চাকরির আয়ে জানুন স্মার্ট বাজেট ও সঞ্চয়ের সহজ উপায়

Smart Budgeting Tips: আজকের দ্রুতগামী জীবনে, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা শুধু দরকারি নয়, অনেক সময় জীবন বাঁচানোর মতো জরুরি হয়ে পড়ে। আপনি ব্যবসায়ী হোন, ফ্রিল্যান্সার…

Smart budgeting,salaried professionals

Smart Budgeting Tips: আজকের দ্রুতগামী জীবনে, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা শুধু দরকারি নয়, অনেক সময় জীবন বাঁচানোর মতো জরুরি হয়ে পড়ে। আপনি ব্যবসায়ী হোন, ফ্রিল্যান্সার অথবা কর্পোরেট চাকরিজীবী, বাজেট ও সঞ্চয় ছাড়া আর্থিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা কঠিন। বিশেষ করে যারা নির্দিষ্ট মাসিক আয় (সালারির উপর নির্ভরশীল), তাদের ক্ষেত্রে স্মার্ট বাজেটিং অনিবার্য। মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আসার ফলে অনেক সময় ভুল করে স্থিতিশীলতার ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নেয়। তখন সঞ্চয়ের পরিকল্পনা ‘পরের জন্য’ রেখে দিয়ে চলতে থাকেন, আর তাতেই সমস্যা তৈরি হয়।

ভারতের বিমা প্রবণতা ও কেন এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ
ভারতে বিমা খাতে অনুপ্রবেশ এখনও অনেক কম। FY 2023-25 অনুযায়ী, জিডিপি-র মাত্র ৩.৭ শতাংশ বিমা খাতে, যেখানে জীবন বিমা ২.৮% ও নন-লাইফ বিমা মাত্র ০.৯%। অথচ বিশ্বে এই গড় প্রায় ৭%। এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট, আমাদের দেশে অনেক পেশাজীবী এখনও আর্থিক সুরক্ষা ও পরিকল্পনায় পিছিয়ে।

   

তাহলে স্মার্ট বাজেট তৈরি করবেন কীভাবে?
এখানে কিছু ধাপে ধাপে পরামর্শ দেওয়া হল, যা অনুসরণ করলে আপনি আপনার আয় ও ভবিষ্যতের উপর আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন।

১. আয়-ব্যয়ের হিসাব ও বাজেট তৈরি
স্মার্ট বাজেটিং শুরু হয় আত্মবিশ্লেষণ থেকে। অর্থ কোথা থেকে আসছে, কোথায় যাচ্ছে তা বুঝতে হবে। এর জন্য এক্সেল শিট, বাজেট অ্যাপ অথবা খাতায় কলমেও শুরু করা যায়।

  • প্রথমে মাসিক আয় পেতেই বাড়ি ভাড়া, ইএমআই, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের মতো নির্দিষ্ট খরচ আলাদা করে রাখুন।
  • এরপর অপ্রয়োজনীয় বা ঐচ্ছিক খরচের জন্য (ফুড ডেলিভারি, সাবস্ক্রিপশন, শপিং ইত্যাদি) একটি সীমা নির্ধারণ করুন।
  • তারপর অন্তত ২০% সঞ্চয়ের জন্য রাখুন। যদি না পারেন, ধীরে ধীরে বাড়ান।
Smart Budgeting Tips for Salaried Professionals
Smart Budgeting Tips for Salaried Professionals

২. এমার্জেন্সি ফান্ড ও স্বাস্থ্য বিমা

  • হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা আপনার পুরো সঞ্চয়কে নষ্ট করে দিতে পারে। অনেকে ভাবেন চাকরির সাথে থাকা কোম্পানির
  • স্বাস্থ্যবিমাই যথেষ্ট, কিন্তু অনেক সময় তা নয়।
  • নিজস্ব স্বাস্থ্য বিমা নিন ₹১০–১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে।
  • এবং একটি এমার্জেন্সি ফান্ড গড়ে তুলুন, যাতে অন্তত ৬ মাসের খরচ মেটানো যায়।

৩. শুধু সঞ্চয় নয়—বিনিয়োগ করুন

Advertisements
  • যদি শুধু টাকা জমিয়ে রাখেন, তা হলে মূল্যস্ফীতি (inflation) ধীরে ধীরে আপনার সঞ্চয়ের মান কমিয়ে দেবে। তাই বিনিয়োগ করতে হবে বুদ্ধি করে।
  • দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য (৫ বছরের বেশি): ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন।
  • স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য (১–৩ বছর): ফিক্সড ডিপোজিট বা ডেট ফান্ড বেছে নিন।
  • মনে রাখবেন, আপনি যা বুঝেন না, সেখানে বিনিয়োগ করবেন না।

৪. কর সাশ্রয়ের পরিকল্পনা সময়মতো করুন
অনেকেই বছরের শেষে হঠাৎ করে কর সাশ্রয়ের জন্য এলআইসি বা এলএসএস কিনে ফেলেন। এতে লাভ হয় না। বরং বছরের শুরুতেই সঠিক পরিকল্পনা করে এগোন।

  • ধারা ৮০সি (Section 80C) অনুসারে সাশ্রয়ের সর্বোচ্চ সুযোগ নিন।
  • PPF, EPF ও ELSS-কে যুক্তভাবে বেছে নিন আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী।

৫. অটো ডেবিট সেট করুন
সঞ্চয় ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ইনভেস্টমেন্ট অপরিহার্য। কিন্তু অনেক সময় মানুষ ভুলে যান তারিখ বা বিল জমা দেওয়া। সেই সমস্যা এড়াতে: SIP, বিমার প্রিমিয়াম, এমার্জেন্সি ফান্ড অবদান, ক্রেডিট কার্ড বিল—সব কিছুর জন্য অটো ডেবিট চালু করুন।

৬. প্রতিবছর আপনার আর্থিক পরিকল্পনা পর্যালোচনা করুন

  • সময় ও আয়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার আর্থিক পরিকল্পনাও হালনাগাদ করা উচিত।
  • ইনস্যুরেন্স পলিসি নতুন করে যাচাই করুন।
  • বিনিয়োগের ভারসাম্য (rebalance) তৈরি করুন।
  • বাজেটে সামঞ্জস্য আনুন।

স্মার্ট বাজেটিং মানে কিন্তু কোনোভাবেই আনন্দের জায়গাগুলো কাটছাঁট করা নয়। বরং এটি আপনার উপার্জন, খরচ ও ভবিষ্যতের লক্ষ্যের মাঝে একটি ভারসাম্য রক্ষা করার উপায়। ছোট ছোট অভ্যাস দিয়ে শুরু করুন, প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখুন আর নিজের অর্থের উপর নিয়ন্ত্রণ গড়ে তুলুন। এটাই প্রকৃত অর্থে ‘স্মার্ট’ আর্থিক পরিকল্পনা।