সিঙ্গুরের দুঃখ ভুলে শিল্প গড়তে বাংলায় ফিরছে টাটারা

সময়টা ২০০৬ সাল, হুগলি জেলার ছোট্ট ব্লক সিঙ্গুর তখন বাংলা এমনকী দেশের অন্যতম রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। শুধু আলোচনাই নয়, সমালোচনা কম শুনতে হয়নি…

ata is going to launch electric by cycle investment at singur west bengal

সময়টা ২০০৬ সাল, হুগলি জেলার ছোট্ট ব্লক সিঙ্গুর তখন বাংলা এমনকী দেশের অন্যতম রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। শুধু আলোচনাই নয়, সমালোচনা কম শুনতে হয়নি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারকে। কারণ সিঙ্গুরের প্রায় ১০০০ হাজার একর জমি নিয়ে ন্যানো কারখানা গড়তে চেয়েছিল রতন টাটার (Tata) সংস্থা টাটা মোটরস। উদ্দেশ্যে শিল্পায়নের হলেও শিল্পের জন্য জমি দখল প্রক্রিয়ায় ভুলের খেসারত দিতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে। শিল্পায়নে যারা জমি দিয়েছেন ও যারা জমি দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না তাঁদের হাতিয়ার করেই টাটাকে ইস্যু করে বাম বিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তারপর, ধর্ণা-অনশন, মিছিল-মিটিঙেও সেই জট কাটেনি। টাটার তৎকালীন ডিরেক্টর রবি কান্তের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল মমতার। কিন্তু জট কাটেনি তবুও। তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর অনড় মনোভাবের কারণে শেষপর্যন্ত হাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল দেশের অন্যতম শ্রেষ্ট শিল্প সংস্থাটি। বাম-তৃণমূলের সংঘাতের মধ্যে পড়ে শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুর ছাড়তে বাধ্য হয় টাটা মোটরস। ফলে রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে ভেঙে যায় মধ্যবিত্ত ‘একলাখি গাড়ি’র স্বপ্ন।

   

তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। রাজ্যে শাসন ক্ষমতা বামেদের হাত থেকে চলে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। আজ প্রায় দ্বি-দশক পেরিয়েও সিঙ্গুরের স্মৃতি ভুলতে পারেনি বাঙালি। আজও বাংলার রাজনীতির অবচেতন মননে সিঙ্গরে টাটার বিদায় গভীরভাবে ভাবাবেগ সৃষ্টি করে। যারফলে অনেকেই বর্তমান রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে পিছুপা হননি। বাঙালির মতোই কিন্তু বাংলার টান এখনও অস্বীকার করতে পারেনি টাটা। যুগ বদলেছে পেট্রোলের জায়গায় বৈদ্যুতিন গাড়ির প্রচলন বাড়ছে ক্রমেই। এবার সেই বিষয়কে মাথায় রেখে ফের সিঙ্গুরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে টাটা গোষ্ঠী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দিনে সিঙ্গুর থেকে বৈদ্যুতিন বাই সাইকেল উৎপাদন করবে রতন টাটার সংস্থাটি। ভবিষ্যতে এই সাইকেলের চাহিদা হবে আকাশ ছোঁয়া।

সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই সমাজের সমস্ত শ্রেনীর জন্য নয়া প্রকল্প পেশ করেছে টাটা। যার দাম মাত্র ৩০ হাজার টাকা। টানা তিন ঘন্টা চার্জ দিলেই একবারে ৪০ কিমি পর্যন্ত চলতে পারবে এই সাইকেল। ব্যাটারিতে রয়েছে দু বছরের ওয়ারান্টি। ওজনে হালকা হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় সহজেই নিয়ে যাওয়া যাবে। টাটার এই নতুন প্রকল্প সিঙ্গুরে ফের বাস্তবায়িত হলে বাংলার অর্থনীতিতে শিল্পের অভাব কিছুটা পূরণ হবে বলেই মনে করছে শিল্পমহল। সেক্ষেত্রে মমতার বিরুদ্ধে বামেদের শিল্প-বিরোধী তকমার পাল্টা জবাব দিতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনটা মনে করছে রাজনৈতিক মহল।