২০২৩-২৪ অর্থবছরে (FY24) ভারতের সরকারি ব্যাঙ্কগুলি (পিএসবি) তাদের আর্থিক কর্মক্ষমতার উন্নতির প্রতিফলন হিসেবে লভ্যাংশ প্রদানে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখিয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই বছরে পিএসবি-গুলি মোট ২৭,৮৩০ কোটি টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা আগের অর্থবছরে প্রদত্ত ২০,৯৬৪ কোটি টাকার তুলনায় ৩২.৭ শতাংশ বেশি।
এই মোট লভ্যাংশের মধ্যে সরকার, তার শেয়ারহোল্ডিংয়ের কারণে, ১৮,০১৩ কোটি টাকা পেয়েছে, যা মোট লভ্যাংশের প্রায় ৬৫ শতাংশ। আগের বছর (FY23) সরকারকে দেওয়া লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ১৩,৮০৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) অংশও অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে পিটিআই-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২টি সরকারি ব্যাঙ্ক মিলে তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যার পরিমাণ ১.৪১ লক্ষ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের (FY23) Rs ১.০৫ লক্ষ কোটির তুলনায় যথেষ্ট বৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এই ব্যাঙ্কগুলি ১.২৯ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে, যা তাদের শক্তিশালী আর্থিক গতিবেগের ইঙ্গিত দেয়।
এই মুনাফার সিংহভাগ এসেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) থেকে, যা FY24-এ মোট মুনাফার ৪০ শতাংশের বেশি অবদান রেখেছে। এসবিআই-এর নিট মুনাফা এই বছরে ২২ শতাংশ বেড়ে ৬১,০৭৭ কোটি টাকাতে পৌঁছেছে, যা আগের বছর ছিল ৫০,২৩২ কোটি টাকা।
অন্যান্য সরকারি ব্যাঙ্কগুলিও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) সবচেয়ে বেশি শতাংশ বৃদ্ধি অর্জন করেছে, তাদের নিট মুনাফা ২২৮ শতাংশ বেড়ে ৮,২৪৫ কোটি টাকাতে পৌঁছেছে। ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মুনাফা ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩,৬৪৯ কোটি টাকা হয়েছে, এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৬১ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে ২,৫৪৯ কোটি টাকা আয় করেছে।
এছাড়া, ৫০ শতাংশের বেশি মুনাফা বৃদ্ধি দেখিয়েছে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (৫৭ শতাংশ বেড়ে ৬,৩১৮ কোটি টাকা), ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র (৫৬ শতাংশ বেড়ে ৪,০৫৫ কোটি টাকা) এবং ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক (৫৩ শতাংশ বেড়ে ৮,০৬৩ কোটি টাকা)। এই ফলাফল পিএসবি-দের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কার্যকারিতার উন্নতির প্রমাণ।
সরকারি ব্যাঙ্কগুলির এই শক্তিশালী পারফরম্যান্স পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় একটি বড় পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (FY18) এই ব্যাঙ্কগুলি মোট ৮৫,৩৯০ কোটি টাকার লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল। লোকসান থেকে রেকর্ড মুনাফায় এই রূপান্তর সরকারি ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য এবং পরিচালন দক্ষতার উন্নতির স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই উন্নতির পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির অবলিখিত ঋণ (এনপিএ) কমানো, সরকারের পুনর্মূলধনীকরণ প্রকল্প এবং ব্যবসায়িক কৌশলের উন্নতি এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং ঋণের চাহিদা বৃদ্ধিও এই ব্যাঙ্কগুলির আয় বাড়াতে সাহায্য করেছে।
সরকারি ব্যাঙ্কগুলির এই লভ্যাংশ বৃদ্ধি সরকারের জন্যও সুখবর। ১৮,০১৩ কোটি টাকা লভ্যাংশ সরকারের কোষাগারে যোগ হওয়ায় এটি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যাবে। এই অর্থ সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। এসবিআই-এর মতো বড় ব্যাঙ্কগুলির অবদান এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ১.২৯ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়ে পিএসবি-গুলি তাদের শক্তিশালী অবস্থান বজায় রেখেছে। তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সুদের হারের পরিবর্তন এই ব্যাঙ্কগুলির ভবিষ্যৎ পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাও তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।
সাধারণ মানুষের জন্য এই খবর ইতিবাচক। সরকারি ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতি তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষমতা বাড়াবে, যা অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, ব্যাঙ্কগুলির এই সাফল্য দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে পারে কিনা, তা নির্ভর করবে তাদের কৌশল এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপর।
পিএসবি-দের এই রেকর্ড-ব্রেকিং পারফরম্যান্স ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক সংকেত। আগামী দিনে এই গতি বজায় থাকলে, এটি দেশের আর্থিক খাতের জন্য আরও শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে।