অবসর জীবনে নিরুদ্বেগ থাকতে এড়িয়ে চলুন এই 9 ভুল

অবসর জীবনের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত (Retirement Planning) করা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পদক্ষেপ। অথচ অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনায় এমন সব ভুল করেন, যা বছরের পর…

Which Pension Plan Offers Better Returns and Tax Benefits for Retirement

অবসর জীবনের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত (Retirement Planning) করা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পদক্ষেপ। অথচ অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনায় এমন সব ভুল করেন, যা বছরের পর বছর পরিশ্রমে সঞ্চিত অর্থকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো সচেতনতা এবং কিছু মৌলিক নিয়ম মেনে চললেই অবসর জীবনের সোনালি সময়টা হতে পারে নিশ্চিন্ত ও নিরুদ্বেগ।
নিচে বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন অবসর পরিকল্পনার সময় মানুষের করা ৯টি সাধারণ ভুল এবং তার সমাধান—

১. দেরিতে শুরু করা
সবচেয়ে বড় ভুল হলো অবসর পরিকল্পনা দেরিতে শুরু করা। অনেক তরুণ মনে করেন, এখনই পরিকল্পনার দরকার নেই, পরবর্তীতে করা যাবে। কিন্তু অর্থের আসল শক্তি হলো সময়ের সঙ্গে তার বৃদ্ধি, অর্থাৎ কম্পাউন্ডিং-এর জাদু। যদি কেউ ২০ বছর বয়সে প্রতি মাসে অল্প কিছু অর্থও নিয়মিত বিনিয়োগ করেন, তবে অবসরের সময় একটি বিশাল তহবিল গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু ৪০ বছর বয়সে শুরু করলে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়।

   

২. মাসিক সঞ্চয়ে শৃঙ্খলার অভাব
অবসরের সম্পদ একদিনে তৈরি হয় না, বরং অভ্যাস ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। অনেকেই নিয়মিত মাসিক সঞ্চয় এড়িয়ে যান এবং মাঝেমধ্যে কিছু অর্থ বিনিয়োগ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য হলেও মাসে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্ক বিনিয়োগ করা দীর্ঘমেয়াদে বিপুল অর্থে রূপান্তরিত হতে পারে।

৩. প্রয়োজনের হিসাব কম ধরা
অনেকে আন্দাজের ভিত্তিতে অবসরের প্রয়োজনীয় অর্থের হিসাব করেন। বাস্তবে খরচ বাড়ে মুদ্রাস্ফীতির কারণে। আজ যদি মাসিক খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা, তবে ২০ বছর পরে তা সহজেই ৬০ হাজার বা তার বেশি হতে পারে। সঠিক হিসাব ছাড়া অবসরকালে সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

৪. চিকিৎসা খরচ উপেক্ষা করা
বয়স বাড়লে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসক দেখানো, ওষুধপত্র, কিংবা হঠাৎ হাসপাতালের বিল—এসব খরচ অনেকের পরিকল্পনায় ধরা থাকে না। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, স্বাস্থ্যবীমা এবং আলাদা একটি জরুরি চিকিৎসা তহবিল রাখা উচিত।

৫. বিনিয়োগে বৈচিত্র্যের অভাব
অনেকে সমস্ত সঞ্চয় একটি মাত্র খাতে বিনিয়োগ করেন, যেমন শুধু শেয়ারবাজার বা শুধু জমি। এর ফলে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। একদিকে মন্দা এলেই বহু বছরের সঞ্চয় নষ্ট হতে পারে। তাই শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ফিক্সড ডিপোজিট, সরকারি স্কিম ইত্যাদি নানা খাতে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।

Advertisements

৬. তোলার কোনো কৌশল না থাকা
শুধু সঞ্চয় করলেই হবে না, অবসরের পর সেই অর্থ কীভাবে ব্যবহার করবেন, তার পরিকল্পনা থাকতে হবে। অনেকেই শুরুতে বেশি খরচ করে ফেলেন, পরে অর্থাভাব দেখা দেয়। তাই একটি সুনির্দিষ্ট উইথড্রয়াল স্ট্র্যাটেজি রাখা প্রয়োজন, যাতে দীর্ঘসময় ধরে অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়।

৭. ঋণ নিয়ে অবসর গ্রহণ
অবসরের পর নিয়মিত আয় বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু যদি তখনও ঋণের বোঝা থেকে যায়, তবে তা মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়। মাসিক কিস্তি দিতে গিয়ে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে যায়। তাই অবসরের আগেই সব ঋণ শোধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

৮. কর পরিকল্পনা উপেক্ষা করা
অবসরকালেও কিছু আয়কর প্রযোজ্য থাকে, যেমন নির্দিষ্ট বিনিয়োগ বা সুদের ওপর কর। যদি আগে থেকে কর পরিকল্পনা না করা হয়, তবে প্রকৃত সঞ্চিত অর্থ কমে যেতে পারে। তাই পিপিএফ বা ইএলএসএস-এর মতো কর সাশ্রয়ী বিনিয়োগের দিকে নজর দেওয়া দরকার।

৯. পরিবারের প্রয়োজন ভুলে যাওয়া
অনেকে অবসর পরিকল্পনায় কেবল নিজের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেন। কিন্তু বাস্তবে জীবনসঙ্গী বা নির্ভরশীল সন্তানের প্রয়োজনীয়তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এসব উপেক্ষা করলে পরবর্তীতে আর্থিক টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে।

অবসর পরিকল্পনা একবারের কাজ নয়; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বদলায়। তাই নিয়মিত পর্যালোচনা ও সংশোধন জরুরি। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নয়টি ভুল এড়িয়ে চললে অবসর জীবনের সোনালি সময় সত্যিই হতে পারে নিশ্চিন্ত, শান্তিপূর্ণ ও সুরক্ষিত।