গুঞ্জনের অবসান! ভারতে টিকটক অ্যাক্সেস নিয়ে বড়সড় আপডেট নয়াদিল্লির

শুক্রবার সন্ধ্যায়, ভারত সরকারের সূত্র জানিয়েছে টিকটক এখনও ভারতে নিষিদ্ধ (TikTok Ban India) রয়েছে, যদিও কিছু ব্যবহারকারী জানিয়েছেন যে তারা এই ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের ওয়েবসাইট…

TikTok Remains Banned in India Despite Website Access Buzz

শুক্রবার সন্ধ্যায়, ভারত সরকারের সূত্র জানিয়েছে টিকটক এখনও ভারতে নিষিদ্ধ (TikTok Ban India) রয়েছে, যদিও কিছু ব্যবহারকারী জানিয়েছেন যে তারা এই ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে পেরেছেন। সরকারি সূত্র স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, “ভারত সরকার টিকটকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো আদেশ জারি করেনি। এ ধরনের যেকোনো বিবৃতি বা খবর মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার টিকটকের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে সাম্প্রতিক গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়েছে।

Also Read |

   

কিছু ব্যবহারকারী জানিয়েছেন যে তারা টিকটকের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পেরেছেন, তবে তারা লগইন করতে, ভিডিও আপলোড করতে বা দেখতে পারেননি। এছাড়াও, চীন-ভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্মের অ্যাপ গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে এখনও উপলব্ধ নয়। টেলিকম বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীরা এখনও ওয়েবসাইটটি ব্লক করে রেখেছে, তবে কিছু ব্যবহারকারীর কাছে এটি কীভাবে অ্যাক্সেসযোগ্য হয়েছে, তা এখনও অস্পষ্ট।

এই ঘটনার পটভূমিতে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চলছে, যা ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকায় মারাত্মক সংঘর্ষের পর তলানিতে পৌঁছেছিল। সম্প্রতি, উভয় দেশ “স্থিতিশীল, সহযোগিতামূলক এবং ভবিষ্যৎমুখী” সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা, সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালু করা, বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়ানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরাসরি ফ্লাইট সংযোগ পুনরায় শুরু করা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৩১শে আগস্ট থেকে ১লা সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে সেখানে যাবেন।

Also Read |

২০২০ সালের ১৫ই জুন গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সংঘর্ষের পর সরকার টিকটক সহ ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল। তৎকালীন সময়ে টিকটক ভারতে ২০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীর সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম বাজারগুলির মধ্যে একটি ছিল। সরকার জানিয়েছিল, এই অ্যাপগুলি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে এবং স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (MeitY) তখন জানিয়েছিল যে এই অ্যাপগুলি “ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা, ভারতের প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপে” জড়িত।

টিকটকের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে ভারতীয় বাজারে দেশীয় বিকল্প যেমন ইনস্টাগ্রাম রিলস, ইউটিউব শর্টস, মোজ, জোশ এবং এমএক্স টাকাটাক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ২০২০ সালের নিষেধাজ্ঞার পর, ইনস্টাগ্রাম রিলস ভারতে বিশাল দর্শক সংগ্রহ করে, বিশেষ করে টিকটকের শূন্যস্থান পূরণে। রেডসিয়ার স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্টসের একটি রিপোর্ট অনুসারে, টিকটকের নিষেধাজ্ঞার তিন মাসের মধ্যেই ভারতীয় শর্ট-ফরম্যাট ভিডিও (এসএফভি) প্ল্যাটফর্মগুলি টিকটকের ব্যবহারকারী বেসকে ছাড়িয়ে যায়।

Advertisements

সাম্প্রতিক সময়ে, টিকটকের ওয়েবসাইট কিছু ব্যবহারকারীর জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ এটিকে ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির সঙ্গে যুক্ত করে দেখছেন, বিশেষ করে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাম্প্রতিক ভারত সফর এবং আসন্ন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে। তবে, সরকারি সূত্র এই গুঞ্জনকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে, স্পষ্ট করে বলেছে যে টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়নি এবং অ্যাপটি এখনও ভারতে ব্লক করা আছে।

টিকটকের পাশাপাশি, আরেকটি চীনা প্ল্যাটফর্ম অ্যালিএক্সপ্রেসের ওয়েবসাইটও কিছু ব্যবহারকারীর জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য হয়েছে, যা এই গুঞ্জনকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে, টেলিকম বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীরা এই ওয়েবসাইটগুলি ব্লক করা অব্যাহত রেখেছে, এবং কিছু ব্যবহারকারীর অ্যাক্সেস পাওয়ার কারণ এখনও অজানা।

২০২০ সালে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পর, ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এটি ছিল একটি বড় ধাক্কা। অনেকে তাদের আয়ের উৎস এবং জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন। তবে, অনেকে ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং ইউটিউব শর্টসের মতো প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়ে নতুন করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। টিকটকের নিষেধাজ্ঞা ভারতীয় বাজারে দেশীয় অ্যাপগুলির উত্থানে সহায়ক হয়েছে, যা স্থানীয় প্রতিভাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

টিকটকের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও, এটি পুনরায় ভারতে কার্যক্রম শুরু করতে হলে তথ্য সুরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সরকারের কঠোর নীতি এবং জনগণের গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে টিকটকের পুনরাগমন সহজ হবে না।

সামগ্রিকভাবে, টিকটকের ওয়েবসাইটের আংশিক অ্যাক্সেস নিয়ে উত্তেজনা থাকলেও, সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য এই গুঞ্জনকে থামিয়ে দিয়েছে। ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতি এবং আসন্ন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতির কিছু পরিবর্তন হতে পারে, তবে বর্তমানে টিকটক ভারতে নিষিদ্ধই রয়েছে। ফুটবলের পরিপ্রেক্ষিতে, যেমন ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল এএফসি মঞ্চে তাদের যাত্রা শুরু করছে, তেমনি ভারতীয় ডিজিটাল পরিবেশও নিজস্ব পথে এগিয়ে চলেছে, দেশীয় প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভর করে।