মোদী সরকারের জিএসটি নীতিকে ঐতিহাসিক আখ্যা পীযূষ গয়ালের, ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতাকে কটাক্ষ

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে জিএসটি সংস্কারকে তিনি দেশের ইতিহাসে এক “ঐতিহাসিক ও ব্যাপক কর…

Piyush Goyal Slams EU Over FTA Talks

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে জিএসটি সংস্কারকে তিনি দেশের ইতিহাসে এক “ঐতিহাসিক ও ব্যাপক কর সংস্কার” বলে মনে করেন। গয়াল কংগ্রেস আমলের শাসনকে আঙুল তুলে বলেন, তখন একাধিক কর যেমন ভ্যাট ও কেন্দ্রীয় করের জালে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়তেন, অথচ মোদী সরকার কর কাঠামোকে সহজ করে ব্যবসার পরিবেশকে অনুকূল করার লক্ষ্য নিয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে আজ আমরা কর কাঠামোকে সরলীকৃত করতে পেরেছি। দেশের উন্নয়নে প্রতিটি রাজ্য, এমনকি বিরোধী দলের সরকার পরিচালিত রাজ্যগুলিও জিএসটি স্ল্যাব নির্ধারণ ও সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়েছে। কোভিড মহামারির সময়ও পাঁচ বছর ধরে মোদী সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আজকের পরিবর্তনে সাধারণ মানুষ, কৃষক, গৃহিণী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত—সবাই উপকৃত হবেন।”

   

তিনি দাবি করেন, কংগ্রেস আমলে বহুমুখী করব্যবস্থা দেশকে জটিল করে তুলেছিল। অথচ আজকের সংস্কারমূলক নীতি রুটি, খাদ্যদ্রব্য, এফএমসিজি পণ্য, প্রসাধনী থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসকে সস্তা করছে।

গয়াল অভিযোগ করেন, “কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশকে দুর্বল অর্থনীতি দিয়ে গিয়েছিল। তারা দুর্নীতি করেছে, কিন্তু কোনও রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতিই ছিল, কাজের অভাব ছিল প্রকট।”

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকেই নথিপত্র ও করের বোঝা লাগাতার হ্রাস পেয়েছে। “২০১৭ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত বারবার প্রধানমন্ত্রী করের হার কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। অথচ বিরোধীরা শুধুই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, ভুয়া অভিযোগ করেছে, মানুষের মনে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করেছে। বাস্তবে কিন্তু জিএসটি সংস্কারের ফলে সমাজের প্রত্যেক স্তর উপকৃত হয়েছে।”

গয়াল জানান, স্বাধীনতার পর এই প্রথম এত বড় মাপের ব্যাপক কর সংস্কার সম্ভব হয়েছে। “আজকের দিনটি দেশের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই এই উদ্যোগের জন্য। স্বাধীনতার পর সম্ভবত এই প্রথমবার দেশের কর কাঠামোতে এত বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রথম একীভূত করব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন। “কিন্তু ইউপিএ সরকার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাস্তবায়ন করেনি। রাজ্য সরকারগুলোও তাদের উপর আস্থা রাখতে পারেনি,” বলেন গয়াল।

Advertisements

৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে করহার সংস্কার করে দুটি প্রধান স্ল্যাব—৫% ও ১৮%—নির্ধারণ করা হয়েছে।

৫% স্ল্যাব: খাদ্য ও রান্নাঘরের জিনিসপত্র যেমন মাখন, ঘি, চিজ, দুগ্ধজাত পণ্য, নেমকিন, ভুজিয়া, মিশ্রণ, রান্নার সামগ্রী; কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম, স্প্রিঙ্কলার, বায়োপেস্টিসাইড, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, চাষাবাদের যন্ত্র, ট্রাক্টর ও ট্রাক্টরের টায়ার; ক্ষুদ্র শিল্প ও হস্তশিল্প যেমন সেলাই মেশিন ও এর যন্ত্রাংশ; স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও ডায়াগনস্টিক কিট।

১৮% স্ল্যাব: অধিকাংশ পণ্য ও পরিষেবা, যেমন ছোট গাড়ি, মোটরসাইকেল (৩৫০ সিসি পর্যন্ত), ইলেকট্রনিকস, গৃহস্থালি সামগ্রী এবং কিছু পেশাদার পরিষেবা। সব ধরনের অটো পার্টসের জন্যও অভিন্ন ১৮% করহার ধার্য হয়েছে।

৪০% স্ল্যাব: বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্য যেমন তামাক, পান মসলা, সিগারেট, বিড়ি, চিনিযুক্ত পানীয়, বিলাসবহুল গাড়ি, ৩৫০ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল, ইয়ট, হেলিকপ্টার ইত্যাদি।
সম্পূর্ণ করমুক্ত: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার মতো অপরিহার্য খাতে কোনও জিএসটি প্রযোজ্য হবে না। স্বাস্থ্যবিমা, জীবনবিমার প্রিমিয়ামও করমুক্ত রাখা হয়েছে।

গয়াল বলেন, এই কর সংস্কার গরিব থেকে মধ্যবিত্ত, কৃষক থেকে নারী—সকলের জন্যই স্বস্তি বয়ে আনবে। খাদ্যদ্রব্য সস্তা হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, কৃষকরা কৃষিযন্ত্র সহজে কিনতে পারবেন, গৃহিণীরা রান্নার সামগ্রীতে সাশ্রয় পাবেন, এবং স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ও অনেকটাই কমবে।

পীযূষ গয়ালের বক্তব্যে স্পষ্ট, কেন্দ্র সরকার জিএসটি সংস্কারকে শুধুমাত্র কর ব্যবস্থার পরিবর্তন হিসেবে নয়, বরং ভারতের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সোপান হিসেবে দেখছে। কংগ্রেস আমলে যে ভঙ্গুর অর্থনীতি ও জটিল করব্যবস্থা মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, মোদী সরকারের সংস্কার তারই সমাধান হিসেবে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।