H-1B visa প্রোগ্রামে বড় জয় ভারতীয় আইটি ফার্মের: ইনফোসিস, টিসিএস নাকি এইচসিএল?

ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলোর জন্য সুখবর! ২০২৪ আর্থিক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের H-1B visa প্রোগ্রামে শীর্ষস্থানীয় সুবিধাভোগী হিসেবে উঠে এসেছে ভারতের বড় বড় আইটি ফার্ম যেমন ইনফোসিস,…

H-1B Visa indian girl

ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলোর জন্য সুখবর! ২০২৪ আর্থিক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের H-1B visa প্রোগ্রামে শীর্ষস্থানীয় সুবিধাভোগী হিসেবে উঠে এসেছে ভারতের বড় বড় আইটি ফার্ম যেমন ইনফোসিস, কগনিজেন্ট, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), এইচসিএল, উইপ্রো এবং টেক মাহিন্দ্রা। ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (USCIS)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই কোম্পানিগুলো H-1B ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় দক্ষ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। তবে, এই তালিকায় ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় জয়ী হয়েছে ইনফোসিস, যারা ৮,১৪০টি H-1B ভিসার অনুমোদন পেয়েছে।

H-1B ভিসা আমেরিকার নিয়োগকর্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যার মাধ্যমে তারা বিদেশি কর্মীদের বিশেষ দক্ষতার কাজের জন্য নিয়োগ করতে পারে। এই ভিসার জন্য সর্বনিম্ন ব্যাচেলর ডিগ্রি বা তার সমতুল্য যোগ্যতা প্রয়োজন, যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে থাকতে হয়। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘গোল্ডেন কার্ড’ নামে একটি নতুন প্রোগ্রামের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা EB-5 বিনিয়োগকারী ভিসার বিকল্প হতে পারে। তিনি শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যা H-1B ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে এবং ভারতীয় ফার্মগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

   

ইনফোসিসের শীর্ষস্থান
ভারতের আইটি জায়ান্ট ইনফোসিস, যিনি এন আর নারায়ণ মূর্তি এবং নন্দন নীলেকণি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, H-1B ভিসা প্রোগ্রামে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। ২০২৪ সালে এই কোম্পানি ৮,১৪০টি H-1B ভিসার অনুমোদন পেয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইনফোসিসের আমেরিকায় ২০,০০০-এর বেশি কর্মী রয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক এবং H-1B ভিসার মাধ্যমে সেখানে কাজ করছেন। এই সাফল্য ইনফোসিসের আমেরিকার প্রযুক্তি খাতে গভীর প্রভাব এবং দক্ষ কর্মী সরবরাহের ক্ষমতা প্রমাণ করে। বাঙালি প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে এই খবরে উৎসাহের ঢেউ উঠেছে, কারণ ইনফোসিস ভারতীয় প্রযুক্তির গর্বের প্রতীক।

Advertisements

কগনিজেন্টের অবস্থান
তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে কগনিজেন্ট, যিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও বর্তমানে নিউ জার্সিতে সদর দফতর রয়েছে। এই কোম্পানি ২০২৪ সালে ৬,৩২১টি H-1B ভিসার অনুমোদন পেয়েছে, যা তাদের ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রেখেছে। তবে, ২০২৪ সালে কগনিজেন্ট একটি আইনি মামলার সম্মুখীন হয়েছিল। আমেরিকার একটি জুরি তাদের ভারতীয় কর্মীদের পক্ষপাতমূলক আচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে। এই মামলায় প্রায় ২,০০০ প্রাক্তন কর্মচারী জড়িত ছিলেন, যারা কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। এই ঘটনা সত্ত্বেও, কগনিজেন্ট H-1B ভিসার ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে।

টিসিএস-এর সাফল্য
টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম H-1B ভিসা সুবিধাভোগী। ২০২৪ সালে টিসিএস-এর ৫,২৭৪টি ভিসা আবেদন অনুমোদিত হয়েছে। টাটা গ্রুপের এই আইটি শাখা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্পে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এবং আমেরিকার বাজারে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে টিসিএস-এর বিভিন্ন প্রকল্প এবং কলকাতায় তাদের কার্যালয়ের কারণে এই খবর স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

অন্যান্য ভারতীয় ও মার্কিন কোম্পানি
ইনফোসিস, কগনিজেন্ট এবং টিসিএস ছাড়াও উইপ্রো (১,৬৩৪টি ভিসা), টেক মাহিন্দ্রা (১,১৯৯টি ভিসা) এবং এইচসিএল (২,৯৫৩টি ভিসা) H-1B ভিসা প্রোগ্রামে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। তবে, সামগ্রিক তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জেফ বেজোসের আমাজন, যারা ৯,২৬৫টি ভিসার অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া, গুগল (৫,৩৬৪টি), মেটা (৪,৮৪৪টি), মাইক্রোসফট (৪,৭২৫টি), অ্যাপল (৩,৮৭৩টি) এবং এলন মাস্কের টেসলা (১,৭৬৭টি) তালিকায় শীর্ষ মার্কিন কোম্পানি হিসেবে রয়েছে। এই কোম্পানিগুলো প্রকৌশল, গবেষণা এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য H-1B ভিসার ওপর নির্ভর করে।

ভারতীয় আইটি শিল্পের জন্য গুরুত্ব
H-1B ভিসা ভারতীয় আইটি শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। USCIS-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ১,৩০,০০০ H-1B ভিসার মধ্যে ২৪,৭৬৬টি ভারতীয় কোম্পানিগুলো পেয়েছে, যা প্রায় ২০ শতাংশ। এই ভিসা ভারতীয় প্রযুক্তি পেশাদারদের আমেরিকায় কাজ করার সুযোগ দেয় এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলোর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ক্ষমতা বাড়ায়। বাঙালি তরুণদের মধ্যে আইটি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহ বাড়ছে, এবং এই খবর তাদের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাবিত ‘গোল্ডেন কার্ড’ প্রোগ্রাম H-1B ভিসার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তিনি এই প্রোগ্রামকে আরও উন্নত করার কথা বললেও, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য এটি কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, ট্রাম্প এবং এলন মাস্কের মতো ব্যক্তিত্বরা H-1B ভিসার সমর্থনে কথা বলেছেন, যা ভারতীয় আইটি ফার্মগুলোর জন্য আশার আলো জাগিয়েছে।

ইনফোসিসের ৮,১৪০টি H-1B ভিসার অনুমোদন প্রমাণ করে যে, এই কোম্পানি ভারতীয় আইটি শিল্পে শীর্ষে রয়েছে। টিসিএস, কগনিজেন্ট এবং অন্যান্য ফার্মগুলোও এই প্রোগ্রামে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাঙালি প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে, ভারতীয় কোম্পানিগুলো বিশ্ব মঞ্চে তাদের দক্ষতা প্রমাণ করছে। ভবিষ্যতে H-1B ভিসা নীতিতে পরিবর্তন এলেও, ভারতীয় আইটি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী থাকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।