সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির জন্য ডিলিস্টিংয়ে নতুন বিধান ঘোষণা করল সেবি

SEBI delisting rules ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) সম্প্রতি সরকারি মালিকানাধীন পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (PSUs)-এর স্বেচ্ছায় শেয়ারবাজার থেকে তালিকা…

SEBI delisting rules

SEBI delisting rules

ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) সম্প্রতি সরকারি মালিকানাধীন পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (PSUs)-এর স্বেচ্ছায় শেয়ারবাজার থেকে তালিকা প্রত্যাহারের (Voluntary Delisting) ক্ষেত্রে একগুচ্ছ বিশেষ ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপ মূলত সেইসব সরকারি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য, যেখানে সরকারের মালিকানা ইতিমধ্যেই ৯০ শতাংশ বা তার বেশি।

সেবির মতে, এই নতুন নিয়ম প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, সহজ এবং সময়োপযোগী করবে। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

   

ডিলিস্টিংয়ের ফ্লোর প্রাইস নির্ঘারণ

বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির তালিকা প্রত্যাহার তখনই সফল ধরা হয় যদি প্রোমোটার বা মালিকপক্ষের শেয়ারহোল্ডিং ৯০ শতাংশে পৌঁছয়। এছাড়া, ডিলিস্টিংয়ের ফ্লোর প্রাইস (ন্যূনতম মূল্য) নির্ধারণ করা হয় কয়েকটি জটিল সূত্র ধরে— যেমন গত ৬০ দিনের গড় শেয়ারমূল্য, অথবা গত ২৬ সপ্তাহে সর্বোচ্চ দর ইত্যাদি।

কিন্তু সেবির নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সরকারি মালিকানাধীন পিএসইউ-র ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ জনশেয়ারহোল্ডারের অনুমোদনের শর্ত থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরকার চাইলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে দ্রুত ডিলিস্টিং করতে পারবে।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে মূল্য নির্ধারণে। এখন থেকে এমন পিএসইউ-র ডিলিস্টিং একটি নির্দিষ্ট মূল্যে (Fixed Price) হতে পারবে, যা ফ্লোর প্রাইসের উপর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ প্রিমিয়াম। অর্থাৎ, শেয়ার বাজারে লেনদেনের ঘনত্ব বা ফ্রিকোয়েন্সি এখানে বিশেষ গুরুত্ব পাবে না।

সেবি জানিয়েছে, ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হবে তিনটি মানদণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চটি বেছে নিয়ে—
1. ডিলিস্টিংয়ের রেফারেন্স ডেটের আগে ৫২ সপ্তাহে ভলিউম ওয়েটেড গড় মূল্য (VWAP),
2. ওই একই সময়ে ২৬ সপ্তাহে সর্বোচ্চ শেয়ারমূল্য,
3. দুইজন স্বাধীন মূল্যায়নকারী (Valuers)-এর যৌথ রিপোর্টে নির্ধারিত দাম।
এভাবে সরকার ও বিনিয়োগকারীর মধ্যে স্বচ্ছ ও ন্যায্য একটি কাঠামো তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সেবির বিশেষ নিয়ম সকলের জন্য নয় SEBI delisting rules

তবে সেবির এই বিশেষ নিয়ম সব ধরনের সরকারি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য নয়। ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানি (NBFCs) এবং বিমা সংস্থাগুলিকে এই বিধান থেকে বাদ রাখা হয়েছে। মূলত শিল্প, বিদ্যুৎ, খনিজ, তেল ও অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলিই এর আওতায় আসবে।

অনেক সময় দেখা যায়, ডিলিস্টিংয়ের সময় সব সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডার তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না বা ইচ্ছাকৃতভাবে ধরে রাখেন। সেবির নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো সংস্থা ডিলিস্টিংয়ের এক বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় ব্যবসা বন্ধ করে দেয় বা স্ট্রাইক-অফ করে, তবে যারা শেয়ার বিক্রি করেননি তাদের প্রাপ্য অর্থ ডিজাইনেটেড স্টক এক্সচেঞ্জের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হবে।

এই অর্থ ৭ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। ওই সময়সীমার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা সহজেই দাবি জানিয়ে টাকা ফেরত পেতে পারবেন। এর ফলে ছোট বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য হলো— যে সমস্ত পিএসইউ-তে সরকারের অংশীদারি ইতিমধ্যেই অত্যন্ত বেশি (৯০ শতাংশ বা তার বেশি), সেগুলিকে দ্রুত বাজার থেকে ডিলিস্ট করা। এর ফলে সরকারের ডিসইনভেস্টমেন্ট নীতি আরও কার্যকর হবে এবং কাঠামোগত সংস্কার প্রক্রিয়া গতিশীল হবে।

Advertisements

সরকারি মালিকানাধীন বহু সংস্থা বর্তমানে শেয়ারবাজারে কার্যত অচলাবস্থায় রয়েছে, কারণ জনসাধারণের হাতে খুব অল্প শেয়ারই লেনদেন হয়। এতে বাজারে লিকুইডিটি (Liquidity) কমে যাচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত থাকার সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এই বিশেষ বিধান কার্যকর হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সরকার— উভয়ের জন্যই প্রক্রিয়া সহজ হবে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নিয়মে সরকারের হাত কিছুটা খোলা হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ফ্লোর প্রাইসের উপর ১৫ শতাংশ প্রিমিয়াম নির্ধারণ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কারণ এতে ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।

তবে অনেকেই সতর্ক করেছেন যে, ডিলিস্টিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হলে ছোট বিনিয়োগকারীদের সামনে বিকল্প খুব সীমিত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় স্টক এক্সচেঞ্জে সাত বছরের জন্য অর্থ সংরক্ষণ রাখার নিয়মটি যথেষ্ট স্বস্তি দেবে।

সেবির এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে আগামী দিনে কয়েকটি বড় সরকারি সংস্থা ডিলিস্ট হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব খাতে সরকার তার অংশীদারি ধীরে ধীরে হ্রাস করতে চাইছে, যেমন খনিজ, বিদ্যুৎ বা তেল পরিশোধন শিল্প— সেখানে প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে যাবে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ধরনের ডিলিস্টিং শেয়ারবাজারে সরকারি সংস্থার উপস্থিতি হ্রাস করতে পারে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য বিনিয়োগের সুযোগ কমিয়ে দেবে।

সেবির এই নতুন নিয়ম কার্যত একটি ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টা— একদিকে সরকারের ডিসইনভেস্টমেন্ট লক্ষ্যে সুবিধা দেওয়া, অন্যদিকে ছোট বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম সুরক্ষা বজায় রাখা। আসন্ন মাসগুলোতে দেখা যাবে, এই প্রক্রিয়া বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এবং কোন কোন সরকারি সংস্থা প্রথমে এই বিশেষ বিধানের আওতায় আসে।

Business: SEBI has introduced new rules for the voluntary delisting of government-owned PSUs with over 90% ownership. The updated framework allows for a fixed-price delisting with a minimum 15% premium, aiming for a faster and fairer process.