারত মূলত জেনেরিক ওষুধ রপ্তানি করে এবং এই নতুন শুল্ক আপাতত সরাসরি জেনেরিককে টার্গেট করছে না, তবুও বাজারে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে জেনেরিক ওষুধের উপরও ট্রাম্পের নজর পড়তে পারে। এই আতঙ্কেই শুক্রবার ফার্মা শেয়ারগুলিতে ব্যাপক বিক্রি দেখা যায়।
প্রভাবিত অন্যান্য খাত: Trump Tariff Stock Market Crash
ওষুধের পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসন রান্নাঘরের ক্যাবিনেট ও বাথরুম ভ্যানিটির উপর ৫০ শতাংশ, আসবাবপত্রের উপর ৩০ শতাংশ এবং হেভি ট্রাকের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট খাতের কোম্পানিগুলির শেয়ারেও চাপ বাড়ে।
বাজারের গতি:
দিনের শুরু থেকেই বাজার দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। সকাল ৯টা ২৫ মিনিট নাগাদ সেনসেক্স এক ধাক্কায় ৩৮৮ পয়েন্ট নেমে ৮০,৭৭১-এ পৌঁছে যায়, আর নিফটি হারায় ১১৯ পয়েন্ট, নেমে দাঁড়ায় ২৪,৭৭১-এ। এরপর কিছুটা সামলে উঠলেও দুপুর গড়াতেই বিক্রির চাপ বেড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সূচকগুলির বড়সড় পতন ঘটে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা:
বাজার পতনের আরেকটি বড় কারণ হল বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (FII) ধারাবাহিক বিক্রি। বৃহস্পতিবার একদিনেই তারা প্রায় ৪,৯৯৫ কোটি টাকার শেয়ার বাজার থেকে তুলে নেয়। বিপরীতে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (DII) প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনে বাজারকে কিছুটা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেও সামগ্রিকভাবে তা পতন রুখতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের মত:
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি মূলত মানসিক চাপের প্রতিফলন। ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলি যদিও জেনেরিক ওষুধ রপ্তানি করে, তবুও বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। অন্যদিকে, আসবাবপত্র ও ভারী যানবাহন খাতের সঙ্গে জড়িত রপ্তানিকারক সংস্থাগুলিও সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় আছে।
শেষ কথা:
মোটের উপর, শুক্রবারের শেয়ারবাজারে রক্তক্ষয়ী সেশন বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক বাড়িয়েছে। ছয় দিন ধরে টানা পতনের ফলে বাজারে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। সামনের সপ্তাহগুলিতে বিনিয়োগকারীরা নজর রাখবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কার্যকলাপের উপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় চাহিদা ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয় বাড়ানো গেলে কিছুটা সাপোর্ট আসতে পারে, তবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক টানাপোড়েন কমার আগে বাজারের ভোলাটিলিটি বজায় থাকবে।