৮ম বেতন কমিশনে রিটায়ারমেন্ট গ্র্যাচুইটি সংশোধন – কী আশা করা যায়?

8th Pay Commission: Boost Your Retirement Savings with Higher Salaries

ভারতের লক্ষাধিক সরকারি কর্মচারীর কাছে অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি (Retirement Gratuity) এক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ভরসা। চাকরিজীবনের বহু বছরের পরিশ্রমের পর এই অর্থ অবসর-পরবর্তী জীবনে একটি বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আগামী ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission – CPC) কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই জানতে চাইছেন—২০২৫ সালে রিটায়ারমেন্ট গ্র্যাচুইটিতে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে?

Advertisements

বর্তমান নিয়মে গ্র্যাচুইটি

বর্তমানে ৭ম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি নির্ধারিত হয়।

   
  • সর্বাধিক গ্র্যাচুইটি সীমা ২০ লক্ষ টাকা

  • চাকরির মেয়াদ এবং সর্বশেষ বেতনের ভিত্তিতে এই পরিমাণ নির্ধারণ হয়।

  • প্রতি ৬ মাসের চাকরির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ যোগ হয় গ্র্যাচুইটির হিসাবে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারী সংগঠনগুলি দাবি জানিয়ে আসছে যে, বর্তমান সীমা মুদ্রাস্ফীতি ও ব্যয়বৃদ্ধির কারণে যথেষ্ট নয়।

৮ম বেতন কমিশনে কী কী পরিবর্তনের সম্ভাবনা?

২০২৫ সালে ৮ম পে কমিশন চালু হলে অবসরকালীন সুবিধাগুলিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

Advertisements
  1. গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ সীমা বৃদ্ধি

    • ২০ লক্ষ টাকার সীমা বাড়িয়ে ২৫–৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে।

    • এতে উচ্চ বেতনপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও বেশি সুবিধা পাবেন।

  2. ডিএ (Dearness Allowance) এর সঙ্গে সংযুক্তি

    • গ্র্যাচুইটি হিসাব করার সময় শুধু বেসিক পে নয়, বরং ডিএ-কে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জোরালো হয়েছে।

    • এতে কর্মচারীদের প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি আরও বাড়বে।

  3. ট্যাক্স ছাড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি

    • বর্তমানে আয়কর আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স ফ্রি

    • নতুন কমিশনে এই সীমা ২৫ বা ৩০ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হতে পারে।

  4. কন্ট্রাকচুয়াল ও অস্থায়ী কর্মীদের জন্য সুবিধা

    • শুধু স্থায়ী কর্মচারী নয়, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও কিছু পরিমাণ গ্র্যাচুইটির আওতায় আসতে পারেন।

  5. তহবিল ভিত্তিক মডেল চালু হওয়ার সম্ভাবনা

    • কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, গ্র্যাচুইটির জন্য আলাদা কর্মচারী কল্যাণ তহবিল তৈরি হতে পারে।

    • এতে সরকারের উপর চাপ কিছুটা কমবে, আবার কর্মচারীরাও সুরক্ষিত থাকবেন।

কেন এই পরিবর্তন জরুরি?

  • মুদ্রাস্ফীতি: ২০১৬ সালে ৭ম বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার পর থেকে জীবনযাত্রার খরচ অন্তত ৩০–৪০% বেড়েছে।

  • স্বাস্থ্য খরচ: অবসর-পরবর্তী জীবনে চিকিৎসার খরচ বহুগুণ বাড়ছে। তাই গ্র্যাচুইটির সীমা বাড়ানো দরকার।

  • বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা: অনেক বেসরকারি সংস্থা অবসরে বড় অঙ্কের সেভারেন্স প্যাকেজ দেয়। সরকারি খাত পিছিয়ে থাকলে প্রতিভা ধরে রাখা কঠিন হবে।

কর্মচারী সংগঠনগুলির দাবি

অল ইন্ডিয়া এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন পেনশনভোগী সংগঠন ২০২৫ সালের জন্য একাধিক দাবি তুলেছে—

  • গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ সীমা কমপক্ষে ৩০ লক্ষ টাকা করতে হবে।

  • ডিএ-সহ গ্র্যাচুইটির হিসাব করতে হবে।

  • আয়করে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়া উচিত।

৮ম বেতন কমিশনে রিটায়ারমেন্ট গ্র্যাচুইটি সংশোধন ভারতের সরকারি কর্মচারীদের জন্য এক বড় আশার আলো হতে চলেছে। সীমা বাড়ানো হলে এবং ডিএ যুক্ত হলে অবসর-পরবর্তী জীবনে কর্মচারীরা আর্থিকভাবে অনেকটা নিরাপদ হবেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বাজেট ঘোষণার উপর নির্ভর করবে। তবু একটা বিষয় পরিষ্কার—২০২৫ সালে রিটায়ারমেন্ট গ্র্যাচুইটির নিয়মে বড় পরিবর্তন আসছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।