নীতি আয়োগ ভারতের বৈদ্যুতিক যানবাহন (Indian Government) খাতে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি যুগান্তকারী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ‘আনলকিং অ্যা $২০০ বিলিয়ন অপরচুনিটি: ইলেকট্রিক ভেহিকলস ইন ইন্ডিয়া’।
এই প্রতিবেদনটি ভারতের ইভি রূপান্তরের জন্য একটি রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করে। যা মূল বাধাগুলি চিহ্নিত করে, কৌশলগত সমাধান প্রস্তাব করে এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন গ্রহণকে ত্বরান্বিত করার জন্য বাস্তবসম্মত সুপারিশ প্রদান করে।
ডেটা-চালিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিভিন্ন খাতের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে এই প্রতিবেদন ভারতের পরিচ্ছন্ন গতিশীলতার দিকে একটি সমন্বিত জাতীয় প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। ২০২৫ সালের ৪ আগস্ট নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম, উপদেষ্টা সুধেন্দু জে সিনহা, সদস্য রাজীব গৌবা এবং ভারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরান রিজভি এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনের মূল বিষয়
এই প্রতিবেদন ভারতের ইভি খাতে ২০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সুযোগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট যানবাহন বিক্রয়ের ৩০% ইভি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নীতি আয়োগ একটি জাতীয় ইভি নীতির প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে স্পষ্ট লক্ষ্য, সময়সীমা এবং ফেজড ইভি ম্যান্ডেট সহ একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো রয়েছে।
প্রতিবেদনটি বাস এবং ট্রাকের মতো উচ্চ-প্রভাব বিভাগগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য প্রণোদনার পরিবর্তে ম্যান্ডেট এবং ডিসইনসেনটিভের দিকে নীতিগত পরিবর্তনের সুপারিশ করে। এছাড়া, বাণিজ্যিক ইভি সেগমেন্টের জন্য মূলধন খরচ কমাতে ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স ফ্যাসিলিটি এবং পাঁচটি শহরাঞ্চলে বাস, প্যারাট্রানজিট এবং মালবাহী যানবাহনের ১০০% বিদ্যুতায়নের জন্য পাইলট প্রোগ্রাম চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) বাড়ানোর উপর জোর দেয় যাতে ব্যাটারি খরচ কমানো, শক্তির ঘনত্ব বাড়ানো এবং আমদানিকৃত বিরল পৃথিবী উপকরণের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা যায়। ২০২৪ সালে ভারতে ১৮.৭৮ মিলিয়ন ইভি বিক্রি হয়েছে, যা মোট যানবাহন বিক্রয়ের মাত্র ৭.৬%, এবং ২০৩০ সালের লক্ষ্য পূরণের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ২২% এর বেশি বৃদ্ধির প্রয়োজন।
ইভি খাতে ভারতের অগ্রগতি
ভারতের ইভি খাত গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে। ২০১৮ সালে ১.৩ মিলিয়ন ইভি নিবন্ধন থেকে ২০২৩ সালে তা ১৫.২৯ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে, যা ১১ গুণ বৃদ্ধি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইভি বিক্রয় ১৯.৪% মাসিক এবং ১৭.১% বার্ষিক বৃদ্ধি পেয়ে ১,৬৯,৯৩১ ইউনিটে পৌঁছেছে।
সরকারের ফাস্টার অ্যাডপশন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অফ (হাইব্রিড অ্যান্ড) ইলেকট্রিক ভেহিকলস (ফেম) স্কিম, বিশেষ করে ফেম-II, এই প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফেম-II স্কিমে ১.৪৩ বিলিয়ন ডলার বাজেটে ৪,৭০,০০০ ইভি এবং ৬৫টির বেশি শহরে ৬,৩১৫ ই-বাস এবং ২,৮৭৭ চার্জিং স্টেশনের জন্য ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সুপারিশ
প্রতিবেদনটি ইভি গ্রহণের বাধাগুলি যেমন—উচ্চ প্রাথমিক খরচ, অপর্যাপ্ত চার্জিং অবকাঠামো এবং ব্যাটারি উৎপাদনে আমদানি নির্ভরতা—চিহ্নিত করেছে। এই সমস্যাগুলি মোকাবিলার জন্য, নীতি আয়োগ একটি জাতীয় ইভি নীতি প্রণয়ন, বাণিজ্যিক ইভিগুলির জন্য ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স এবং ব্যাটারি গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া, ২০৩০ সালের মধ্যে ১৩.২ মিলিয়ন চার্জিং স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা ভারতের বর্তমান অবকাঠামোর তুলনায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব
ইভি খাতে এই রূপান্তর ভারতের অর্থনীতি এবং পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদন অনুসারে, ফেম-II স্কিমের অধীনে যোগ্য যানবাহনগুলি তাদের জীবনকালে ৫ মিলিয়ন টন তেল সমতুল্য এবং ৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সাশ্রয় করতে পারে।
এছাড়া, ইভি ব্যাটারি বাজার ২০২৩ সালে ১৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৮ সালে ২৭.৭০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশিত। এই প্রবৃদ্ধি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ইভি ফাইন্যান্সিং শিল্পকে ৩.৭ লক্ষ কোটি টাকার বাজারে রূপান্তরিত করবে।
নীতি আয়োগের ‘আনলকিং অ্যা $২০০ বিলিয়ন অপরচুনিটি: ইলেকট্রিক ভেহিকলস ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিবেদনটি ভারতের পরিচ্ছন্ন গতিশীলতার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য একটি ব্যাপক কৌশল প্রদান করে। এটি ইভি গ্রহণের বাধাগুলি মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধাগুলি কাজে লাগানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রস্তাব করে।
সব কথার শোনার আশ্বাস দিলেন অভিষেক, ইস্তফার পর বিস্ফোরক কল্যাণ
সরকার, শিল্প এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ইভি খাতে একটি বিশ্বনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, যা দেশের ২০৭০ সালের নেট-জিরো লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।