দেশের শেয়ার বাজার বৃহস্পতিবারের লেনদেন শেষ করেছে শক্তিশালী উত্থানের মধ্য দিয়ে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE) সেনসেক্স প্রায় ৪০০ পয়েন্ট বেড়ে ৮২,২০০-এর কাছাকাছি বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) নিফটি ১০০ পয়েন্টের বেশি লাফিয়ে ২৫,১৫০-এর ওপরে গিয়ে দিনের লেনদেন শেষ করেছে।
সকাল থেকেই ধীরে ধীরে চড়াই:
দিনের শুরুতেই দুই সূচকই স্থিতিশীলভাবে লেনদেন শুরু করে। সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে নিফটি ছিল ২৫,০৭৬.৭০-এ, যা আগের দিনের তুলনায় ৩০.৫৫ পয়েন্ট বা ০.১২ শতাংশ বেশি। সেনসেক্সও ১৩.০৭ পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ বেড়ে ৮১,৭৮৬.৭৩-এ লেনদেন করছিল। ধীরে ধীরে সকাল গড়াতেই বাজারে ক্রমবর্ধমান উত্থানের ছবি স্পষ্ট হয়।
বৈশ্বিক ইতিবাচক ইঙ্গিতে মনোবল চাঙ্গা: Sensex Nifty Strong Close
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা কমে আসা এবং বিশ্ববাজার থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়ায় ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের মনোবল চাঙ্গা হয়েছে। মার্কেট বিশেষজ্ঞ অজয় বাগ্গা বলেন, “ইসরায়েল-হামাস শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রিস্ক প্রিমিয়া কমছে। জাপানের বাজারে উচ্ছ্বাস, নিক্কেই আবারও সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে নতুন প্রধানমন্ত্রী ১০ শতাংশ ফ্ল্যাট ইনকাম ট্যাক্সের প্রস্তাব দিয়েছেন।”
এফপিআই বিনিয়োগে ধারাবাহিকতা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রুপিতে হস্তক্ষেপ:
ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টর (FPI) বা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো নেট ক্রেতা হিসেবে বাজারে সক্রিয় ছিলেন। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) অফশোর নন-ডেলিভারেবল ফরওয়ার্ড (NDF) মার্কেটে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের অবস্থান তৈরি করেছে, যাতে রুপির মানকে সহায়তা করা যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদে মূলধন প্রবাহ বাজারকে ভরসা দিচ্ছে, তবে মধ্যপ্রাচ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিই বাজারের দিক নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা নেবে।
আইপিও বাজারেও বিনিয়োগকারীদের উচ্ছ্বাস:
প্রাথমিক বাজার বা আইপিও (IPO) ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে। টাটা ক্যাপিটালের পাবলিক ইস্যু তৃতীয় দিনের শেষে ১.৯৫ গুণ সাবস্ক্রাইব হয়েছে। কোয়ালিফাইড ইনস্টিটিউশনাল বায়ার (QIB) ক্যাটেগরিতে সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ৩.৪২ গুণ, নন-ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের ক্ষেত্রে ১.৯৮ গুণ এবং খুচরো বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ১.১ গুণে পৌঁছেছে।
বৈশ্বিক ঘটনা বাজারের মেজাজ নির্ধারণ করবে:
বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির অগ্রগতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কার্যক্রম স্থগিত থাকার (শাটডাউন) নবম দিন নিয়ে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে, সেটাই আগামী দিনে বাজারের দিক নির্দেশ করবে। যদিও ওয়াল স্ট্রিটে আগের রাতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে, তবু বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপ্রবণ মানসিকতায় প্রভাব ফেলছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশীয় মূলধনের স্থিতিশীল ধারা, ভূ-রাজনৈতিক চাপ হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক বাজারের ইতিবাচক সংকেত মিলিয়ে ভারতীয় ইকুইটি বাজারের গতি আপাতত শক্তিশালী থাকবে। তবে স্বল্পমেয়াদে অস্থিরতা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের তাই সতর্ক দৃষ্টিতে বাজার পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।